১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


রমজান ও শবে কদরের ভূমিকা

-

যে সব ধর্মীয়, রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা, দেশ থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে চান, তাদের জন্য এই মহান রাত ও মাস হলো আল্লাহর বড় নেয়ামত ও সুযোগ।
সরকার বাহিনীর পর বাহিনী করার পরও শতশত কোটি টাকা খরচ করে যেখানে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করা যাচ্ছে না, সেখানে আল্লাহর ভয় এবং নিজের ভবিষ্যত চিন্তাই শুধু মানুষকে ওইসব অপকর্ম থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারে। আল্লাহর ভয় আরববাসী, সন্ত্রাসী ও বর্বর মানুষ গুলোকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে শান্তির পথে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিল। তাদের মধ্যে যখন আল্লাহ এবং আখিরাতের ভয় সৃষ্টি হয়েছিল, তখন নিজের ভবিষ্যত চিন্তায় তারা নিজেরাই শুধু সব পাপাচার-অনাচার বর্জন করেনি, অন্যদেরও সব অন্যায় ও পাপকর্ম থেকে বিরত রাখার দায়িত্ব পালন করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ভালো কাজ চালু করবে, খারাপ কাজ বন্ধ করবে’ ‘যারা উল্টা চলবে এবং কুফরি করবে তাদের জন্য আছে বেদনাদায়ক কঠিন শাস্তি’। (আল কুরআন)
রাজনৈতিক ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা মহান এই রাত ও মাসে যদি নিজেরা আল্লাহর নাফরমানি ত্যাগ করে এবং সংশোধন হয়, ইমামদের কাজে লাগিয়ে জাতিকেও এসব অপকর্ম থেকে বাচার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করে, মানুষের মধ্যে খোদার ভয় এবং এইসব অপকর্মের ইহ ও পরকালীন পরিণতি সম্পর্কে সচেতনা সৃষ্টি করার চেষ্টা ও দায়িত্ব পালন করে, তাহলেই শুধু সম্ভব জাতিকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মুক্ত একটি দেশ উপহার দেয়া। আর এমন চরিত্র ও স্বভাব সৃষ্টি করার জন্যই রমজান ও শবে কদর। এই রকম ঈমান চরিত্র ও স্বভাব সৃষ্টি করতে না পারলে তাদের রমজান ও শবে কদর পালন এবং সুন্দর সুন্দর বক্তৃতা, বিবৃতি ও বাণী প্রদান বৃথা। আল্লাহর নবী সা: বলেন, ‘যে অন্যায় অপকর্ম ও মিথ্যা ছাড়তে পারল না, তার খানাপিনা ছাড়ায় কোনো লাভ নেই।’ (আল হাদিস)

মাহে রমজান

৩০ দিনব্যাপী পবিত্র রমজান মাস, সিয়াম সাধনার মাস, ইবাদত-বন্দেগি এবং কুরআন নাজিলের মাস। পুরো রমজান নিয়ে শবে বরাত পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৩ দিন হয়। আল্লাহর নবী সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন তাকবিরে উলার সাথে (ইমাম সাহেব প্রথমে আল্লাহু আকবর বলার সাথে সাথে) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করবে, আল্লাহ তাকে মুনাফেকি থেকে মুক্তি দেবেন। (আল হাদিস)
আল্লাহর নবী সা: বলেন, ‘মুনাফেকি মানুষের মধ্যে গান বাজনার কারণে সেভাবে জন্ম নেয়, বৃষ্টির কারণে শুকনো মাটিতে ক্ষেত খোলা যেভাবে জন্ম নেয়। (আল হাদিস) তিনি আরো বলেন, নারীকণ্ঠ এবং বাদ্যযন্ত্র আল্লাহর গজবকে সেভাবে টেনে আনে চুম্বক যেভাবে লোহাকে টেনে আনে।’ (আল হাদিস)
রমজান হলো সিয়াম সাধনার, কুরআন নাজিলের এবং শবে কদর তালাশের মাস। রমজান মাসের মূল কাজ হলো ঠিকভাবে রোজা রাখা, কুরআন পড়া এবং নিজের সব ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক কাজ রমজানের শিক্ষা ও কুরআনের আইন ও বিধান মতো করার সিদ্ধান্ত নেয়া। রমজানের শিক্ষা ও কুরআনবিরোধী সব কাজ ত্যাগ করার শপথ নেয়া। রমজানে ২০ রাকাত তারাবি নামাজ পড়া। অর্থসহ কুরআন অধ্যয়ন করা, কুরআন তিলাওয়াত করা। আল্লাহর রাস্তায় গরিব অসহায় মানুষদের বেশি বেশি সাহায্য করা এবং রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতে এতেকাফ করার মাধ্যমে শবে কদর তালাশ করা। রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করা। যারা এভাবে আমল করবে তারা একটি আমল করলে ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত সওয়াব পাবে। আল্লাহর নবী সা: বলেন, ‘যারা রমজানে একটি নফল কাজ করবে আল্লাহ তাদের একটি ফরজের সওয়াব দেবেন। আর যারা একটি ফরজ আদায় করবে, আল্লাহ তাদের ৭০টি ফরজের সওয়াব দেবেন। (আল হাদিস)
রমজান হলো পরহেজগার ও খোদাভীরু হওয়ার জন্য শপথ নেয়ার মাস। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারেরা আগের লোকদের মতো তোমাদের উপরও রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেন তোমরা পরহেজগার এবং খোদাভীরু হতে পারো।’ (আল কুরআন)। যারা শাবান মাস থেকে প্রস্তুতি নিয়ে ঠিকভাবে রমজান অতিবাহিত করবে এবং শবে কদরের সন্ধানে এতেকাফ করবে, তারাই শবে কদর লাভ করতে পারবে।
যারা মধ্য শাবান থেকে রমজান পর্যন্ত এই ৪৩দিন তাওবা এসতেগফার করে, নামাজ কালাম ঠিকভাবে পড়ে, নিজেকে ইসলামবিরোধী সব কাজ থেকে মুক্ত ও পবিত্র করবে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী ইসলামের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সব বিধিবিধান মেনে চলার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবে, আল্লাহর দয়ায় তারাই মুনাফেকি থেকে মুক্তি পাবে এবং তাদের পক্ষেই সম্ভব দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদসহ সব ধরনের অন্যায়-অনাচার থেকে জাতিকে মুক্তি দেয়া। যারা অন্যায়-পাপাচারে লিপ্ত, তারা জাতিকে কিভাবে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অন্যায়-অনাচার থেকে মুক্তি দেবে?

পবিত্র শবে কদর

শবে কদরকে লাইলাতুল কদর বলে। কুরআনের ভাষায় লাইলাতুল কদর যাকে বলা হয়, পাক, ভারত বাংলাদেশে তাই শবে কদর হিসেবে পরিচিত। শবে কদর মানে মর্যদা প্রাপ্তি ও মর্যদা বৃদ্ধির রাত। অর্থাৎ যারা তওবা করে পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনা ইবাদত-বন্দেগির করে শবে কদর লাভ করবে, আল্লাহর নিকট তাদের মর্যদা অনেক গুণ বেড়ে যাবে। শবে কদর নিজেও মর্যাদা সম্পন্ন রাত, আর শবে কদর যারা লাভ করবে তাদের মর্যাদাও শবে কদর বাড়িয়ে দেবে। আল্লাহ বলেন, ‘শবে কদর হাজার মাসের চাইতে উত্তম। এ রাতে আল্লাহ বান্দার তওবা কবুল করেন। বান্দার গুণা ক্ষমা করেন।’ তাই সবার উচিত মধ্য সাবান থেকে শবে কদর পর্যন্ত বেশি বেশি তওবা, এতেগফার ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে নিজের দুনিয়া ও আখিরাতের সুখশান্তির ব্যবস্থা করা। যারা রমজানে এতেকাফ করবে, তারা আল্লাহর নিকটপ্রতিবেশী হয়ে যাবে। আল্লাহর নবী সা: বলেন, এতেকাফকারী আল্লাহর প্রতিবেশী। যারা রমজান মাস এবং শবে কদরে তওবা করবে, ইবাদত-বন্দেগি করবে, আল্লাহর ভয় এবং ভালোবাসায় নিজেকে সংশোধন করবে এবং নিজের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক সব কাজ আল্লাহ রাসূলের কথামতো সম্পাদনের সিদ্ধান্ত নেবে তারা দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী ও সাম্প্র্রদায়িক হতে পারে না। বরং তারাই হবে দুর্নীতি, দুর্নীতিবাজ সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের জানের দুশমন।
রমজান ও শবে কদর, মানুষের মধ্যে খোদাভীতি, সম্প্র্রীতি ও মানবতাবোধ সৃষ্টি করে, তাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার মাধ্যমে তাদের দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদসহ সব ধরনের অপকর্ম ও পাপাচার থেকে মুক্ত করা এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা সফলতা পাবে যারা নিজেকে এবং নিজের অধীনস্থদের পরিশুদ্ধ করবে নিজের রবের কথা (ভয় ও ভালোবাসার সাথে) স্মরণ করবে এবং নামাজ পড়বে। (আল কুরআন, সূরা আলা : ১৪-১৫)
লেখক : খতিব


আরো সংবাদ



premium cement
টঙ্গীতে ৩ তলার ছাদ থেকে পড়ে বিএনপি নেতার ছেলের মৃত্যু মালদ্বীপ থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করেছে ভারত জামিন পেলেন কেজরিওয়াল, তবে ভোটগণনার দিন থাকতে হবে জেলেই পরকীয়া প্রেমিক যুগলের গলায় জুতার মালা : চেয়ারম্যান বরখাস্ত সমাবেশে যোগ দিতে নয়াপল্টনে জড়ো হচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা রংপুরে রেয়াত পদ্ধতি চালুসহ ৪ দফা দাবিতে মানববন্ধন নতুন কোচের সন্ধানে বিসিসিআই, তাহলে কি দ্রাবিড়ের বিদায়! থাইল্যান্ডে এ বছর হিটস্ট্রোকে ৬১ জন প্রাণ হারিয়েছে : সরকার নির্বাচন শেষ হলে আরো সত্য ঘটনা সামনে আসবে, ধর্ষণের অভিযোগ প্রসঙ্গে শাহজাহান রাণীনগরে সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ গ্রেফতার ৪ যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে চট্টগ্রামে জরুরি অবতরণ, প্রাণে বাঁচলেন ৭ ক্রুসহ ১৯১ যাত্রী

সকল