২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুস্বাস্থ্যের জন্য খাবার

-

যুগ যুগ ধরে যখন মানুষ আমিষ খেয়ে আসছে, তখন এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। কী সেই কারণ? প্রাথমিকভাবে আমিষ খাওয়ার কারণ অবশ্যই স্বাদ। আমিষ খাওয়া শুরু হয়েছিল যে সময়ে সেই সময় অবশ্য মানুষ কেবল পেটের ক্ষুধা মেটাতেই শিকার করত এবং গোশত খেত; কিন্তু আগুন আবিষ্কারের পর কোনো সন্দেহ নেই গোশত খাওয়ার প্রধান কারণ স্বাদ। নানা উপায়, নানা কায়দায় খাওয়া হয় নানা ধরনের গোশত।
গোশত খাওয়ার প্রধান কারণ প্রোটিন। আমিষ তথা গরু, ভেড়া, ছাগল, হরিণ ও মাছ প্রভৃতি থেকে পাওয়া যায় প্রাণিজ প্রোটিন, যার প্রয়োজন কোষের পুষ্টির জন্য। আমরা জানি শিশু বড় হয়ে ওঠার সময় তো বটেই, বয়সীদেরও কোষ বিভাজন হচ্ছে অনবরত। আর এই কোষের পুষ্টির জন্য, কোষ তৈরির জন্য প্রয়োজন প্রোটিনের। বলে রাখা প্রয়োজন, যে প্রোটিনে অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে সেটি সম্পূর্ণ প্রোটিন। আর আমিষ প্রোটিনেই আছে অ্যামাইনো অ্যাসিড। আমিষের দ্বিতীয় গুণ হলো এর মধ্যে ভিটামিন বি-১২ এর উপস্থিতি। যার প্রয়োজন শরীরের মধ্যে যাওয়া খাদ্যসম্ভার থেকে লোহা টেনে নিয়ে হজম করানো। প্রোটিনের অর্থাৎ প্রাণিজ প্রোটিনের তৃতীয় গুণ হলো এটি শক্তি অর্থাৎ এনার্জি প্রদানকারী।
বাঙালিসহ পৃথিবীর বহু দেশের মানুষ মনে করে আমিষ, প্রোটিন ছাড়া শরীর সুস্থ রাখা অসম্ভব। আমাদের দেশে প্রচলিত আছে যারা বেশি মাথার কাজ করেন তাদের জন্য এই প্রাণিজ পুষ্টি অত্যন্ত জরুরি। প্রাণিজ প্রোটিন ছাড়া যে শরীর সুস্থ রাখা যায় এবং সহজেই তা সম্ভব তার প্রসঙ্গে এবার বলা যাক। নিরামিষ খেয়ে যে মাথা মোটাদের সংখ্যা বাড়ে না তার প্রমাণ পাওয়া যাবে ভারতে নিরামিষ খান এমন মানুষের এলাকায় গেলে। পরিসংখ্যান বলে সেখানে ঘাটতি পড়ে না ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বৈজ্ঞানিকের জোগান। মাথার অর্থাৎ মস্তিষ্কের পুষ্টির জন্য কখনোই আলাদা করে প্রাণিজ প্রোটিন প্রয়োজন হয় না। সুষম খাদ্য পেলে শরীরের অন্যান্য অংশের মতোই মস্তিষ্কের পুষ্টি সাধন হবে। আর শরীরের জন্য? সবাই অবশ্যই জানেন গরু, হাতি, গণ্ডার প্রভৃতি প্রাণীর শরীরের ওজন ওয়েইং স্কেলের বেশ ওপরের দিকেই যাবে। এই বিশাল বপুর জন্তুদের শরীর কিন্তু পুষ্ট ও সুস্থ থাকে কেবল নিরামিষ ভক্ষণেই।
এবার বলে নেয়া যাক প্রাণিজ প্রোটিনের বিকল্পগুলো। প্রাণিজ প্রোটিনে থাকা ভিটামিন বি-১২ অতি সহজেই পাবেন দুধে, যা সহজেই আপনার শরীরে থাকা লোহাকে হজম করিয়ে দেবে। আর এনার্জি? সহজেই পাওয়া যাবে কার্বোহাইড্রেট বা চিনি জাতীয় খাদ্যে। নিরামিষাশীদের সংখ্যা বাড়ছে। সারা পৃথিবী এখন ঝুঁকছে নিরামিষ খাদ্যের দিকে। ভাবলে অবাক হতে হয়; কিন্তু এটাই সত্যি, এটাই ঘটনা। প্রাণিজ প্রোটিন যারা গ্রহণ করেন না, তারা অনেক বেশি সুস্থ থাকেন। একটা ছোট্ট পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখুন, ব্রিটেনে একজন আমিষাশীর বছরে চিকিৎসার খরচ লাগে ৫৮.০৬২ পাউন্ড। অথচ একজন নিরামিষাশীর চিকিৎসার খরচ বছরে মাত্র ১২.৩৪০ পাউন্ড। এত গেল অর্থনৈতিক ফারাক, আর স্বাস্থ্য? যদি ১০০ জন আমিষাশী শারীরিক পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যান তা হলে তুলনায় মাত্র ২২ জন নিরামিষাশী শারীরিক সমস্যা নিয়ে হাসপাতালমুখী হন। বেশ কিছুদিন আগে সমগ্র ব্রিটেন এবং সেই সাথে প্রায় গোটা পৃথিবী কেঁপে উঠছিল একটি নামে ‘বোভাইন স্পঞ্জিফর্ম এনসেফালোপ্যাথি’। পুরো নামটা বোধহয় বোঝা গেল না, স্বাভাবিক। ‘ম্যাড কাউ ডিজিজ’ বললেই সবাই লাফিয়ে উঠবেন। এই ম্যাড কাউ ডিজিজের ফলে গত তিন বছরে ব্রিটেনে নিরামিষাশীদের সংখ্যা বেড়েছে ৩০ শতাংশ।
এবার একটু অন্যতম তথ্যে আসা যাক। আমিষাশীরা নিরামিষাশীদের থেকে বেশি অসুস্থ হন। কিন্তু তা কী ধরনের?
ষ যারা নিরামিষ খান তাদের রক্তে কোলস্টেরলের মাত্রা অনেক কম। আমিষাশীদের তুলনায় ২০% কম। ফলে নিরামিষ যারা খান তাদের হৃদরোগের আশঙ্কাও অনেক কম।
ষ গরু ও ভেড়ার গোশত এবং প্রচুর পরিমাণে মাছ খেলে পেটে ক্যান্সারের পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যায়। খাদ্যনালীতে ক্যান্সারের অন্যতম কারণ মাংসের চর্বি।
ষ আমিষাশী মহিলারা স্তনের ক্যান্সারে ভোগেন তুলনামূলক অনেক বেশি।
ষ জাপান, রাশিয়া, আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষরা মাছ খান বেশি। এদের পাকস্থলীতে ক্যান্সারও হয় বেশি।
ষ আমিষাশীদের পেটে পাথর জমে তুলনামূলক অনেক বেশি। এক হাজার জনের মধ্যে ২৫০ জনের পেটে পাথর জমে কেবল আমিষ খাওয়ার কারণে।
ষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তামাক, মদ ও মাদকের প্রভাবে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। এরপরই মৃত্যুর বড় কারণ গোশত।

লেখক : অধ্যাপিকা ও বিভাগীয় প্রধান, নিউরোমেডিসিন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ।


আরো সংবাদ



premium cement