২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ডায়াবেটিক রোগের চিকিৎসায় বছরে কত টাকা খরচ হয়?

ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল - সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অদূরে গাজীপুরের বাসিন্দা শামীমা আক্তারের স্বামী গত আট বছর যাবত ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত।

প্রথম দুই বছর স্বামীর জন্য গড়ে এক হাজার টাকা খরচ হলেও, দিনের পর দিন সে খরচ বেড়েছে।

এখন তার প্রতিমাসে খরচ হয় প্রায় নয় হাজার টাকার মতো। কারণ, ডায়াবেটিসের কারণে আরো নানাবিধ শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়েছে তার।

ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত বারডেম হাসপাতালে বসে হতাশা প্রকাশ করলেন শামীমা আক্তার।

"প্রতিমাসে তারে এখানে তিন-চাইর বার আনাই লাগে," বললেন রাবেয়া।

বাংলাদেশে যারা ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা নেন তাদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৭২ ভাগ ট্যাবলেট খান এবং প্রায় ১৭ ভাগ ইনসুলিন নেন। বাকি ১১ শতাংশের দুটিই প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং চিকিৎসক অধ্যাপক রশিদ-ই-মাহবুব বলছেন, সব ডায়াবেটিক রোগীকে ট্যাবলেট খেতেই হয়।

"যেহেতু এর সাথে অন্যান্য রোগ থাকে, এ ধরণের একটি রোগী কোনো মতেই প্রতি মাসে দেড় থেকে দুই হাজার টাকার নিচে চলতে পারবে না," বলছিলেন অধ্যাপক মাহবুব।

ঢাকার বারডেম হাসপাতালটি বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে বড় হাসপাতাল।

প্রতিদিন সকাল থেকে শত-শত মানুষ এখানে আসেন চিকিৎসার জন্য। প্রায় প্রতিমাসেই এখানে আসেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রাবেয়া আক্তার।

তিনি বলছিলেন, বছর দুয়েক আগে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর এখন নিয়ম করে দুই বেলা ঔষধ খেতে হয়। এখন প্রতিমাসে তার প্রায় দেড় হাজার টাকার মতো ওষুধ কিনতে হয়।

ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশনের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ।

একজন রোগীর যদি প্রতিমাসে গড়ে দুই হাজার টাকা খরচ হয়, তাহলে সে হিসেবে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা বাবদ প্রতিমাসে বাংলাদেশে খরচ হচ্ছে প্রতি মাসে ১৪ শ' কোটি টাকা এবং প্রতি বছরে খরচ হচ্ছে ১৬ হাজার আট শ' কোটি টাকা।

অধ্যাপক রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, সচেতনতার মাধ্যমে যদি ডায়াবেটিসের বিস্তার কমানো সম্ভব না হয়, তাহলে এ রোগের জন্য আগামী ১৫-২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ হবে।

চিকিৎসকরা বলেন, ডায়াবেটিস অন্য আরো নানা ধরনের রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে চিকিৎসা ব্যয় বাড়তেই থাকে।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বলছে, শারীরিক পরিশ্রম এবং খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতন না হলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বড় দুর্যোগের নিয়ে আসছে ডায়াবেটিস।

এ রোগের চিকিৎসা নিতে মানুষের আর্থিক চাপ যেমন বাড়ছে তেমনি মানুষের কর্মক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। যেটি দেশেও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

 

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন

ডা: মিজানুর রহমান কল্লোল

ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাগুলোর মধ্যে পায়ের সমস্যা অন্যতম। অপ্রিয় হলেও সত্য অনেকেই এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সম্পর্কে উদাসীন। দুর্ঘটনা বা অন্যান্য কারণে পা হারানোর কথা বাদ দিলে অন্য যেসব কারণে অপারেশন করে পা কেটে ফেলতে হয় তার প্রায় ৫০ শতাংশই এর জন্য দায়ী ডায়াবেটিসজনিত পায়ের গ্যাংগ্রিন। অঙ্গহানির কারণে কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় এর রয়েছে সুদূরপ্রসারী পারিবারিক ও সামাজিক প্রভাব। এই জাতীয় পায়ের সমস্যার জন্য মূলত দায়ী ডায়াবেটিসজনিত স্নায়ুরোগ ও রক্তনালীর রোগ। এর মধ্যে বেশির ভাগই স্নায়ুরোগের কারণে এবং কিছু ক্ষেত্রে দুটোরই ভূমিকা থাকে। এর সাথে যোগ হয় বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশনের ক্ষতিকর প্রভাব। ডায়াবেটিসজনিত স্নায়ুরোগ যেভাবে পায়ের ক্ষতি করে তা হলো :

- পায়ের স্নায়ুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ব্যথা অনুভব করার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে একই স্থানে বারবার ছোটখাটো আঘাত যা চামড়ায় ক্ষত সৃষ্টি করে।


- স্নায়ুরোগের কারণে পায়ের মাংসপেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে শরীরের ওজন সঠিকভাবে বহন করতে না পারায় পায়ের আকৃতি কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং এর জন্য পায়ের কোনো কোনো স্থানে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে।

- ঘাম নিঃসরণকারী গ্রন্থির কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় পায়ের চামড়া শুষ্ক ও খসখসে হয়ে ফেটে যায়। ফলে ইনফেকশনের সুযোগ সৃষ্টি করে।

- রক্তনালীগুলোর ওপর স্নায়ুবিক নিয়ন্ত্রণ না থাকায় পায়ের সব অংশে প্রয়োজনীয় রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। ডায়াবেটিসজনিত রক্তনালীর রোগ ও পায়ের সমস্যা-

ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তনালীতে অতিরিক্ত চর্বি জমার কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে, যার জন্য বিশেষ করে পায়ে কোনো ক্ষত সহজে সারতে চায় না। ক্ষেত্রবিশেষে পচন পর্যন্ত ধরতে পারে।

কারো কারো পায়ে সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেশি
- যাদের ডায়াবেটিসজনিত স্নায়ুরোগ বা রক্তনালীর রোগ আছে।
- আগে যাদের পায়ে একবার ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল।
- যাদের পায়ের আকৃতি পরিবর্তন হয়েছে যেমন- আঙুল ভাঁজ হয়ে যাওয়া।
- যাদের পায়ে কোনো স্থানে চাপ পড়ার ফলে কড়া (callus) পড়ে।
- যাদের দৃষ্টিশক্তি কম।
- বয়োবৃদ্ধ রোগী যারা একা থাকেন।
- যাদের ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগ আছে।
- শারীরিক অসুবিধার জন্য যারা নিজে থেকে পা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন না।
- সর্বোপরি ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতার অভাব।

পায়ের সমস্যা এড়াতে করণীয়
- প্রতিদিন পরিষ্কার পানিতে পা ধুয়ে নরম তোয়ালে দিয়ে আঙুলের ফাঁকসহ পুরো পা মুছে ফেলুন এবং পরীক্ষা করে দেখুন যাতে ছোটখাটো আঘাত দৃষ্টি না এড়ায়।
- কারো পা বেশি শুষ্ক থাকলে অলিভওয়েল লাগাতে পারেন।
- নখ কাটার সময় খেয়াল রাখুন যাতে নখে কোনাগুলো বেশি কাটা না হয়।
- জুতা পরার আগে অবশ্যই দেখে নেবেন জুতার ভেতরে বা বাইরে আলপিন বা অন্য কিছু আছে কি না।
- জুতা কেনার সময় হাইহিল ও আঁটোসাঁটো জুতা কিনবেন না।
- উত্তপ্ত জিনিস যেমন হট ওয়াটার ব্যাগ ইত্যাদি থেকে পা দূরে রাখেন।
- ঘরে বা বাইরে খালি পায়ে হাঁটবেন না।
- ধূমপান পরিহার করুন ও কোনো অসুবিধা হলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ, ২, ইংলিশ রোড, ঢাকা।
ফোন: ০১৭১৬২৮৮৮৫৫
ফোন: ০১৬৭৩৪৪৯০৮৩ (রোমান)


আরো সংবাদ



premium cement