২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কোন‌ বয়সে একাকীত্ব হুমকি হয়ে দাড়ায়?

একাকীত্ব যে কোনো বয়সের মানুষকে গ্রাস করতে পারে - সংগৃহীত

একাকীত্ব সব বয়স নির্বিশেষে একটি সমস্যা হিসাবে স্বীকৃত হওয়া উচিত- এ মন্তব্য যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের প্রথম একাকীত্ব বিষয়ক মন্ত্রী ট্রেসি ক্রাউচের। তিনি প্রথমবারের মতো একাকীত্ব কৌশল প্রকাশ করেছিলেন।

তিনি মনে করেন, একাকীত্ব নিয়ে সমাজের প্রচলিত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে, কেউ যদি একাকীত্ব বোধ করে সেটা স্বীকার করতে পারার মতো মানসিকতা তৈরিতে একটি জাতীয় সংলাপের প্রয়োজন।

লন্ডনে এক সম্মেলনে ট্রেসি ক্রাউচ বলেন, "সরকার আমাদের জন্য বন্ধু তৈরি করতে পারবে না", কিন্তু "সামাজিক সংযোগ" বাড়ানোর কিছু কৌশল এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। এবং একাকীত্ব দূর করতে কোন বিষয়গুলো ভাল কাজ করবে সে বিষয়েও ভাল প্রমাণ পেতে সহায়তা করবে।

মন্ত্রী আরো বলেছেন, একাকীত্বকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার মানসিকতা অনেকটা এমন হতে পারে, "এক দশক আগে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য কোন অবস্থায় ছিল।"

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত একাকীত্বের কৌশল সামনের সপ্তাহে প্রকাশ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সেখানে বয়স্কদের একাকীত্বের বিষয়টিকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হবে না।

তবে একাকীত্বের অনুভূতিগুলো কিভাবে মানুষের জীবনে বহুবার গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে সে বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে।

গৎবাঁধা ধারণার সমাপ্তি

এটি নিয়ে একটি সাধারণ ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, একাকীত্বের এই সমস্যা জীবনের শেষ পর্যায়ে দেখা দেয়। এ বিষয়ে একাকীত্ব দূর করার বিষয়ে এক প্রচারণায় বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

দাতব্য সংস্থাগুলোর একটি জোট সেই সম্মেলনের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছিল।

ওই সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, তিনি বিচ্ছিন্নতার নেতিবাচক প্রভাব দেখে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছেন।

অল্পবয়সী ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে যারা নতুন মা-বাবা হয়েছেন, এমন কেউ যারা তাদের পরিবারের থেকে আলাদা হয়ে পড়েছেন, কোন ঘটনায় ভীষণ শোকগ্রস্ত অথবা যারা জীবন সায়াহ্নে রয়েছেন তাদের সবাইকে এই একাকীত্ব গ্রাস করতে পারে।

এই একাকীত্বের অনুভূতি থেকে বড় ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যার হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, "এই ধরণের স্বাস্থ্য-ঝুঁকি সে পরিমাণ গুরুত্ব দিয়ে মোকাবিলা করা উচিত যেভাবে কিনা ধূমপান বা স্থূলতা মোকাবিলা করা হয়।" এবং এই কৌশল প্রতিটি ক্ষেত্রে যেমন পরিবহন, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসহ সব জায়গায় প্রয়োগ করতে হবে।

একাকীত্বের এজেন্ডা

মন্ত্রী এটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, যেসব স্থানীয় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান একাকীত্বে দূর করার ক্ষেত্রে বড় ধরণের প্রভাব ফেলতে পারতো, সেগুলো কঠোর নীতিমালার মুখে পড়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকার পর্যায়ে এবং স্থানীয় সরকার পর্যায়ে যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিলো সেগুলো হয়তো কিছু মানুষের সাথে তাদের কমিউনিটির সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে।

ক্রাউচ বলেন, "একাকীত্বে ভোগার পরও আপনার কিছুই হয়নি এমন ভান করার কোনো যুক্তিই নেই" কোন বক্তব্য নেই যা ঘটেছে না," বলেছেন এম ক্রাউচ। এই সমস্যাটি কতোটা বিস্তৃত ও প্রকট সে বিষয়ে এই কৌশল একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মন্ত্রী আরো বলেছেন, জাতীয় পরিসংখ্যান দফতর একাকীত্ব পরিমাপের জন্য আরো "সামঞ্জস্যপূর্ণ" সংজ্ঞা তৈরি করবে, যেটা কিনা একাকীত্ব হ্রাস করার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো কাজ করবে, সে বিষয়ে আরো ভাল প্রমাণ সরবরাহ করবে।

কিন্তু ক্রাউচ সম্মেলনে বলেন, একাকীত্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা বাড়িয়ে দিয়েছিল। "সরকার এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলোর একটি হিসেবে একাকীত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে।"

 

একাকীত্ব নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জরিপ : কী এলো সমাধান?

বিবিসি সম্প্রতি একাকীত্বের উপর বিশ্বের সবচেয়ে বড় জরিপটি চালিয়েছে। সেখানে তারা সাধারণ মানুষের কাছে একাকীত্ব কাটিয়ে ওঠার বিষয়ে জানতে চেয়েছিল।

সেখান থেকে এমন নয়টি উপায় তুলে ধরা হল যেগুলো সেইসব মানুষের একাকীত্ব কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও কাজ করেছে।

এই সমাধান যে সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে কাজ করবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তবে পুরোপুরি বিফল যাবে সেটাও বলা যাবে না।

১. এমন কিছু করুণ যাতে মনোযোগ সরে যায়:
একাকীত্ব একটি অস্থায়ী অনুভূতি। জীবনের বিভিন্ন পট পরিবর্তনে আমরা একাকী বোধ করি।

সেটা হতে পারে নতুন কলেজ জীবন শুরু করা বা সম্পূর্ণ নতুন কোন স্থানে বসবাস শুরু করা।

বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ একাকীত্বের কষ্ট থেকে আমাদের দূরে রাখতে সাহায্য করতে পারে।

তাছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একাকীত্ব বোধ ফিকে হয়ে যায়।

সেক্ষেত্রে এমন কোন কাজ করুন যেটা আপনি পছন্দ করেন।

বিশেষ করে সেই কাজটি, যেটা আপনার মনোযোগ এতোটাই কেড়ে নেবে যে সময় কিভাবে কাটছে আপনি ভুলে যাবেন।

সেটা হতে পারে বই পড়া, কোন শখের চর্চা বা পছন্দের কোন কাজ করা। এই কাজগুলো আপনার শরীর ও মন দুই-ই ভাল রাখবে।

২. সামাজিক সংগঠন বা সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে যোগ দিন:
এই সমাধানের বিষয়টি শুনতে একটু গতানুগতিক ঠেকবে।

যদি আপনার একাকীত্বের কারণ আপনার আশেপাশে লোকজনদের সঙ্গে দেখা না করার জন্য হয় তবে এটি আপনার জন্য ভাল সমাধান হতে পারে। তবে এই সমাধান সবার জন্য নয়।

অচেনা কোন স্থানে অচেনা কোন মানুষের সঙ্গে হঠাৎ কথা বলা শুরু করা সব সময় এতোটা সহজ নয়।

এই কারণে একাকীত্বে ভোগা মানুষের জন্য এই উপায়টিকে জরিপের সর্বনিম্ন সহায়ক পরামর্শগুলোর একটি ধরা হয়।

যদি অপরিচিতদের সাথে কথা বলার বিষয়টি আপনাকে ভীত বা অপ্রস্তুত করে তাহলে, এমন একটি সংগঠন বেছে নিন যেখানে আপনি কাজের পাশাপাশি উন্নয়নমূলক বা সৃজনশীল কিছু করতে পারবেন।

হয় কোন গানের দলে যোগ দিন অথবা কিছু তৈরি করা শিখুন। এতে করে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে কারো সঙ্গে কথা বলার চাপে থাকতে হবে না।

সেইসঙ্গে নিজের পছন্দের কোন কাজ বেছে নেয়ায় আপনি হয়তো সেখানে এমন কাউকে পেয়ে যাবেন, যার সঙ্গে আপনার চিন্তা ভাবনা মিলে যাবে।

৩. জীবনকে ইতিবাচক করতে চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন আনুন:
এই সমীক্ষায় মানুষের সহানুভূতির মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যারা নিজেদের একাকী দাবি করেন, তারা সমাজের অন্য মানুষের প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল থাকেন।

বিশেষ করে তাদের প্রতি যারা কোন কষ্টকর সময় পার করছেন।

সামাজিক দক্ষতা পরিমাপ করে দেখে গেছে যে, একজন একাকী মানুষ আর দশটা মানুষের মতোই দক্ষ ও সামর্থ্যবান।

তাই বিষয়টা এমন নয় যে যারা একাকীত্ব বোধ করেন তাদের নতুন করে সামাজিক দক্ষতা শিখতে হবে।

তবে তারা পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়া বা মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠার বিভিন্ন কৌশল শিখে নিতে পারেন। এটা তাদের জন্য সহায়ক হবে।

৪. কথোপকথন শুরু করুন:
অপরিচিতদের কারো সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করার জন্য এক ধরণের মানসিক শক্তির প্রয়োজন।

কিন্তু এজন্য আপনাকে শুরুতেই গভীর কোন কথা বলতে হবে, এমনটা নয়।

যুক্তরাজ্যে কথোপকথন শুরুর সবচেয়ে জনপ্রিয় বিষয় হল আবহাওয়া। কেননা একেকজনের কাছে আবহাওয়ার ব্যাখ্যা একেক রকম।

আপনি দোকানে বা বাস স্টপে যে কারও সঙ্গে কথা শুরু করার জন্য বলতে পারেন যে আজকের আবহাওয়া বেশ "গরম / ঠাণ্ডা / আর্দ্র অথবা সুন্দর। তাই না?"

তবে এ উপায়টি কারো সঙ্গে গাঢ় বন্ধুত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কাজ করবে না।

এটা আপনাকে শুধুমাত্র অন্য মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে সাহায্য করবে।

প্রতিবার যখন আমরা কারো সঙ্গে কথা বলি, সেটা যদি অপ্রাসঙ্গিকও হয় তারপরও আমরা এটা বুঝতে পারি যে আমরা সবাই একই বিশ্বে পাশাপাশি থাকছি।

৫. আপনার অনুভূতি সম্পর্কে বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সাথে কথা বলুন:
এই সমাধানটির কথা সাধারণত তারাই বলেন যারা একাকীত্ব বোধ করেননা।

এতে বোঝা যায় যে, এ ধরণের সমাধান দেয়া যতোটা সহজ, বাস্তবে করা ততোটা সহজ না।

বিশেষ করে যারা তীব্র মাত্রায় একাকীত্বে ভোগে তাদের ক্ষেত্রে এই সমাধান মূল্যহীন।

এখনও এমন অনেকে আছেন যাদের একাকীত্বকে ঘিরে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে।

তবে ভাল খবর হল যে এখন অনেকেই নিজেদের একাকীত্বের বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী হচ্ছেন।

আপনার ব্যাপারে অন্যের প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে, এ নিয়ে আপনি হয়তো উদ্বিগ্ন হতে পারেন।

কিন্তু জরিপে দেখা গিয়েছে যে, মানুষ সাধারণত একাকীত্বে আক্রান্তদের ব্যাপারে খারাপ কিছু ভাবেন না।

যারা একাকী নন, তাদেরকেও একাকীত্ব থেকে বেরিয়ে আসার সমাধান খুঁজতে এই জরিপে সময় ব্যয় করতে দেখা গিয়েছে।

৬. প্রতিটি মানুষের ইতিবাচক দিকটি দেখার চেষ্টা করুন:
জরিপে দেখা গিয়েছে যে যারা একাকীত্ব ভোগেন, তাদের অন্যের প্রতি বিশ্বাসের ভিত্তিটা নড়বড়ে।

তাই এই সমাধানটির মূল বিষয়বস্তু হল, মানুষের ভেতর থেকে এমন ভাল কিছু খুঁজে বের করা যেন তার প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে।

আপনি যদি মনে করেন যে কেউ আপনাকে তিরস্কার করেছে বা কটু কথা বলেছে।

তাহলে ভেঙ্গে না পড়ে, ইতিবাচক-ভাবে ভাবুন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনার বিরুদ্ধে তার কথাগুলো সত্য কিনা। সে ব্যাপারে কোন প্রমাণ আছে কিনা।

না হলে ভিন্নভাবে ভাবুন। সম্ভবত তারা ব্যস্ত বা ক্লান্ত ছিল অথবা তাদের মন খারাপ বা মানসিক চাপের মধ্যে ছিল।

আপনার হয়তো এক্ষেত্রে কিছুই করার ছিল না।

৭. আপনি কেন একাকীত্ব বোধ করেন সে ব্যাপারে জানুন:
প্রতিটি মানুষের একাকীত্বের কারণ আলাদা। কেউ হয়তো শারীরিকভাবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করেন, আবার কেউ হয়তো শিকার হয়েছেন বৈষম্যের, কারও পক্ষে অন্যকে বিশ্বাস করা কঠিন, আবার অনেকেই জানেন না নিজের মন মানসিকতার সঙ্গে মিল আছে এমন মানুষ কোথায় পাবেন।

একাকীত্ব থেকে বেরিয়ে আসার সমাধান বের করার সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হল, কেন একাকীত্ব অনুভব করছেন সেটা আগে জানা।

এক্ষেত্রে আপনার সমাধান যদি কাজ না করে তাহলে অন্য কিছু চেষ্টা করুন।

৮. অপেক্ষা করুন:
আমরা জানি যে একাকীত্বের এই অনুভূতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অস্থায়ী, তাই এটি কিছু মানুষের ক্ষেত্রে হয়তো কাজ করবে।

তবে যারা দীর্ঘস্থায়ী একাকীত্বে ভুগছেন তাদের জন্য হয়তো অন্য কোন সমাধান কার্যকর হতে পারে।

যারা একাকীত্বে ভুগছেন তাদের বেশিরভাগই জানিয়েছেন যে একাকীত্বের এই অনুভূতি সময়ের সাথে চলে যায়।

তাই সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা তাদের ক্ষেত্রে কাজে দিয়েছে।

জরিপে দেখা গিয়েছে যে একাকীত্বের অনুভূতি সময়ের সাথে অদৃশ্য হয়ে যায়।

৯. প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয় কাটিয়ে উঠুন:
মানুষকে আপনার সাথে কোন কাজ করতে বলা, বা সাহায্য চাওয়া ভাল অভ্যাস।

প্রত্যেকেই এটা ভাবতে চান যে তাদের মতো হয়তো অন্যরাও কোন কাজের প্রতি সাড়া পেলে খুশি হয়।

কিন্তু তাদের থেকে কখনও কখনও উত্তর "না" আসতে পারে।

আপনাকে এই "না" শোনার ভয় কাটিয়ে উঠতে হবে।

কেউ যদি বলেন যে সেদিন তিনি ব্যস্ত আছেন, তাহলে আসলেই হয়তো তিনি ব্যস্ত আছেন।

তাই হুট করে এটা ভেবে বসবেন না যে তারা আপনাকে এড়িয়ে চলছেন। অন্যের "না"-কে স্বাভাবিকভাবে নিন।


আরো সংবাদ



premium cement