২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মেসিদের কোচ এমন কথা বলতে পারলেন?

মেসিদের কোচ এমন কথা বলতে পারলেন? - ছবি : সংগৃহীত

শুনেছেন কখনো প্রচণ্ড চাপের পরিস্থিতিতে ভেন্যু প্র্যাকটিসের সুযোগ হাতছাড়া করে বড় টিম বেসক্যাম্পে বসে থাকে? কোথাও দেখেছেন হাইপ্রোফাইল টিমের কোচ গ্রুপ পর্যায়ে একঘর সাংবাদিককে আগাম সাফাই দিতে পারেন, আমি টিমকে তৈরির সময় পাইনি?

যথেষ্ট আশ্চর্যজনক এমন ঘটনার সাক্ষী থাকল সাংবাদিকেরা বুধবার। বৃহস্পতিবার ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার ম্যাচ। এক সেন্টিমিটার গন্ডগোল হয়ে গেলে কে বলতে পারে, ভলগাতেই বিশ্বকাপ স্বপ্ন তলিয়ে যাবে না মেসির? তার আগের সন্ধ্যায় ভেন্যুতে প্র্যাকটিসের সুযোগ। কেউ হাতছাড়া করে? যতই বেসক্যাম্পে জোরদার অনুশীলন হোক, দিনের শেষে ব্রনিৎসি প্র্যাকটিস মাঠটা স্কুলমাঠ। ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ঘাসের চরিত্রই আলাদা। নইলে স্পেন থেকে ব্রাজিল, পর্তুগাল থেকে উরুগুয়ে, সবাই গিয়ে গিয়ে আগের রাত্তিরে বল মেরে আসত না। আর্জেন্টিনা সেটা করল না। তারা কি ভয় পেল বাইরের কোনো মাঠে মুভমেন্ট প্র্যাকটিস করলে ক্রোয়েশিয়ান গুপ্তচর সেটা ভিডিওয় তুলে নেবে? ফাঁস হয়ে যাবে? নইলে না করার কী ব্যাখ্যা?

জর্জ সাম্পাওলি একটা অদ্ভুত উত্তর দিলেন, “খেলব তো ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে। ছকটা তো মাঠভিত্তিক হবে না। টিম ভিত্তিক হবে।” এটা যদি সত্যি হতো, তা হলে ভেন্যু প্র্যাকটিসের জন্য টিমগুলো এত মাথা খারাপ করত না। নাকি এটা হলো সেই ফেজ যখন চাপের মুখে সব তালগোল পাকিয়ে সহজ সিদ্ধান্তও একেবারে ভুল হতে থাকে। দিনের সেরা আশ্চর্য অপেক্ষা করছিল রাতের দিকে। যখন সাম্পাওলি বললেন, “আমাদের টিমের জন্য নির্দিষ্ট স্ট্র্যাটেজি তৈরি করব কী করে? হাতে তো সময় পাইনি। মাত্র দ১০ মাস। তাও বেশিরভাগ প্লেয়ার খেলছিল তাদের ক্লাবের হয়ে।”

এটা প্রেস কনফারেন্সের হেডফোনে ইংরেজি অনূদিত হয়ে শোনার সময় নিজের কানকেও বিশ্বাস করানো কঠিন। সাম্পাওলি এর পরও যোগ করলেন, “তাছাড়া আর্জেন্টিনা টিমটা এতবার কোচ বদলেছে যে, নির্দিষ্ট স্ট্র্যাটেজি তৈরি হবে কী করে? এ একরকম খেলাচ্ছিল, ও আর একরকম। আমি তো সুযোগই পাইনি সেভাবে।”

বিস্ফারিত হয়ে যাওয়ার মতো বিবৃতি। একটা টিম যারা গতবারের রানার আপ এবং মেসি-সহ বিশ্বকাপ জয়ের প্রতিজ্ঞায় গত ১১ জুন রুশ দেশে পা দিয়েছিল, আজ মাত্র দশ দিনের মধ্যে তার কোচ এমন কথা কী করে বলতে পারে? এত মাস ধরে আর্জেন্টিনীয় মিডিয়ায় সাম্পাওলির ইন্টারভিউ বেরোচ্ছে। মনে পড়ছে না একটাতেও বিলাপ করেছেন বলে যে, ‘হ্যাঁ আমি তো টিম নিয়ে সময়ই পেলাম না।’ লিও মেসিকে হাতে নিয়ে কোচিং করছেন। এখনো ম্যাচ হারেননি। ৭৩ পার্সেন্ট বল পজেশন নিয়ে ১-১ ড্র করেছেন। সে তো এদিন মস্কোতে রোনালদোদের বল দখলে ছিল ৪৬ পার্সেন্ট। অজ্ঞাতকুলশীল মরক্কোর শতকরা ৫৪ শতাংশ। একটা ম্যাচে বিভ্রাট তো হতেই পারে। এবার ফুটবলের তথাকথিত আমেরিকা-রাশিয়া-চীনদের সবার হচ্ছে। কিন্তু আর্জেন্টাইন কোচ এখনই ঘোষণা করে দিচ্ছেন, টিম তৈরিতে সময় পাননি। তাহলে কি আর্জেন্টাইন সাংবাদিকদের অভিযোগটাই সত্যি যা বকলমে বোঝাতে চাইলেন সাম্পাওলি? ভাইরা দেখুন, গ্রুপ লিগ থেকে অতর্কিত চলে গেলে আমায় দোষ দেবেন না। এটা মেসির তৈরি টিম। আমি পুতুল ছিলাম মাত্র। তবে যা খবর প্রথম, একাদশে বদল আনতে পারেন কোচ।

এদিকে ক্রোয়েশিয়ার এক তরুণ ফ্যান, “আপনারা সারাক্ষণ মেসি মেসি করছেন কী? আজ নেটে দেখা গেল, আমাদের কোচকে মিডিয়া জিজ্ঞেস করেছে, মেসিকে কী করে আটকাবেন? আমার তো মনে হয় উলটে প্রশ্নটা হওয়া উচিত আর্জেন্টিনা ডিফেন্সকে একটা সিগারেট লাইটারের মতো পাতলা দেখিয়েছে, আপনাদের ফরোয়ার্ডদের কি ওটা ক্র্যাক করা সহজ হবে না?” অর্থাৎ মেসি নামক ম্যাজিক কিংবা আর্জেন্টাইন রক্ষণ যে একেবারেই ভয় পাচ্ছেন না ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকরা, তা বেশ স্পষ্ট।


আরো সংবাদ



premium cement