০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায় ২৯ অক্টোবর

‘যুক্তিতর্ক ছাড়া রায় ঘোষণার আদেশ বেআইনি’ ; ‘ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় এমন নজির নেই’ ;‘অনুপস্থিতিতে বিচারের প্রথম নজির’
-

কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায় আগামী ২৯ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে। রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডের পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মো: আখতারুজ্জামান গতকাল মঙ্গলবার মামলার বিচারকাজ সমাপ্ত ঘোষণা করে রায় প্রদানের এই তারিখ ধার্য করেন।
গতকাল আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল মামলার বিচারকাজ সমাপ্ত ঘোষণা করে রায়ের তারিখ ধার্য করার জন্য আবেদন করেন। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি গ্রহণ করে আদেশে বলেন, আসামিপক্ষের সময় আবেদন নামঞ্জুর করা হলো। আদালত বলেন, আড়াই বছর ধরে এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আছে। আড়াই বছর যুক্তিতর্কের জন্য রাখা হলেও আসামিপক্ষ শুনানি করেনি। রায় ঘোষণার তারিখ চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করা হলো। ২৯ অক্টোবর রায়ের তারিখ ধার্য করা হলো। ধার্য তারিখ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া জামিনে থাকবেন।
‘রায় ঘোষণার আদেশ বেআইনি’ : আদালতের আদেশের পর খালেদা জিয়ার দুই আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও সানাউল্লাহ মিয়া বলেছেন, আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ছাড়া রায় ঘোষণার তারিখ ঠিক করার আদেশ বেআইনি। তারা বলেন, অন্যায়ভাবে আদেশ দিয়ে এই আদালত নজির সৃষ্টি করছেন। তারা বলেন, আজ আমাদের সময় আবেদন নামঞ্জুর করে আদালত বলেছেন, এ মামলায় যুক্তিতর্ক আর তিনি শুনবেন না। এটা তিনি বেআইনি আদেশ দিয়েছেন, অন্যায় করেছেন। আমাদের বিচারব্যবস্থায় এমন কোনো নজির নেই। উনি অন্যায়ভাবে এই নজির তৈরি করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন।
এমন নজির নেই
আদেশের পর আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, আসামিপক্ষকে যুক্তিতর্কে শুনানির সুযোগ না দিয়ে রায় ঘোষণার তারিখ ঠিক করার এমন আদেশ আগে কখনো হয়নি। এটা বেআইনি আদেশ। অন্যায়ভাবে আদেশ দিয়ে এই আদালত নতুন নজির সৃষ্টি করছে। কারাগারে থাকা কোনো আসামির হাজিরা মওকুফ করা হয়, এর একমাত্র নজির বেগম খালেদা জিয়া। ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় এমন নজির নেই। তিনি বলেন, হাইকোর্ট রিভিশন আবেদন খারিজ করে যে আদেশ দিয়েছেন তাতেও বলেছেন, আমরা চাইব খালেদা জিয়া আদালতে এসে বিচার পর্যবেক্ষণ করবেন। এ থেকে বোঝা যায়, খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে হাইকোর্টের আদেশ প্রতিপালন করবেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও আদালত মামলার যুক্তিতর্ক না শুনে তাড়াহুড়া করে রায়ের তারিখ ধার্য করেছেন, যা সম্পূর্ণ অন্যায় আদেশ বলে আমরা মনে করি।
মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচারের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট রিভিশন আবেদন খারিজ করেছেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আমরা আপিল বিভাগে যাব। এ জন্য এক সপ্তাহের সময় চেয়ে ছিলাম। কিন্তু আদালত সময় আবেদন নামঞ্জুর করে রায়ের তারিখ ধার্য করেছেন। আড়াই বছরেও আসামিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেনি আদালতের আদেশে এমন বিষয় উল্লেখ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো মামলায় কোনো আসামি সময় নেন না। আদালত সময় দেন। আড়াই বছরের কথা আদালত উল্লেখ করেছেন। তা হলে বিচারক কেন সময় দিলেন? তিনি বলেন, ন্যায়বিচার হলে আসামিপক্ষকে যুক্তি উপস্থাপনের সময় দেয়া যুক্তিসঙ্গত হতো।
পিপি সাহেব জজ সাহেব এক ঘণ্টা সেশন করেন
আদালতের আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আদালতের বিভিন্ন তারিখে দেখেছেন এই কোর্টের লার্নেড পিপি সাহেব জজ সাহেব ওঠার আগে এক ঘণ্টা সেশন করেন। খাস কামরায় বসে পিপি সাহেবের সাথে তিনি যুক্তিতর্ক করেন। তারপর এসে তিনি আদেশ দেন, যাই দেন। আজ একইভাবে এসে দেখলাম পিপি (মোশাররফ হোসেন কাজল) সাহেবকে কপি দেবো (খালেদা জিয়ার সময় আবেদনের) কিন্তু তিনি নেই। জজ সাহেবের খাস কামরায় তিনি আলাপ-আলোচনান্তে আজকে কোর্টে এসে আমাদের উচ্চ আদালতে যাওয়ার যে আবেদন সেইটা তিনি নাকচ করলেন। নাকচ করে আগামী ২৯ অক্টোবর এই মামলার রায়ের জন্য রেখেছেন। খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রেখেছেন।
শুনানির শুরুতেই খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আদালতের কাছে সময় চেয়ে আবেদন করেন। তিনি আদালতকে বলেন, খালেদার অনুপস্থিতিতে বিচার চলার আদেশের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন। উচ্চ আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। ওই আদেশ এখনো হাতে পাননি। এই আদেশের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন। এ জন্য সংক্ষিপ্ত সময় প্রয়োজন। আমাদের এক সপ্তাহ সময় দেন।
অনুপস্থিতিতে বিচারের প্রথম নজির : শুনানিতে খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া অতীতে আদালতে এসেছেন। এই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি আদালতে থাকতে চান। তিনি আদালতে আসতে চান। কিন্তু তিনি অসুস্থ, এ জন্য আদালতে আসতে পারছেন না। এখন তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি অসুস্থ- এটা স্বীকৃত। তার অনুপস্থিতিতে বিচারের এই প্রথম নজির সৃষ্টি করেছেন। ভবিষ্যতের একটা ব্যবস্থা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশ প্রয়োজন। উচ্চ আদালতের (হাইকোর্ট) আদেশই চূড়ান্ত নয়। আপিল বিভাগের আদেশই চূড়ান্ত। আমাদের আবেদন খালেদা জিয়া অসুস্থ, সুস্থ হয়ে আদালতে আসবেন। আমরা সময় চাচ্ছি। সুস্থ হলে তিনি আদালতে আসবেন।
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন আদালতকে বলেন, উচ্চ আদালত খালেদা জিয়ার আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন। এই আদালতকে বিচার চালাতে নির্দেশ দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের আদেশ পাওয়ার পর সময় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই মামলার বিচারকাজ সমাপ্ত ঘোষণা করে রায়ের তারিখ ধার্য করেন।
পিপির বক্তব্য : আদেশের পর পিপি অভিযোগ করেন, আসামিপক্ষ সময় নিয়েছে কিন্তু জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করলেও আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেননি। এই মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি কী জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ থেকে সাত বছর কারাদণ্ড।
আদালতে আসামি মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানি করেন আইনজীবী আখতারুজ্জামান।
আদালতে যা বলেছিলেন খালেদা জিয়া : গত ৫ সেপ্টেম্বর বেগম খালেদা জিয়া তার গুরুতর অসুস্থতার কথা তুলে ধরে আদালতে বলেছিলেন, আমার শারীরিক অবস্থা ভালো না। আমার ফুলা পায়ে পুঁজ এসেছে। আপনাদের যা মনে চায় যত দিন ইচ্ছা সাজা দিতে পারেন, আমি অসুস্থ, এ অবস্থায় বারবার আসতে পারব না। ন্যায়বিচার এখানে হবে না। এখানে আমি ন্যায়বিচার পাব না। সরকারের ইচ্ছায় এখানে বিচার হচ্ছে। আমার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। বিচারককে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আমার শারীরিক অবস্থা ভালো না। আমার পা ফুলে গেছে। ডাক্তার বলেছে, পা ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। আমার বাম হাত প্যারালাইজড, বাম পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা। হাঁটতে পারি না। এভাবে বসে থাকলে আমার পা ফুলে যাবে। ডাক্তারের রিপোর্ট দেখলে আপনারা বুঝবেন আমি কতটা অসুস্থ। ডাক্তার আমাকে পা সব সময় উঁচু করে রাখতে বলেছেন। আমাকে জোর করে এখানে আনা হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলার যুক্তি উপস্থাপন সমাপ্ত করে রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করার বিষয়ে আদেশের জন্য ১৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেন আদালত। তবে ১৪ অক্টোবর খালেদা জিয়ার পক্ষে সময় আবেদনে ১৬ অক্টোবর আদেশের জন্য রাখা হয়। অপর দিকে খালেদা জিয়ার জামিন কেন বাতিল করা হবে না সে বিষয়ে ধার্য তারিখে আদেশের জন্য রাখা হয়।
খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচারের আদেশ : গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো: আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচার চলবে বলে আদেশ দেন। আদেশে আদালত বলেছিলেন, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে খালেদা জিয়ার হাজিরা ডিসপেনসড উইথ (আদালতে হাজিরা মওকুফ) করা হলো। তার অনুপস্থিতিতে বিচার হবে। আইনজীবীরা ইচ্ছা করলে তার পক্ষে হাজিরা দিতে পারবেন।
২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ বিচারক বাসুদেব রায় এ মামলার অভিযোগ গঠন করেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শুরু হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে এখনো যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়নি।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আসামি চারজন। খালেদা জিয়া ছাড়া অপর তিন আসামি হলেনÑ তার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।


আরো সংবাদ



premium cement
পিরোজপুরের ৩ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিজয়ীরা হলেন যারা গাজীপুরে কলেজছাত্র খুনের ঘটনায় মূল হোতাসহ গ্রেফতার ২ এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকায় ওয়ার্ল্ড হ্যান্ড হাইজিন ডে পালিত সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে টিকটকের মামলা ফোনে লাদেনের ছবি, আইএসআইএসের পতাকা থাকা মানেই উগ্রবাদী নয় : দিল্লির হাইকোর্ট কুমিল্লার ৩ উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টের মালিক সোহেল গ্রেফতার কাউখালীতে চেয়ারম্যান সামশু, ভাইস চেয়ারম্যান নিংবাইউ বান্দরবান সদরে বিএনপি ঘরানার আব্দুল কুদ্দুস চেয়ারম্যান নির্বাচিত বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে চায় তুরস্ক কুষ্টিয়ায় আতাউর ও খোকসায় মাসুম নির্বাচিত

সকল