২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোগ প্রতিরোধে বেগুন

-

খাদ্যই প্রাণশক্তির আধার। খাদ্য গ্রহণ করে আমরা শরীর রক্ষা পালন ও বৃদ্ধি করে থাকি। খাদ্যসার গ্রহণ করে দেহ পুষ্টি ও রোগমুক্ত হয়। আবার ত্রুটিপূর্ণ খাদ্য খেলে দেহ অসুস্থ হয়ে ওঠে। তাই সব পেশার লোকেরই খাদ্যগ্রহণ সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়। খাদ্যের সাহায্যে রোগ নিরাময় করাকে বলে ডায়েটেথেরাপি। উপযুক্ত খাদ্য গ্রহণে শরীর থেকে অনেক রোগ দূর হয়। আসলে ডায়োটোথেরাপির নীতি হলো রোগের প্রতিকারের চেয়ে রোগ প্রতিরোধ করা। তাই রোগ যাতে না হয় সে জন্য ঠিকমতো খাদ্য খাওয়া উচিত। রোগ হয়ে গেলে তা নিরাময় করা কষ্টকর। উপযুক্ত খাদ্যের মধ্যে শাকসবজি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা প্রদানকারী খাদ্য এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা ও রোগ প্রতিরোধে বিরাট ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেহে ক্ষারীয় অবস্থা বজায় রাখতে শাকসবজি খুবই প্রয়োজনীয় খাদ্য। এতে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন এ, বি, সি, ই, কে ও খনিজ পদার্থ থাকে। বেগুন খেলে সবার চুলকানি হয় না। অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া যেকোনো খাদ্যেই হতে পারে। তা ব্যক্তিবিশেষের ওপর নির্ভর করে। তবে যাদের চুলকানি বা সমস্যা হয়, তারা খাবেন না। বেগুন মাছ-গোশতের সাথে তরকারি বা ভর্তা ও ভাজি করে খাওয়া যায়। বেগুন গুণে ভরা একটি সবজি। এটা রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেগুন উদ্ভিদ জগতের ঝড়ষধহধপবধব গোত্রের উদ্ভিদ বৈজ্ঞানিক নাম ঝড়ষধহঁস গবষড়হমবহধ (সোলানাম মেলঙ্গিনা)।
রাসায়নিক উপাদান : বেগুন অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি। বেগুনের পাতায় রাইবোফ্ল্যাডিনে সমৃদ্ধ। এতে আরো আছে নিকোটিনিক এসিড, ভিটামিন-সি, বিটা-ক্যারোটিন, সোলাসোনিন ও সোলামর্জিন ফলে থাকে যা আমরা সবজি হিসেবে খাই তাতে থাকে স্যাপোনিন স্টেরয়েডিয় গ্লাইকো-উপক্ষার, সোলানিন, সোলামার্জিন, সোলা সোনিন, আলফা ও বিটা-সোলানিগ্রিন, সোলাসোডিন, স্টেরয়েডিয় জেনিন, ট্রাইজোনিন খনিজ পদার্থ ও এনজাইম পাওয়া যায়।
পুষ্টি উপাদান : পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী বেগুনে পুষ্টি উপাদান হলোÑ আমিষ ১.৮ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৪ গ্রাম, চর্বি ২.৯ গ্রাম, আঁশ ১.৩ গ্রাম, ভিটামিন এ ৮৫০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.১২ মিলিগ্রাম, বি-২ ০.০৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি ১২ মিলিগ্রাম, খনিজ লবণ ০.৮ গ্রাম, আয়রন ০.৯ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৮ গ্রাম, পটাশিয়াম ২০০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৪৭ মিলিগ্রাম, নিকোটিনিক এসিড ০.৯ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪২ কিলোক্যালরি। সুতরাং আমরা প্রতিনিয়ত বেগুন খেয়ে দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারি।
উপকারিতা :বেগুনের ফাইবার বারবার খিদে লাগার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। তাই শরীরের ওজন কমাতে চান তারা নিয়মিত বেগুন খান ও দেহের অতিরিক্ত ওজন কমবে। বেগুনে ভিটামিন ৬, ফ্ল্যাভোনয়েডস, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় হৃৎপিণ্ডের ধমনিগুলো ভালো থাকে। রক্ত সঞ্চালনও ভালো হয়। ফলে হৃদরোগ হওয়ার প্রবণতাও কমে যায়। বেগুনে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে, ফলে ত্বকের সজীবতা বজায় থাকে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে। চামড়ার বলিরেখা পড়তে দেয় না। বেগুনে সামান্য পরিমাণে নিকোটিন থাকে যা ধূমপায়ীদের ধূমপান ছাড়াতে সাহায্য করে। বেগুনে থাকে ই এবং কে। এটি শরীরের ভেতরে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। ফলে রক্ত চলাচল কার্যক্রম সচল থাকে। ডায়রিয়া দেখা দিলে শরীরে জিঙ্কের অভাব দেখা দেয়। জিঙ্কের এ অভাব দূর করতে বেগুন একটি ভালো খাদ্য। তবে ডায়রিয়া চলাকালে খাওয়া যাবে না। সুস্থ হওয়ার পর খেতে হবে। বেগুনে বেশ ভালো আয়রন থাকে। এই আয়রন শরীরে রক্ত উৎপন্ন করে। তাই যারা রক্তশূন্যতায় ভোগেন তারা বেগুন খেয়ে রক্তশূন্যতা দূর করতে পারেন।
ঔষধি গুণ : যাদের রাতে ঘুম কম হয় তারা একটু বেগুন পোড়ায় (ভালো করে ভেজে) মধু মিশিয়ে রাতে চেটে খেলে রাতে ঘুম আসতে পারে। লিভারের সমস্যায় লিভার বেড়ে গেলে কচি বেগুন ভালো মতো ভেজে রোজ সকালে খালি পেটে খেলে উপকার পাবেন। যাদের প্র¯্রাব কম হয় তারা নিয়মিত বেগুন খেলে প্রস্রাব বাড়বে। ছোট ছোট সাদা বেগুন খেলে অশর্^ রোগের উপকার হয়। বেগুন চাক চাক করে ফোড়ার ওপর বেঁধে দিলে ফোড়া তাড়াতাড়ি পেকে যায়। শরীরে চর্বি জমে মোটা হয়ে গেলে বেগুন ভাজি করে অল্প লবণ মাখিয়ে রাতে ভাতের পরিবর্তে রুটি দিয়ে খান শরীরের মেদ কমে আসবে। মহিলাদের মাসিকের সমস্যা দেখা দিলে বা অনিয়মিত মাসিক হলে নিয়মিত বেগুনের তরকারি, ভাজি করে বা রুটির সাথে গুড় মিশিয়ে খান উপকার পাবেন। আঙ্গুল ফুলে মোটা হয়ে গেলে লম্বা একটি বেগুনের মাজের শাঁস বের করে তাতে আঙ্গুল ঢুকিয়ে রাখলে ফুলা ও ব্যথা কমে আসবে।
সতর্কতা : যাদের গেঁটে বাত আছে, কিংবা অ্যাজমা বা অ্যালার্জি বেশি তাদের বেগুন না খাওয়াই ভালো। তবে ডাক্তারের পরামর্শ মতে খেতে পারেন। কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে বেগুন খাবেন না। যে বেগুনে বীজ বেশি সে বেগুন খাবেন না। মনে রাখবেন, কচি ও কালো বেগুনে গুণাগুণ বেশি। সুতরাং পরিপুষ্ট কচি ও কালো বেগুন সুস্বাস্থ্যের নিয়ামক।
লেখক : শিক্ষক, কলাম ও স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বিপাক্ষিক উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।


আরো সংবাদ



premium cement