০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টির কারণ

-

ইসলাম শান্তি, নিরাপত্তা ও মানবতার কল্যাণকর ধর্ম এবং সর্বোত্তম জীবন ব্যবস্থা। যা সর্বকালে, সর্বযুগে সব ক্ষেত্রে সব মানুষের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। যেখানে রয়েছে মানবজীবনের সব দিকনির্দেশনা এবং সমস্যার প্রতিকারের পথ। আর কুরআন হচ্ছে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার সংবিধান। এই সংবিধান থেকে সমাজের মানুষ দূরে চলে যাওয়ায় সমাজে আজ বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে।
ইসলামের আভিধানিক অর্থ শান্তি, যা প্রকৃত অর্থে শান্তির পথ নির্মাণ করে থাকে। তবে আমরা যারা মানুষ, তারাই এই শান্তির ধর্মকে অশান্তিতে পরিণত করে চলেছি এবং সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সর্বোত্তম জাতি। তবে আল্লাহ ও রাসূল সা: নির্দেশিত পথে না চলার কারণে আজ পৃথিবীর চারদিকে ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন ইসলামী গবেষকরা। অনুশীলনমূলক ইসলামের নীতিমালা সমাজে প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সমাজ থেকে বিপর্যয় রোধ করা অসম্ভব।
বর্তমান সমাজে যেসব কারণে বিপর্যয় সৃষ্টি হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হেতু হলোÑ আল্লাহর আদেশ ও নির্দেশকে অমান্য করা। নবী করিম সা:কে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ না করা। কুরআনে এসেছে, ‘যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করল, তিনি তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার নিচ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত’ (সূরা নিসা-১৩)।
এ ছাড়া রয়েছে ঘুষ, সুদ, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, ব্যভিচার, পরচর্চাসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। নবী করিম সা: বলেছেন, ‘ঘুষদাতা-গ্রহীতা এবং ঘুষদানে সাহায্যকারীর প্রতি আল্লাহ লানত করেছেন’ (তারগিব)। তিনি আরো বলেন, ‘ঘুষ প্রদানকারী ও ঘুষ গ্রহণকারী দু’জনই জাহান্নামী’ (ইবনে হিববান)। কুরআনে এসেছে, ‘তারা মিথ্যা শ্রবণে অত্যন্ত আগ্রহশীল এবং অবৈধ (ঘুষ) ভক্ষণে অত্যন্ত আসক্ত’ (কুরআন-৫:৪২)।
একইভাবে দুর্নীতি নিয়ে নবী করিম সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি জালিয়াতি বা সঠিক তথ্য গোপন করল, সে আমাদের সমাজভুক্ত নয়’ (বুখারি)। জঙ্গিবাদ বা ভীতিপ্রদর্শন করা ইসলামে কখনো সমর্থনযোগ্য নয়। মুসলিম নাম দিয়ে যারা এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে থাকে, তাদের সাথে ইসলামের কোনো যোগসূত্র নেই। কুরআনে এসেছে, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো প্রাণীকে হত্যা করল, সে যেন সমগ্র বিশ্ববাসীকে হত্যা করল’ (সূরা মায়েদা-৩২)। হাদিসে এসেছে, ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার হাত ও জবান থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। অর্থাৎ সে কাউকে কটুবাক্য বা অশ্লীল কথা বলে কষ্ট দেয় না বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে না। হাত দ্বারা তার অনিষ্ট সাধন করে না বা লাঠিসোটা উত্তোলন করে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে না।
অন্য দিকে, নারীদের উত্ত্যক্ত করা এই সমাজের জঘন্যতম ব্যাধি। যা এখন সমাজ পেরিয়ে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছেছে। নবী করিম সা: ইরশাদ করেন, ‘চোখের দৃষ্টি ইবলিশের বিষাক্ত তীরগুলোর মধ্য থেকে একটি তীর’ (মুজাম তিবরানী)। আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই অশ্লীল কথা ও কাজ এবং অশ্লীলতার অভিনয় ইসলামে এর স্থান নেই’ (মুসনাদে আহমদ)।
কাজেই এসব ব্যাধিকে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হলে শুধু নামে নয়, প্রকৃত ইসলামকে মনে-প্রাণে ধারণ করতে হবে এবং বাস্তব জীবনে ইসলামের নীতিমালাকে চর্চা করার মধ্য দিয়ে সফলতা অর্জন করতে হবে।
আল্লামা ইকবাল বলেছেন, ‘অসনে-বসনে খ্রিষ্ট তোমরা; হিন্দু তোমরা সভ্যতায়,/তুমি মুসলিম? যাহারে দেখিয়া ইহুদিও লাজে মরিয়া যায়।/সৈয়দ কেহ মীর্জা কেহবা আফগান কেহ তোমরা হও,/সবকিছু তুমি, বল তো এখন, মুসলিম তুমি হও কি নও?Ñ (ইকবাল সংসদ পত্রিকা : ১৯৯৬-১৯৯৭)। প্রকৃত অর্থে সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টি অন্যতম আরেকটি কারণ হলো দুনিয়াপ্রীতি। এই বিপর্যয় থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হলে আল্লাহর ভয় ও পরকালের চিন্তাকে অন্তরে লালন করতে হবে। অন্য দিকে, দুনিয়াপ্রীতি ঈমানকে দুর্বল করে দেয় আর ঈমান দুর্বল হয়ে গেলে মানুষ খারাপ কাজে এগিয়ে যায়। কুরআনে এসেছে, ‘নারী যৌন আকর্ষণ, সন্তানাদি, রাশিকৃত স্বর্ণ, রৌপ্য, আর অশ্বরাজি, গবাদিপশু এবং ক্ষেতখামারের প্রতি আসক্তি মানুষের কাছে সুশোভিত করা হয়েছে। এই সব দুনিয়ার ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহ, তাঁরই কাছে রয়েছে উত্তম আশ্রয়’ (সূরা আল ইমরান-১৪)। নবী করিম সা: বলেন, ‘তুমি যখন মানুষের দোষ খুঁজবে তখন তারা তোমাদের দোষ খুঁজবে’ (মুয়াত্ত, হাদিস-৭৮৯)।
ধর্মকে মানুষ পরিপূর্ণভাবে পালন না করার কারণে সমাজে ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয় থাকে। যার সাথে জড়িয়ে আছে তাদের মানবীয় আচরণ এবং স্বয়ং কৃতকর্ম। কুরআনে এসেছে, ‘মানুষের কৃতকর্মের জন্য জলে ও স্থলে ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়ে, তাই তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তাদের আস্বাদন করানো হয় যাতে ওরা সৎ পথে ফিরে আসে’ (সূরা রুম-৪১)।
লেখক : নিবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement
প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে খুশি রাখাই এ সরকারের পররাষ্ট্রনীতি : মির্জা ফখরুল ঢাকায় পৌঁছেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ফিলিস্তিনপন্থী পোস্টে ‘লাইক’ দেয়ায় চাকরিচ্যুত ভারতীয় শিক্ষিকা গাজার আল-শিফা হাসপাতালে তৃতীয় গণকবর : ৪৯ লাশ উদ্ধার র‌্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি হৃদয়-তাসকিন-মাহেদির ঠাকুরগাঁওয়ে জাল ভোট দেয়ার সময় যুবক আটক রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি মানবিক আবেদন কুবিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তদন্ত কমিটি গঠন ডলারের দাম একদিনেই কেন ৭ টাকা বাড়ানো হলো? হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবীদের ১৫তম ব্যাচের নতুন কমিটি বন্দরে ২ পোলিং এজেন্ট আটক, যুবকের কারাদণ্ড

সকল