দেশে চলমান উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে কাজের গতি বাড়ানোর জন্য জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য উন্নয়নের গতিটা অব্যাহত রাখাটা জরুরি। আর এটা মাথায় রেখেই আপনাদের (জেলা প্রশাসক) কাজ করে যেতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল তার তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে পাঁচ দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০১৯ এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আপনাদের যে মেধা ও মনন দিয়ে এই দেশটাকে গড়ে তুলবেন। আর সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে যেন কর্মক্ষেত্রে আপনাদের দক্ষতার পরিচয় রাখতে পারেন সেটাই আমি চাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে এবং জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। তার সরকার একটি লক্ষ্য নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনাদের চাকরি তো দীর্ঘকালীন, আর আমাদের চাকরি স্বল্প মেয়াদের। পাঁচ বছরের জন্য আমরা নির্বাচিত হয়েছি।
কাজেই এই পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের দেশটাকে একটা জায়গায় নিয়ে আসতে চাই এবং সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা যে বাজেট দিয়েছি বা পরিকল্পনা নিয়েছি বা নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছি। আর সেই লক্ষ্য হলো বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে, যোগ করেন তিনি।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বক্তব্য রাখেন ও প্রধানমন্ত্রী মুখ্যসচিব মো: নজিবুর রহমান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসাইন, শেরপুর জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুব ও টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলামও বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সিনিয়র সচিব ও সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, অংশগ্রহণকারী বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সরকারি সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষ যাতে কোনোভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সে দিকে লক্ষ্য রাখাসহ প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে স্বীকৃত জেলা প্রশাসকদের করণীয় হিসেবে অনুষ্ঠানে ৩১ দফা নির্দেশনাও প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। এ বছরের ডিসি সম্মেলনে মোট ২৯টি অধিবেশন হবে এবং সম্মেলনে ৩৩৩টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।
আইনশৃঙ্খলা, ভূমি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জোরদার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দারিদ্র্য দূরীকরণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশনা প্রদানে বিভিন্ন অধিবেশনে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং সচিবরা অংশ নেবেন। কর্ম অধিবেশনগুলো সচিবালয়ে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
জেলা প্রশাসকরা সম্মেলন চলাকালে প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। পাঁচ দিনব্যাপী এই সম্মেলন শেষ হবে ১৮ জুলাই।
প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতি প্রতিরোধে জেলা প্রশাসকদের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জঙ্গিবাদকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা আখ্যায়িত করে সরকার প্রধান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও দেশের সর্বস্তরের মানুষকে সাথে নিয়ে সমন্বয় করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। একই সাথে সাধারণ মানুষ যেন হয়রানির স্বীকার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। শেখ হাসিনা বলেন, মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ মাদকসেবীরা একটা পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। তিনি বলেন, দুর্নীতি ও ঘুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। এ ধরনের অপরাধ দমন করতে হবে। ঘুষ যে নেবে ও দেবে দু’জনই সমান অপরাধী। বরং যে দেবে সে বেশি অপরাধী। এটা মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ডিসিরা স্বপ্রণোদিত হয়ে নানা সামাজিক উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন। যার সুফল সাধারণ জনগণ পেতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ভিক্ষুকমুক্ত করার জন্য খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রথমে উদ্যোগ নেয়া হয়। পরে এর সাথে তিনিও সম্পৃক্ত হন। তবে যারা পেশাদার ভিক্ষুক, তাদের এই পেশা থেকে সরানো কষ্টকর। অন্য দিকে নদীভাঙন কবলিত এলাকায় মানুষ নতুন করে গৃহহারা ও নিঃস্ব হচ্ছে। তিনি বলেন, যখনই এমন হবে তখনই তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। কেউ ভিক্ষা করতে পারবে না। আর সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের কর্মসূচির তালিকা প্রণয়নকালে প্রকৃত দুস্থরাই যেন সহায়তা পেতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনসংখ্যা বেশি হলেও তা বোঝা নয়। জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা গেলে তারাই হবে উন্নয়নের মূলশক্তি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। আমরা প্রবৃদ্ধি ৮.১ ভাগ অর্জন করে উন্নয়নের রোল মডেল হতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে সিউলের সহায়তা কামনা করেছন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করা রোহিঙ্গা সঙ্কটের একটি আশু ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য মিয়ানমারকে রাজি করাতে দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তা কামনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর কারণে এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশা করব রোহিঙ্গা সঙ্কটের একটি আশু ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ত হবে।’
জবাবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব, আমরা তা করব।’
গতকাল ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে কোনো ব্যতিক্রম ছাড়া সব বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার আহ্বান জানান। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে বাংলাদেশ পক্ষ ও কোরিয়ার পক্ষে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইওন নেতৃত্ব দেন।
প্রেসসচিব বলেন, ৪০ মিনিট স্থায়ী এ বৈঠকে আলোচনায় প্রধানত ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কারিগরি সহযোগিতার বিষয় উঠে আসে।
রোহিঙ্গা সঙ্কট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মানবিক সঙ্কট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে আমাদের দ্বিপক্ষীয় প্রচেষ্টার সম্পূরক হিসেবে অব্যাহত আন্তর্জাতিক চাপ ও সম্পৃক্ততা দরকার। শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার রাখাইন প্রদেশে একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হওয়ায় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা যাচ্ছে না। প্রেস সেক্রেটারি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী ব্যাপক বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে বাংলাদেশকে ‘সম্ভাবনাময় দেশ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
লি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) হিসাবে বাংলাদেশের জন্য এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা