২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আর্জেন্টিনার পরাজয়ের শোকে যুবকের আত্মহত্যা

হারের পর এক আর্জেন্টাইন সমর্থকের কান্না। - ছবি : সংগ্রহ

বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে হেরে গেছে আর্জেন্টিনা। এই পরাজয়ের শোক সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে এক আর্জেন্টিনা ভক্ত যুবক। ঘটনা ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরালা রাজ্যের। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, কেরালার কোত্তায়াম রাজ্যের বাসিন্দা দিনু অ্যালেক্স বৃহস্পতিবার আর্জেন্টিনার পরাজয়ের শোকে আত্মহত্যা করেছে। তারা সুইসাইড নোট থেকে এই ধারণা করা হচ্ছে।

কেরালায় ফুটবল খুবই জনপ্রিয় একটি খেলা। রাজ্যটিতে প্রচুর সমর্থক রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দল আর্জেন্টিনার। একই অঞ্চলের আরেক দল ব্রাজিলেওর রয়েছে প্রচুর সমর্থক। বিশ্বকাপের সময় বিশ্বের অনেক দেশের মতোই কেরালাও দুইভাগে ভাগ হয়ে যায় ফুটবল নিয়ে। আর এই উত্তেজনার কারণেই শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে প্রিয় দলের পরাজয়ের শোকে।

স্থানীয় পুলিশের ধারণা দিনু অ্যালেক্স শোক সইতে না পেরে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন। তার সন্ধানে নদীতে নেমেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা। আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের পর মালায়লাম ভাষায় তিনি যে চিরকুট লিখেছেন তার ভাষা এরকম- ‘যা দেখার ছিলো সব কিছুই দেখেছি। আর কী দেখার আছে? গভীরে ডুব দিতে যাচ্ছি আমি’। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে, দিনু আর্জেন্টিনার কট্টর সমর্থক। তার বাবা জানিয়েছেন, আর্জেন্টিনা হেরে গেলে বন্ধুরা তাকে লজ্জা দেবে এমন আশঙ্কা আগেই ছিলো দিনুর।

পুলিশ দিনু অ্যালেক্সের মোবাইল ফোন চেক করে সেখানে মেসির ছবি পেয়েছে। অবশ্য তিনি নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন এমন কোন প্রমাণ মিলছে না এখনো। তাই তিনি লজ্জার ভয়ে ওই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে পারেন এমন ভাবনাও করছে পুলিশ।

আরো পড়ুন : যে হিসাবে এখনো শেষ ষোলতে যেতে পারে মেসিরা
ক্রোয়েশিয়ার কাছে এমন লজ্জাজনকভাবে আজেন্টিনা হারতে পারে তা কি জয়ী দলও ভেবেছিল? বিশ্বকাপের রণভূমিতে গ্রুপ পর্বে ০-৩ গোলে মেসিরা শেষ কবে হেরেছিল আতস কাচ দিয়ে খুঁজতে হবে৷ তবে বৃহস্পতিবারের এই হার অনেক সমীকরণই পাল্টে দিলো৷ রাশিয়ার রণক্ষেত্রে শেষ ষোলোর রাস্তা এখন আর মেসিদের হাতে নেই৷ অন্যদের হাতে তাদের ভাগ্যের চাকা। এখনো তারা বিদায় না নিলেও অনেক হিসাব কষতে হবে তাদের।

শেষ ম্যাচে মেসিদের প্রতিপক্ষ নাইজেরিয়া৷ সেই ম্যাচ জিতলে লিও’দের পয়েন্ট দাঁড়াবে চার৷ রাশিয়ার বিশ্বযুদ্ধে গ্রুপ ডি’কে কেউ গ্রুপ অফ ডেথ বলে মনে না করলেও এই গ্রুপই এখন অঘটনের গ্রুপ৷

শুক্রবার ব্রাজিল-কোস্টারিকা ম্যাচের দিকে যেমন ফুটবল বিশ্বের নজর থাকবে, ঠিক তেমনিই নজরে থাকবে আইসল্যান্ড বনাম নাইজেরিয়া ম্যাচে৷ লো প্রোফাইল এই ম্যাচই এখন হাইপ্রোফাইল তকমা পেতে চলেছে৷

অঙ্ক ১ : নাইজেরিয়া আইসল্যান্ডকে হারিয়ে দিলে মেসিরা শেষ ম্যাচ জিতে পরের পর্বে যাওয়ার সুযোগ পাবে৷ সে ক্ষেত্রে আবার ক্রোয়েশিয়াকে শেষ ম্যাচে আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে জিততে হবে৷ এক্ষেত্রে গ্রুপের খেলা শেষে ক্রোয়েশিয়ার পয়েন্ট দাঁড়াবে ৯, একটি ড্র ও একটি ম্যাচ জিতলে(নাইজেরিয়া ম্যাচ জিতলে) মেসিদের পয়েন্ট দাঁড়াবে ৪৷ অন্যদিকে আইসল্যান্ড তাদের শেষ দুম্যাচ হারলে পয়েন্ট ১ আর নাইজেরিয়া ৩ পয়েন্ট৷ সেক্ষেত্রে অনায়াসেই পরের পর্বে যাবে ক্রোয়েশিয়া ও আর্জেন্টিনা৷

অঙ্ক ২ : অন্য অঙ্ক বলছে শুক্রবার নাইজেরিয়াকে আইসল্যান্ড হারালে ৪ পয়েন্ট পাবে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলা এই দেশ৷ সেক্ষেত্রে গ্রুপের শেষ ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ড্র করলেই শেষ ষোলোয় আইসল্যান্ড৷ নাইজেরিয়াকে হারিয়ে চার পয়েন্ট নিয়ে শেষ করলেও আর্জেন্টিনাকে গ্রুপ পর্বেই সফর শেষ করতে হবে৷

অঙ্ক ৩ : নাইজেরিয়াকে হারানোর পর ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আইসল্যান্ড শেষ ম্যাচে পা হরকালে তখন আর্জেন্টিনার সঙ্গে চার পয়েন্টে সমস্থানে পৌঁছবে (আর্জেন্টিনা নাইজেরিয়াকে হারালে তাদের পয়েন্ট হবে ৪)৷ সে ক্ষেত্রে গ্রুপ পর্ব শেষে গোল পার্থক্যে যে দল এগিয়ে থাকবে, তার ভাগ্যেই থাকবে শেষ ষোলোর টিকিট৷

অঙ্ক ৪ : নাইজেরিয়া ম্যাচ ড্র হলে অন্য সমীকরণ অপেক্ষা করছে আইসল্যান্ডের৷ গ্রুপ থেকে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ইতিমধ্যেই শেষ ষোলোতে পৌঁছে গেছে ক্রোয়েশিয়া৷ নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ড্র করলে আইসল্যান্ডের পয়েন্ট দাঁড়াবে ২, যেখানে ২ ম্যাচ পর মেসিরা এখন এক পয়েন্টে৷ আর আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে ড্র করায় নাইজেরিয়া পাবে এক পয়েন্ট৷ তখন গ্রুপের শেষ ম্যাচ ক্রোয়েশিয়া বনাম আইসল্যান্ডই নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়াবে৷ শেষ ষোলোতে জেতে গেলে সেই ম্যাচ জিততে হবে আইসল্যান্ডকে৷ নাইজেরিয়া ম্যাচ ড্রয়ের পর সেই ম্যাচও ড্র করলে আইসল্যান্ডকে তখন তিন পয়েন্ট নিয়ে মেসিদের পিছনে থাকতে হবে (মেসিরা নাইজেরিয়া ম্যাচ জিতলে পয়েন্ট দাঁড়াবে ৪)৷ এই অবস্থা হলে শেষ ষোলোতে যাবে মেসি-দিবালারা৷

ডি’গ্রুপই এখন গ্রুপ অফ ডেথ! সত্যিই অঘটনের নাম বিশ্বকাপ৷ কত ম্যাজিকই না লুকিয়ে রয়েছে অঙ্কের হিসেবে৷

 

 

 গ্যালারি যেন শোকের সাগর

শেষ বাঁশি বাজার সাথে সাথে উত্তেজিত কোচ হোর্হে সাম্পাওলি চলে গেলেন ডাগ আউট ছেড়ে। কি সব বলতে বলতে রাগে গড়গড় করে হাঁটতে লাগলেন ড্রেসিং রুমের দিকে। এক স্বেচ্ছাসেবক তার সামনে পড়লো, ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন আর্জেন্টাইন বস। খেলার দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই যখন আর্জেন্টিনা দল ছন্নছাড়া হয়ে যায়, তখন থেকেই দেখা গেছে উত্তেজিত সাম্পাওলি। ডাগআউটের এ মাথা থেকে ও মাথা শুধু হেঁটেছেন, আর শীর্ষদের ধমকের সুরে কি সব বলেছেন।

গ্যালারি আকাশী সাদা সমুদ্রের তখন অশ্রুর বান। হতাশ এক বালক কান্নায় ভেঙে লুটিয়ে পড়ল তার পাশে থাকা বয়স্ক লোকটির গায়ে। হয়তো বাবা বা অন্য কোন অভিভাবকের কাছে সান্ত্বনা পেতে চাইল, নয়তো লজ্জায় মুখ লুকালো। পুরো গ্যালারিতেই একই অবস্থা। যেখানেই ক্যারে ধরা হলো সবার মুখ মলিন। কেউ আফসোসের সুরে বিলাপ বকছেন, কেউ কাঁদছেন। এ যেন শোকের সাগর। হাজার হাজার আর্জেন্টাই সমর্থক যেন সবাই ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।

কে কাকে সান্ত্বনা দেবেন? সবারই তো একই কথা। কী হয়ে গেল? একি সত্যি? হয়তো কেউ গায়ে চিমটি কেটেও দেখে থাকবেন -এটা কি স্বপ্ন নাকি সতি? এই পরাজয়ের পর আর্জেন্টির বিশ্বকাপ ভাগ্যই ঝুলে গেল।

শেষ ম্যাচে জিতলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পারবে কিনা তার ঠিক নেই। অবশ্য পারফরম্যান্সের যা হাল, নাইজেরিয়ার বিপক্ষে জেতার কথাও জোর দিয়ে বলা যায় না।অবশ্য মাঠ ও গ্যালারির আরেক প্রান্তে তখন উৎসবের বান এসেছে। তবে দর্শক সংখ্যা ক্রোয়েশিয়ার অংশটা তত ভারী নয়, যতটা আর্জেন্টিনার। তাই পুরো স্টেডিয়ামকেই যেন ছুয়ে গেল শোকের আবহ।


আরো সংবাদ



premium cement