২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিয়ের আগে যে পরীা জরুরি

-

থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রোগ। এটা ধঁঃড়ংড়সধষ ৎবপবংংরাব ধরনের। বাবা-মা উভয়েই যদি এই রোগের বাহক হন, তাহলে গড়ে তাদের প্রতি চার সন্তানের একজন এই রোগের রোগী হতে পারে। বাহক কখনোই রোগে ভুগেন না। সাধারণ জীবনযাপন করেন। বাবা-মা খুব বেশি সৌভাগ্যবান হলে তারা উভয়ে বাহক হওয়া সত্ত্বেও সন্তানেরা স্বাভাবিক বা বাহক হতে পারে। আর বাহক বাবা-মা হতভাগা হলে এমনকি তাদের সব সন্তান কাকতালীয়ভাবে রোগী হতে পারে।
বাবা-মায়ের যেকোনো একজন বাহক হলে সন্তানেরা কখনোই রোগী হবে না। কিন্তু বাবা-মা উভয়ে বাহক হলে সব ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ। কারণ, সে েেত্র সন্তানদের কেউ কেউ রোগী হতে পারে। ধঁঃড়ংড়সধষ ৎবপবংংরাব ধরনের রোগ সাধারণত আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে হলে হয়। কিন্তু একটি সমাজে এর বাহকের সংখ্যা বেড়ে গেলে তখন আত্মীয়ের বাইরে বিয়ে হলেও এ রোগ হতে পারে। জানা যাচ্ছে, আমাদের দেশে এই রোগের বাহক এবং তার ফলে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে! ফলে এখন থেকেই সাবধানতা জরুরি।
যখন কেউ রোগী হন তখন সেই রোগটার নামÑ নবঃধ ঃযধষধংংধবসরধ সধলড়ৎ (বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর)। আর বাহক হলে সেই অবস্থাটার নামÑ নবঃধ ঃযধষধংংধবসরধ ঃৎধরঃ ড়ৎ নবঃধ ঃযধষধংংধবসরধ সরহড়ৎ (বিটা থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট বা বিটা থ্যালাসেমিয়া মাইনর)।
এ রোগ হলে রাগীকে সারা জীবন অন্যদের থেকে রক্ত গ্রহণ করে টিকে থাকতে হয়। এ ধরনের রোগীরা পিতা-মাতার বোঝা হয়ে গড়ে ২৫-৩০ বছর বেঁচে থাকে। আর রক্ত গ্রহণে থাকে নানাবিধ ঝামেলা। শরীরে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হৃদপিণ্ড লিভার গিরার রোগ হতে পারে। দাতার শরীর থেকে বিভিন্ন প্রাণঘাতী জীবাণু ঢুকতে পারে রোগীর শরীরে।
এ ছাড়াও নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের আছে আরো বহু জটিলতা। একদিকে থ্যালাসেমিয়া অন্য দিকে সেটার চিকিৎসার কারণে নতুন করে অন্য অঙ্গের রোগ! কত কষ্ট! কত কষ্টের জীবন! অথবা রোগীকে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করতে হয়। সেটা করতে গিয়েও থাকে নানাবিধ নতুন রোগের ঝুঁকি।
কিন্তু এসব ঝুঁকি এড়ানোর একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরেসিস করানো। মূল্য আনুমানিক এক হাজার টাকা। এ পরীা করে কেউ যদি দেখেন যে, তিনি একজন বাহক; তাহলে তিনি যেন কোনো অবস্থাতেই অন্য একজন বাহক বা রোগীকে বিয়ে না করেন। করলে কিন্তু সেই দুশ্চিন্তায় পেয়ে বসবে। সন্তানদের কেউ কেউ রোগী হতে পারে। সেটা হলে সারা জীবন সেই সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াতে হবে। অথবা বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের মতো জটিল চিকিৎসা করাতে হবে।
আর যারা রোগী, তারা তো ছোটকাল থেকেই রোগী। তারা তো বেঁচেই থাকে ২৫-৩০ বছর! সে কারণে তাদের বিয়ের প্রশ্নটি এমনিতেই অবাস্তব!
অনেকেই হয়তো বলবেন, ‘আমিতো বিয়ের আগে এই পরীা করাইনি, আমিতো ভালো আছি’। এর উত্তর হচ্ছেÑ সবার এমনটা হবে না। কিন্তু যিনি এটার শিকার হবেন, তিনি বুঝতে পারবেন কত ধানে কত চাল। রোগীর চাইতে বরং রোগীর বাবা-মা বেশি দুর্বিষহ জীবনযাপন করবেন। কারণ, তারা আক্রান্ত সন্তান নিয়ে বছরের পর বছর হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করবেন।
হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে সময় পার করবেন, নাকি কর্মস্থলে গিয়ে পেটের ভাত জোগাড় করবেন নাকি আক্রান্ত সন্তানের চিকিৎসার খরচ জোগাবেন? তিন দিকে টানাটানি!
আমি ২০০৯ সালে এই কারণে হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরেসিস করেছিলাম। ফলাফল স্বাভাবিক ছিল।
তাই বিয়ের আগে নিজের ভালোর জন্যই হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরেসিস এবং রক্তের গ্রুপ পরীা করুন এবং চিকিৎসককে তার ফলাফল দেখান।

লেখক : চিকিৎসক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

 


আরো সংবাদ



premium cement