ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম নিয়ে হাইকোর্টের অসন্তোষ

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) যথাসময়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। এটা নিলে হয়তো পরিস্থিতি এমন হতো না। ডেঙ্গু এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যথাসময়ে যদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হতো তাহলে হয়তো এত লোককে মরতে হতো না। তাদের দক্ষতার অভাব রয়েছে। তারা (সিটি করপোরেশন) সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে জনগণের ওপর দায় চাপাচ্ছে। জনগণকে তাদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার করতে বলা হচ্ছে। জনগণকে সচেতন হতে হবে-এটা ঠিক। কিন্তু সব দায় জনগণের এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। ডেঙ্গু প্রতিরোধে দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে গতকাল এসব মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
গতকাল বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের নেয়া কার্যক্রম হাইকোর্টকে জানানোর পর আদালত এসব কথা বলেন। তবে এ বিষয়ে আদালত নতুন কোনো আদেশ দেননি।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কতজন মারা গেছে তা নিয়ে পত্রপত্রিকায় দুইরকম তথ্য দেখছি। সরকারি হিসাবে বলা হচ্ছে ৪৮ জন। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে বলা হচ্ছে ৭২ জন। এটা নিয়ে দুইরকম তথ্য কেন?
জবাবে ডিএজি বলেন, সরকারি হিসাবে ৪৮ জন। যারা ডেঙ্গুতে মারা গেছেন তাদের কারো কারো অন্য রোগ থাকতে পারে। কারো হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তাই এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়।
এ সময় আদালত বলেন, ধরে নিচ্ছি, ৪৮ জনই মারা গেছে। যারা মারা গেছে তাদের পরিবারের কী অবস্থা তা একবার ভেবে দেখুন। ডেঙ্গু এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যথাসময়ে যদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হতো তাহলে হয়তো এত লোককে মরতে হতো না। আদালত বলেন, শরীয়তপুর থেকে একজন ঢাকায় সেবা নিতে এসে মারা গেছে। সে যদি গ্রামে থাকত তাহলে হয়তো তাকে মরতে হতো না।
আদালত বলেন, কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বছরের পর বছর একই ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। অথচ ওই ওষুধে কাজ হচ্ছে না। আদালত বলেন, একটি ওষুধ বারবার ব্যবহার করলে তা সহনীয় হয়ে যায়। এটা বুঝতে হবে। দেখুন না, এখন এরোসল আর ঠিকমতো কাজ করে না। নিজেরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে জনগণের ওপর দায় চাপানো হচ্ছে। জনগণকে তাদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার করতে বলা হচ্ছে। সত্যিকারে যেখানে এডিস মশা থাকে সেখানে ওষুধ ছিটালেই তো হয়। জনগণকে সচেতন হতে হবেÑ এটা ঠিক। কিন্তু সব দায় জনগণেরÑ এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। আদালত আরো বলেন, ডেঙ্গু মশার লার্ভা ও ডিম থাকে পানিতে। উনারা সেটা পরিষ্কার না করে রাস্তায় ময়লা ফেলে পরিষ্কার করলেন। এটা নেহায়েতই হাস্যকর। এভাবে ডেঙ্গু মশা মারা যায় না।
এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করতে গেলে আদালত বলেন, আমরা তো কোনো রুল জারি করিনি। আরেকটি আদালত রুল দিয়েছেন। সেখানে রিপোর্ট দিন। এ সময় ডিএজি বলেন, এই আদালত মৌখিকভাবে এক আদেশে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ জানতে চেয়েছিলেন। তাই সরকার বিষয়টি জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সব সরকারি হাসপাতালে ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিদেশ থেকে ওষুধ আমদানিতে শুল্কমুক্ত করা হয়েছে। ১০টি সার্ভিলেন্স টিম গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৪০টি হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। যেসব হাসপাতাল সরকারি নির্দেশনা অমান্য করেছে তাদের আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত রয়েছে।