২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রেম আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত

-


দুই অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ প্রেম। প্রেম শব্দটিই সম্ভবত পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুুন্দর ও অনুপম শব্দ। এত মধুর শব্দ, এত মিষ্টি শব্দ, এত আকর্ষণীয় শব্দ, এত নন্দিত শব্দ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আর নেই। পৃথিবীর যাবতীয় রূপ, রঙ, রস ও সৌন্দর্যগুণ সব এই একটি মাত্র শব্দের মধ্যেই নিহিত। এই প্রেমকে কেন্দ্র করেই পৃথিবীর সবকিছু আবর্তিত। গবেষণার দৃষ্টিতে দেখলে পৃথিবীর সবকিছুর মধ্যেই এই আকর্ষণ লক্ষ করা যায়। মধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণ দ্বারা আসমান-জমিনকে স্থিতিশীল রাখা হয়েছে। প্রেমের টানেই নদী ছুটে যায় সাগরের পানে। আহ্নিক গতি হয়, জোয়ার-ভাটা হয়। পাখিরা গান গায়, ফুলেরা সৌরভ বিলায়। প্র্রজাপতি ছুটে যায়। জলপ্রপাত বয়ে যায়। জেলখানা ফুলবাগান মনে হয়। রাজা সিংহাসন ছেড়ে ধূলির তখত বেছে নেয়। তাই এই প্রেম নিয়ে পৃথিবীর ঊষালগ্ন থেকেই মানুষের অবিরাম কৌতূহল আর আগ্রহের অন্ত নেই। মূলত প্রেম জীবনেরই অন্যতম অনুষঙ্গ। প্রেম শব্দটির আভিধানিক অর্থÑ হৃদয়ের টান, অনুরক্ত হওয়া, অনুরাগ, আসক্তি, বন্ধুত্ব, ভক্তি, স্নেহ, টান ইত্যাদি। (বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান)। ইংরেজিতে বলে খড়াব.
পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে : কোনো কিছুর প্র্রতি হৃদয়ের আকর্ষণকে প্রেম বলে। কারো কারো মতে, মনঃপূত বস্তুর প্র্রতি হৃদয়ের আকর্ষণকে প্রেম বলে। প্রকৃতপক্ষে, প্রেম হচ্ছে জীবনের বিচিত্র মুহূর্তের অচিন্তনীয় অনুভূতি বা তাৎক্ষণিক উদ্দীপনার মানসিক ক্রিয়া প্রদর্শন করে। পৃথিবীতে প্রেম ছাড়া কোনো মানুষ মিলবে না। কারণ মানুষকে প্রেমের নিদর্শন দিয়ে সমৃদ্ধ করা হয়েছে। সে নিদর্শনগুলো হচ্ছেÑ কলব, আকল, নফস ও বয়ান। এসব নিদর্শন থেকে উদগত বিপুল প্রসারী ‘ভাবসম্পদ’ মানুষের অভ্যন্তরে যে আলোড়ন সৃষ্টি করে; তা তাৎক্ষণিক মানসিক ক্রিয়ার ফলে প্রতিভাত হয়। আধুনিক মনোবিজ্ঞানীরা এ রকম ঘটমান মানসিক ক্রিয়াকে বলে থাকেন প্রেম।
প্রেম বেশি আবেগ ও অনুভূতিপ্রবণ। প্রেম কেন আবেগ ও অনুভূতি সৃষ্টি করে তা বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীদের কাছে আজো এক অজানা অধ্যায়। তবে কোনো কোনো মনোবিজ্ঞানী মস্তিষ্কের পিটুইটরি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত কয়েক প্রকার হরমোনকে এর জন্য দায়ী করেছেন। হরমোন হলো এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ যা বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নির্গত হয়ে রক্তে মিশে একাকার হয়ে যায় এবং শারীরিক ও মানসিক উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। হরমোন শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক চঞ্চলতা সৃষ্টি করে এবং হৃদয়ে আসক্তি জাগিয়ে তোলে। স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্তের মাধ্যমে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অঞ্চলকে উত্তেজিত করে। তারপর এমন এক অচিন্তনীয় অনুভূতি সৃষ্টি হয়, যার বিপুল অনুভবে হৃদয়-মন উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। এমনি করে অন্তঃকরণ থেকে উৎসারিত আবেগ, আসক্তি, আনন্দ-বেদনা, স্মৃতি, অনুভূতি মনোবৃত্তির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলাফল চেহারায় ফুটে ওঠে। তাই মনস্তত্ত্ববিদেরা বলেন, ‘মনের মধ্যে আনন্দ-বিষাদের কোনো ঘটনা ঘটলে চেহারায় তা উদ্ভাসিত হবেই। মনোবিজ্ঞানীরা চেহারা দেখেই বলে দেন, ‘আপনি প্রিয়জনের বিরহে আড়ষ্ট হয়ে পড়েছেন’ কিংবা আপনার একজন প্রিয়জন বা সঙ্গী প্রয়োজন। ‘বিজ্ঞানময় আল কুরআন সঙ্গী গ্রহণের যে কল্যাণকর বিধান বাতলিয়ে দিয়েছে; তা হচ্ছে বিয়ে-বন্ধন। বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন। এই বন্ধনকে কেন্দ্র করেই মূলত সামাজিক ও অর্থনৈতিক কার্যাবলি আবর্তিত হতে থাকে। মানুষের স্থায়িত্ব ও সভ্যতা-সংস্কৃতি এর উপরই নির্ভরশীল। তাই নারী-পুরুষ পবিত্র বিয়ে-বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর একে অপরের প্রতি প্রেম নিবেদনপূর্বক যে অসীম শান্তি-সুখ অনুভব করে তা অন্য সব প্রশান্তি থেকে আলাদা। এই প্রেমে তৃপ্তি আছে, সুখ আছে, আছে প্রফুল্লতা। একদল পশ্চিমা বিজ্ঞানী সাম্প্রতিকালে অভিমত ব্যক্ত করতে বাধ্য হয়েছেন, বিয়ে-বন্ধনের বাইরে নারী-পুরুষের সম্পর্ক যেমন লিভটুগেদার, ফ্রি সেক্স কালচার প্রভৃতি ভ্রান্ত পদ্ধতি। প্র্রবঞ্চনা, মিথ্যা, মরীচিকা এবং বিকৃত মানসিকতা চরিতার্থ করার প্রয়াস ছাড়া এগুলো আর কিছু নয়। এতে শান্তি লাভের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। যেমন একটা উদাহরণ টানলে বিষয়টি আরো সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। বর্তমান বিশ্বের কোটি কোটি তরুণ-তরুণীর হার্টথ্রব আইকন আর্জেন্টিনার তারকা ফুটবলার লায়নেল মেসি। তিনি বিয়ের আগেই তার দীর্ঘ দিনের বান্ধবী রোকুজ্জার সাথে বিয়ে ছাড়াই সংসার পেতে দুই সন্তানের জনক হয়েছেন। দুই সন্তানের জন্মের পর গত বছরের শেষের দিকে মিডিয়াকে জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে-বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এ যেন আধুনিক সভ্যতার লাগাম টেনে ধরে জাহেলিয়া সভ্যতার দিকে ক্রমেই হারিয়ে যাওয়ার নামান্তর। মূলত মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন স্বামী-স্ত্রীর মনের গহীনে যে প্রেম-ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন, তা এক বিশেষ রহমত এবং মহান আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম একটি নিদর্শন। তাঁর অসংখ্য নিদর্শনের মধ্যে একটি হচ্ছেÑ ‘তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন যেন তোমরা একে অপর প্রশান্তিতে থাকতে পারো এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে দুর্নিবার ভালোবাসা ও করুণা সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য রয়েছে অনেক নিদর্শন।’ (সূরা রূম : ২১)
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনে আরো বলেন, তিনি আল্লাহ, যিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে এবং তাদের মধ্যে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছেন। মূলত আপনার সব বিষয়ের ওপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।’ (সূরা ফোরকান : ৫৪)
লেখক : প্র্রবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement