২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোগ প্রতিরোধে ফুলকপি

-

শীতকাল নানা প্রকার শাকসবজির ভরা মওসুম। এ সময় বাজারে টাটকা শাকসবজি প্রচুর পাওয়া যায় এবং দামেও সস্তা। শীতের সবজির মধ্যে ফুলকপি একটি সুস্বাদু জনপ্রিয় সবজি। শাকসবজিতে মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন খনিজ লবণ ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান প্রচুর পাওয়া যায়। সবজির ভিটামিন আমাদের নানা রোগব্যাধি থেকে দেহকে রক্ষা করে। আমাদের সুস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধে বিশেষ উপকারী কাজগুলোর মধ্যে ফুলকপির রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। এই ফুলকপিতে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, বি, সি। তা ছাড়া শরীরের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় আয়রন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও সালফার। ফুলকপির ডাঁটা ও সবুজ পাতায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে। যা আমরা গ্রহণ করে আমাদের দেহের নিত্যদিনের ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করতে পারি। তা ছাড়া মারণব্যাধি ক্যানসার প্রতিরোধে ফুলকপির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফুলকপি উদ্ভিদ জগতের ক্রুসিফেরি পরিবারের (ঈৎঁপরভবৎবধ ঋধসরষু) একটি উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ব্রাসিকা ওলেরেসিয়া ইৎধংংরপধ ঙষবৎধপবধ।
পুষ্টি উপাদান : পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী ফুলকপিতে পুষ্টি উপাদান নি¤œরূপ : আমিষ ২.৬ গ্রাম, শর্করা ৭.৫ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.৮ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ২ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪১ মিলিগ্রাম, লৌহ ১.৫ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪১ কিলোক্যালরি, ফসফরাস ৫৭ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ২৯৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৫৩ মিলিগ্রাম, নিকোটিনিক এসিড ১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১০.০২ মিলিগ্রাম, বি-২০.০৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৯১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই ০.০৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে ১৫.৫ মাইক্রোগ্রাম, ফলেট ৫৭ মাইক্রোগ্রাম। ফুলকপি সবজি ও মাছ, গোশতের সাথে তরকারি করে খাওয়া যায়। ফুলকপির ডাঁটা ও সবুজ পাতায় প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। সুতরাং ফুলকপির ডাঁটা ও কচি সবুজ পাতা খেয়ে দেহের ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করতে পারি। খনিজ পদার্থের মধ্যে মানবদেহে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। তবে মনে রাখবেন শাকসবজিতে অক্সালিক এসিড থাকায় শাকসবজির ক্যালসিয়াম শরীরে পুরোপুরি শোষিত হতে পারে না। তাই একটু বেশিই শাকসবজি খেতে হয়। ক্যালসিয়াম দেহের হাড় ও দাঁত গঠনে অংশ নেয় ও রক্ত সঞ্চালন, পেশি সঙ্কোচনসহ দেহের নানা কাজে সাহায্য করে। ক্যালসিয়ামের অভাবে ‘টিটেনি’ নামক এক ধরনের প্রাণঘাতী রোগ দেখা দেয়। ভিটামিন সি দাঁত, মাড়ি ও পেশি মজবুত করে। সর্দি, কাশি ও ঠাণ্ডা লাগার হাত থেকে রক্ষা করে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফুলকপির ভিটামিন ‘সি’ ও ম্যাগনেসিয়াম অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন ‘কে’ বক্ষ নালীর সুরক্ষা করে। মানবদেহের বিভিন্ন অংশে ক্যান্সার কোষ জন্মাতে বাধার সৃষ্টি করে ফুলকপি। ফুল কপিতে বিদ্যমান ফলে উপাদান রক্তের শ্বেতরক্ত কণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। তাছাড়া এ উপাদানটি গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই উপকারী। আমাদের দেহে রক্তের কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এ অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমাতে ফুলকপি বেশ ভালো সাহায্য করে। ডায়াবেটিকস ও উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য একটি ভালো খাদ্য।
উপকারিতা : আমাদের শরীরে রক্ত তৈরিতে আয়রন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণত গর্ভবতী মা, বাড়ন্ত শিশু এবং কিশোরী এবং যারা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করে তাদের জন্য ফুলকপি খুবই উপকারী সবজি। কারণ ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায়। আমাদের শরীর বৃদ্ধি ও বর্ধনের জন্য ফুলকপি বেশ প্রয়োজনীয় একটি সবজি। ফুলকপি ও বাধাকপিতে ইনডলস নামক একটি উপাদান থাকে যা দেহের ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাকস্থলির ক্যান্সার, মূত্রথলি ও মহিলাদের প্রোস্টেট, স্তন ও জরায়ুর ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। ফুলকপির ভিটামিন এ, সি শীতকালীন নানা রোগ যেমন : সর্দি, কাশি, জ্বর ও টনসিলের সমস্যা সমাধানে বিশেষ সাহায্য করে। ফুলকপিতে সালফোরাফেন উপাদান থাকে যা ক্যান্সারের স্টেম সেল ধ্বংস করতে সাহায্য করে। তা ছাড়া শরীরে নানা প্রকার টিউমার জন্মানো বা বৃদ্ধি প্রতিহত করে। দেহের রক্তের চাপ কমায় এবং কিডনি সুস্থ সুন্দর রাখতে ফুলকপি বেশ উপকারী। ফুলকপিতে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি নিউটিয়েন্টস উপাদান তাকে যা শরীরে দহন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। তা ছাড়া ফুলকপিতে আঁশ তাকে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজম দ্রুত করতে সাহায্য করে। ফুলকপির ভিটামিন এ চোখের জন্য খুবই উপকারী। চোখের দৃষ্টিশক্তিকে প্রখর করে। ফুলকপিতে ভিটামিন ই বা টোকোফেরল থাকে। যা বন্ধ্যত্ব বা যে মহিলাদের সন্তান হয় না তাদের জন্য ফুলকপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফুলকপিতে ভিটামিন কে থাকে যা চৎড়ঃযৎড়সনপরহ নামক এক পদার্থ তৈরি করে যা শরীর কেটে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
সতর্কতা : ফুলকপি রান্নার সময় টুকরো টুকরো করে পানিতে ভিজিয়ে বা ধুয়ে নেবেন না। এতে ফুলকপির খাদ্য উপাদান পানির সাথে মিশে চলে যায়। ফুলকপি কেটে ফ্রিজে বা অন্য কোনো স্থানে খোলা অবস্থায় ফেলে রাখবেন না। কিডনি রোগে যারা ভুগছেন তারা ফুলকপি না খাওয়াই ভালো। কারণ ফুলকপিতে থাকা উদ্ভিজ আমিষ দুর্বল কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। যারা গলার থাইরয়েড গ্রন্থির রোগে ভুগছেন তারা ফুলকপি খাবেন না। বেশি করে শীতের সবজি খান বিভিন্ন প্রকার রোগের হাত থেকে বেঁচে থাকুন।


আরো সংবাদ



premium cement