১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


স্মার্টকার্ডে অনিয়মের কারণেই দেশে ফেরত এসেছে ৬৩ কর্মী

-

তিনটি রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধি এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার কারণেই মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পরও নিয়োগকারী কোম্পানি তাদের গ্রহণ করতে কাউকে কাউকে পাঠায়নি।
দুই দিন অর্ধহারে-অনাহারে রাত কাটানোর পর ইমিগ্রেশন পুলিশ হতভাগ্য ৬৩ কর্মীকে ফিরতি ফ্লাইটে দেশে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়। যদিও ১৪ অক্টোবর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফেরত আসা কর্মীদের রিক্রুটিং এজেন্সির পক্ষ থেকে আবারো পাঠানো হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এ ঘটনার দুই সপ্তাহের বেশি অতিবাহিত হওয়ার পরও তাদের কাউকে পাঠানো হয়নি বলে ভুক্তভোগী কর্মী ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ দিকে হাইকমিশনের সত্যায়ন জটিলতা এবং নিয়োগকারী কোম্পানি ‘সুপারম্যাক্স গ্লোব’-এর সাথে লেনদেনের জের ধরে ৬৩ শ্রমিককে ফেরত পাঠানোর ঘটনাটি ঘটেছে বলে দুই দেশে থাকা জনশক্তি ব্যবসায় জড়িতরা মনে করছেন। তারপরও হাইকমিশনের সত্যায়ন ছাড়া জনশক্তি ব্যুরোর কিছু কর্মকর্তার ইন্ধনে অন্য রিক্রুটিং এজেন্সির নামে বহির্গমন ছাড়পত্র দিয়ে ‘পিউব্লিওবি এসডিএন বিএইচডি বারহাদ’ নামে অপর একটি কোম্পানিতে ২০০ কর্মীকে পাঠানোর পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবশ্য ওই কোম্পানির ৪০০ চাহিদাপত্রের মধ্যে ২০০ কর্মী নিয়ম মেনে গেলেও বাকি ২০০ কর্মীর নামে হাইকমিশন থেকে এখনো সত্যায়ন দেয়া হয়নি। তবে কর্মী প্রেরণকারী ঢাকার ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে একটি এজেন্সি যদি হাইকমিশনের সত্যায়ন ছাড়াই এসব কর্মীকে পাঠানোর চেষ্টা করেন, তাহলে ৬৩ কর্মীর মতো তাদেরও বিমানবন্দর থেকে ফেরত আসার আশঙ্কা রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষ্যণ ব্যুরোর পরিচালকের (বহির্গমন) সাথে ‘স্মার্টকার্ডে’ অনিয়মের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণে অনিয়মের প্রসঙ্গে বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি টেলিফোন ধরেননি।
অভিযোগ রয়েছে, পরিচালকের (বহির্গমন) দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১৪ অক্টোবর ঢাকার পল্টনের একটি রিক্রুটিং এজেন্সির (মামলা আছে) নামে হাইকমিশনের সত্যায়ন ছাড়াই মালয়েশিয়ার ‘পিপি টেকনোলজি এসডিএন বিএসডি নামক কোম্পানিতে দুই ধাপে ২৭ জন কর্মী স্মার্টকার্ড নিয়ে মালয়েশিয়ায় চলে গেছেন। এই গ্রুপে আরো অপেক্ষমাণ ৩০-৩৫ জনকে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক পাঠানোর চেষ্টা করছে বলে এ ঘটনার সাথে জড়িত একজন নয়া দিগন্তের কাছে অভিযোগ করেছেন। তার দাবি, তিনি বৈধভাবে কর্মী পাঠাতে রিক্রুটিং এজেন্সিকে টাকা দিয়েছিলেন। এখন বলছেন হাইকমিশন থেকে সত্যায়ন করানো যাচ্ছে না।
গতকাল বিকেলে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনার মুহ: শহীদুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, এ বিষয়টি আমার কাউন্সিলর (শ্রম) ভালো বলতে পারবেন। তবে এসব বিষয়টি নিয়ে কাউন্সেলর দ্রুত তার কাছে একটি রিপোর্ট দেবেন বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, সুপারম্যাক্স গ্লোব কোম্পানিতে কাজের উদ্দেশ্যে গত ১১ অক্টোবর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ৬৩ কর্মী মালয়েশিয়ার কেএলআই বিমানবন্দরে যান। এসব কর্মীর গেঞ্জি ও মাথায় থাকা টুপিতে ক্যাথারসিস ওভারসিস নামক একটি এজেন্সির নাম লেখা ছিল। মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে নামার পর সুপারম্যাক্স গ্লোব কোম্পানির কোনো প্রতিনিধি না আসায় এসব কর্মীকে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ক্যাম্পের ছোট একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। পরে তাদের সাথে থাকা রিংগিটগুলো পুলিশ কেড়ে নেয় এবং মারধরও করে বলে ফিরে আসা কর্মীদের কেউ কেউ এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন।
এ প্রসঙ্গে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক তানভীর হোসেন ওই দিন নয়া দিগন্তকে ফেরত আসা ৬৩ শ্রমিকের প্রত্যেকের নামে ব্যুরো থেকে ইস্যু হওয়া ‘স্মার্টকার্ডে’ তিনটি রিক্রুটিং এজেন্সির নাম রয়েছে বলে জানান। যদিও সিন্ডিকেটভুক্ত ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির বাইরে অন্য কোনো এজেন্সির মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ নেই। তাহলে কিভাবে স্মার্টকার্ডে অন্য তিনটি এজেন্সির নামে ব্যুরো থেকে ছাড়পত্র ইস্যু হলো? কারা এসব অনিয়মের সাথে জড়িত? অবশ্য এ প্রসঙ্গে তিনটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের একজন তার প্রতিষ্ঠানের নাম দেখে মালয়েশিয়া থেকে টেলিফোনে এ প্রতিবেদকের কাছে আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে মালয়েশিয়ায় একটি লোকও কখনো পাঠানো হয়নি। তাহলে কিভাবে স্মার্টকার্ডে আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম এলো?
গতকাল অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ড. শংকর চন্দ্র পোদ্দার মালয়েশিয়া থেকে নয়া দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়ার ব্যবসায় করছেন ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি। তাহলে জনশক্তি ব্যুরো থেকে দেয়া স্মার্টকার্ডে অন্য রিক্রুটিং এজেন্সির নাম যদি থেকে থাকে তাহলে এ তথ্যটি আমার মতে ভয়াবহ জালিয়াতি। তিনি বলেন, এ ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাকুক তাদের শনাক্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। অবশ্য মালয়েশিয়া থেকে একজন দাতো পদবি পাওয়া তরুণ ব্যবসায়ী গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, আসলে কর্মীদের অ্যাপ্রুভালসহ অন্যান্য সব কিছুই ঠিক আছে। এখানে নিয়োগকারী কোম্পানির লোকজনের সাথে রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে ইন্টারনাল কোনো সমস্যা থাকতে পারে। যদি তারা নিজেরা বসে ঠিক করে ফেলেন, তাহলে শ্রমিকেরা আবারো চলে আসতে পারবে বলে তিনি মনে করেন। সে ক্ষেত্রে জনশক্তি ব্যুরো অফিস থেকে অন্য রিক্রুটিং এজেন্সির নামে কর্মীদের স্মার্টকার্ড নেয়ার আর প্রয়োজন পড়ত না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
রাণীনগরে সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ গ্রেফতার ৪ যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে চট্টগ্রামে জরুরি অবতরণ, প্রাণে বাঁচলেন ৭ ক্রুসহ ১৯১ যাত্রী ভূরুঙ্গামারীতে ভটভটিতে উঠতে গিয়ে শিশু নিহত প্রতিটি মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল করতে সরকার কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী দুমকীতে হত্যা মামলার আসামি বাবা-ছেলে গ্রেফতার ১২ সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি : যেখানে আপত্তি ইসরাইলের পথশিশুদের জন্য ছায়াতলের স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত মিরসরাইয়ে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের আরোহী নিহত মালয়েশিয়ায় বিএমইটি কার্ডের নামে ফাঁদ! সতর্ক করল দূতাবাস ভোলায় বার্জের সাথে মাছ ধরার ট্রলারের ধাক্কা, জেলে নিহত সিদ্ধিরগঞ্জে অবৈধ গ্যাস সংযোগে দালাল চক্র, ৪৮টি বাড়ির সংযোগ বিচ্ছিন্ন

সকল