০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা বড় গুনাহ

-

আত্মার সাথে যাদের সম্পর্ক তারাই আত্মীয়। আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে, ‘যাদের সাথে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে তারাই আত্মীয়’। কুরআনুল কারিমে এই বিষয়টির জন্য আরহাম, আশিরাতুন, আকরাবীন প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আত্মীয়তার সম্পর্কের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে বহু আয়াত নাজিল করেছেন। রাসূল সা: ও তাঁর অসংখ্য হাদিসে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার মধ্যে দুনিয়াতে যেমন প্রভূত কল্যাণ রয়েছে, তেমনি আখিরাতেও এর সুফল লাভের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। অপর পে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় না রাখার অবশ্যম্ভাবী পরিণতির কথাও কুরআন মাজিদ ও হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে অত্যন্ত জোরালোভাবে সতর্কতা অবলম্বনের তাকিদ দেয়া হয়েছে। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করাকে একটি বড় ধরনের পাপ (অপরাধ) হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং এই পাপের শাস্তি দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গাতেই ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই পাপের খারাপ প্রভাব পুরো জাতির ওপর পড়ে থাকে এবং এর অনিবার্য পরিণতি হিসেবে জাতির মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ব্যক্তির ঈমান তথা বিশ্বাসের ওপরও এর বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়ে থাকে।
কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মতা লাভ করলে তোমরা সম্ভবত পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে।’ এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক’ বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর, অতি সংবেদনশীল এবং এই সম্পর্ক ছিন্ন করার খারাপ দিক অত্যন্ত ভয়াবহ ও বিপর্যয়কর।
কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এরই সুসংবাদ দেন আল্লাহ তাঁর সেসব বান্দাদের; যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, বলুন, আমি আমার দাওয়াতের জন্য তোমাদের কাছে কেবল আত্মীয়তাজনিত সৌহার্দ্য চাই... ’ (সূরা আশ শুরা:২৩)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘আর আল্লাহকে ভয় করো যার নামে তোমরা একে অন্যের নিকট যাঞ্ছা করে থাকো এবং আত্মীয়-জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করো’ (সূরা নেছা :১)।
হাদিসে গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালা যেসব গুনাহের শাস্তি ইহকাল ও পরকাল উভয় জায়গাতেই দেন সেগুলোর মধ্যে নিপীড়ন ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার সমান কোনো গুনাহ নাই’ (আঃ দাঃ তিরমিজি)।
সহিহ বোখারিতে আবু হুরায়রা রা: ও অন্য দু’জন সাহাবি থেকে এ বিষয়ে বর্ণনা আছে যে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আত্মীয়তা বজায় রাখবে আল্লাহ তায়ালা তাকে নৈকট্য দান করবেন এবং যে ব্যক্তি আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ছিন্ন করবেন।’ হজরত সাওবান রা: বর্ণিত হাদিসে রাসূল স: বলেন, ‘যে ব্যক্তি আয় বৃদ্ধি ও রুজি-রোজগারে বরকত কামনা করে সে যেন আত্মীয়দের সাথে সদয় ব্যবহার করে।’ আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার েেত্র কোনো আপেকিতা নেই বা রাখা উচিত নয়; বরং অপর প দুর্ব্যবহার করলেও প্রথম পকে সৎ ব্যবহার করতে হবেÑ এটিই ইসলামের দাবি। এ সম্পর্কে রাসূল সা: বলেন, ‘সে ব্যক্তি আত্মীয়দের সাথে সৎ ব্যবহারকারী নয়, যে কেবল প্রতিদানের সমান সদ্ব্যবহার করে; রবং সেই সদ্ব্যবহারকারী যে অপর প থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করা হলেও সদ্ব্যবহার অব্যাহত রাখে’ (ইবনে কাসির)।
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমন তার ফজিলতও অনেক বেশি। ইমাম নাসায়ী বর্ণিত আনাস ইবনে মালেকের রেওয়ায়েতে রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি চায় যে, তার রিজিক প্রশস্ত ও জীবন দীর্ঘ হোক, তার উচিত আত্মীয়স্বজনদের সাথে সৎ ব্যবহার করা।’ উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এখানে বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ বয়সের বরকত ও কল্যাণ বৃদ্ধি পাওয়া। যেমন অন্য একটি হাদিসে ইবনে আবি হাতেমের রেওয়ায়েতে আবু দারদা রা: বলেন, ‘রাসূলের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করলে তিনি বলেন, ... বয়স বৃদ্ধি পাওয়া অর্থ এই যে, আল্লাহ তায়ালা তাকে সৎকর্মপরায়ণ সন্তান-সন্ততি দান করেন যারা সেই ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে থাকে। সে না থাকলেও কবরে তাদের দোয়া পেতে থাকে...।’ পার্থিব জীবনে আরাম-আয়েশ তথা শান্তিশৃঙ্খলার জন্য নেক ও সৎকর্মপরায়ণ সন্তান প্রয়োজন। আর তা আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশা করা যেতে পারে।
লেখক : প্রবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement