৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন

সিআইএর মতে সৌদি যুবরাজের নির্দেশেই খাশোগি হত্যা

-

খাশোগি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর অনুসিদ্ধান্ত হলো, প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে ভিন্ন মতের এই সৌদি সাংবাদিককে ইস্তাম্বুল কনস্যুলেটে হত্যা করা হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। সিআইএর প্রকাশিত এ তদন্ত প্রতিবেদন সৌদি সরকারের দেয়া বিবৃতির সাথে সাংঘর্ষিক। এই বিবৃতিতে ওই হত্যাকাণ্ডে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান জড়িত নন বলে দাবি করেছিল সৌদি আরব। আলজাজিরা।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিআইএর তদন্ত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ আস্থা প্রকাশ করেছে। সিআইএ খাশোগি হত্যার সাথে মোহাম্মদ বিন সালমানের সংযোগ খুঁজে পেয়েছে। তদন্ত রিপোর্টটি প্রকাশ হওয়ার ফলে সৌদি আরবের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখার প্রেসিডেন্ট ট্রা¤েপর চেষ্টা বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শুক্রবার প্রকাশিত ওয়াশিংটন পোস্টের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোয়েন্দা বাহিনীর বিভিন্ন সোর্স ব্যবহার করে সিআইএ খাশোগি হত্যার তদন্তের শেষপর্যায়ে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ক্রাউন প্রিন্সের ভাই ও যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত সৌদি রাষ্ট্রদূত খালিদ বিন সালমানের সাথে খাশোগির ফোনালাপও রয়েছে। ওই ফোনালাপে খালিদ খাশোগিকে কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য ইস্তাম্বুল কনস্যুলেটে যেতে বলেছিলেন। তিনি এও বলেছিলেন যে, কনস্যুলেটে তার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে এ বিষয়টি নিশ্চিত নয় যে, খাশোগির হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে খালিদ অবহিত ছিলেন কি না। কিন্তু খাশোগিকে তিনি তার ভাই মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশেই কল করেছিলেন বলে জানা গেছে। আর খাশোগির মৃত্যুর দু’দিন পর তিনি রিয়াদ ফিরে যান এবং এরপর আর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেননি।
ওয়াশিংটন পোস্ট ও বার্তা সংস্থা এপি সিআইএ কর্মকর্তার নাম প্রকাশ না করে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। আর এ জন্য সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সংবাদটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে খালিদ বিন সালমান এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, দুঃখজনকভাবে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে আমাদের পুরো দায় সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়নি। এটি একটি বড় অভিযোগ আর সোর্সের নাম উল্লেখ না করে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা উচিত হয়নি।
এর আগে শুক্রবার আরেক টুইট বার্তায় তিনি জানান, খাশোগির সাথে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর এসএমএসের মাধ্যমে কথা হয়। আমি কখনোই খাসোগির সাথে ফোনকলে কথা বলিনি। আমি তাকে কোনো কারণে তুরস্কে যেতেও পরামর্শ দিইনি। আমি যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে এই অভিযোগের সাথে যুক্ত যেকোনো তথ্য প্রকাশের অনুরোধ করছি।
সিআইএর প্রতিবেদন সম্পর্কে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। হোয়াইট হাউজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এটি গোয়েন্দা সংস্থার বিষয়। এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সিআইএও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
পাপুয়া নিউগিনি সফরকালে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেনসকে এ বিষয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি শ্রেণিবদ্ধ তথ্যের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
তিনি বলেন, জামাল খাশোগি হত্যা একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ছিল। এটি মুক্ত গণমাধ্যমের জন্যও ছিল উদ্বেগজনক আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তি কারা তা উদঘাটন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
শুক্রবারের এই রিপোর্টে ওয়াশিংটন পোস্টে এই বিষয়ে জ্ঞাত ব্যক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, সিআইএ একাধিক সূত্র পরীক্ষা করার পর তারা তাদের সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। এই সূত্রের মধ্যে একটি ফোনকলও রয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি রাষ্ট্রদূত খালিদ বিন সালমানের সাথে ছিল।
এই ফোনকলে খালিদ খাশোগিকে বলেন, তিনি ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেট থেকে দলিলগুলো সংগ্রহ করতে পারেন। প্রিন্স খালিদ তাকে এই আশ্বাসও দিয়েছেন যে এতে তার নিরাপত্তার কোনো ক্ষতি হবে না।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, খালিদ খাশোগিকে হত্যা করা হবে এই সম্পর্কে জানতেন কি না তা পরিষ্কার নয়, তবে তিনি তার ভাইয়ের নির্দেশে এই ফোনটি করেছিলেন।
মিডিয়াতে বর্তমান তথ্য ফাঁস হওয়ার আগেই খাশোগি হত্যার সাথে সালমানের জড়িত থাকার বিষয়টি সিআইএ নিশ্চিত করেছিল।
বিন লাদেনের শীর্ষ সহযোগী সৌদ আল কাহতানিসহ ১৭টি সৌদি নাগরিককে খাশোগি হত্যার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের এক দিন পর সিআইএর মূল্যায়ন প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
অনেক মার্কিন রাজনীতিবিদ এই নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছেন কিন্তু তারা এমবিএস-এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবেন এমন পর্যায় পর্যন্ত এগোননি।
এদিকে ইস্তাম্বুল থেকে আল জাজিরার অ্যান্ড্রু সিমন্স বলেন, সিআইএর মূল্যায়নসম্পর্কিত রিপোর্টের ফলাফল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করেছে।
সিমন্স বলেন, এর পর আন্তর্জাতিক তদন্ত হতে পারে অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের যৌথ তদন্ত হতে পারে। তবে এই মামলা এখন নাটকীয়ভাবে এগিয়ে চলেছে। সিআইএর মূল্যায়নসম্পর্কিত খবরটি একটি বজ্রপাতের মতো যা সম্ভবত অনেক লোকের সন্দেহকে নিশ্চিত করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement