মাতৃত্বের টান
- নয়াদিগন্ত অনলাইন
- ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:৪১, আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:২৩
নাড়িছেড়া ধনের এমন খবর জানলে স্থির থাকতে পারেন না অনেকেই। কিন্তু তারপরও তারা ধৈর্য ধরেছিলেন। সব কিছু জানার পরও তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এ পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখুক তাদের অনাগত সন্তান, হোক না সেটি মাত্র আধা ঘণ্টার জন্য।
গর্ভধারণের ১৮ সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসির ক্রিস্টা ডেভিস ও তার প্রেমিক ডেরেক লভেটকে ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন যে সন্তানের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তারা, জন্মের পরে বড়জোর আধা ঘণ্টা বাঁচতে পারে সে।
চিকিৎসকেরা তাদের জানান, বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ক্রিস্টার গর্ভস্থ সন্তানের মস্তিষ্ক ও করোটির কিছুটা অংশ তৈরি হবে না কখনোই। এ অবস্থায় তারা সময়ের আগেই সন্তান প্রসব করাতে পারেন। কারণ ঠিক সময়ে জন্ম নিলেও নাড়ি কাটার পরে শিশুটি এক ঘণ্টাও বাঁচবে না।
এ অবস্থায়ও ক্রিস্টা ও লভেট ঠিক করেন, ‘যদি মেয়েকে বাড়ি না-ও নিয়ে যেতে পারি, ওকে পৃথিবীতে আনবই। মা-বাবা হিসেবে আমাদের জন্য খুব কঠিন ছিল সেই সিদ্ধান্ত।’
গত বড়দিনের সময়ে জন্মায় রায়েলি। বাঁচবে না, এমনটা ধরে নিয়েই নাড়ি কাটার আগে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে, সবাইকে অবাক করে একাই শ্বাস নিতে থাকে সে। আস্তে আস্তে খাবার খেতে শুরু করে ছয় ঘণ্টা পর থেকে।
ক্রিস্টা বলেন, ‘শারীরিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ও লড়ে গেছে পুরোপুরি। আমরা ওর সঙ্গে এক সপ্তাহ কাটানোর সুযোগ পেয়েছি। এটাই আমাদের জন্য অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা।’ ডেরেক বলেন, ‘সব সময়ে ভেবেছি, কান্নার জন্য পরে অনেক সময় পাব। ও যতক্ষণ রয়েছে ওর সঙ্গে ভাল করে সময় কাটাব।’
তাই এত অসুস্থ হওয়ার পরও তাকে শিশুবিভাগ বা আইসিইউতে না রেখে সাতদিন তার বাবা-মা’র সঙ্গেই রাখা হয়েছিল। নামও রাখা হয়েছিল, রায়েলি। ক্রিস্টা বলেন, ‘ওই সময়টা ও শুধু হাসত। এত মিষ্টি, এত কিউট একটা বাচ্চা।
সে অনুভূতি ভোলার নয়। ওর দিকে তাকিয়ে আমি ভেবেছি, কোনে দিনও কাউকে এতটা ভালবাসিনি। সব সময়ে ভাবতাম, একটা সেকেন্ডও যাতে নষ্ট না হয়। যখন ঘুমোতাম ও আমার বুকের উপরে ঘুমোতো।’
জন্মের পরে এই ধরনের শিশুর বাঁচার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মুখ উপরের দিকে করে জন্মানোয় বেঁচে যায় রায়েলি।
কিন্তু দিন দিন ক্রমশ রায়েলির রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে। তারপরও সে ছিল হাসিখুশি। কেবল শেষ দিন কেঁদেছিল। ও যে কাঁদতে পারে ওই দিনই জানলাম’’, বলেছেন ক্রিস্টা। রায়েলি যখন মারা যায়, তখনও তাকে আঁকড়ে ধরেছিলেন মা।
সূত্র : মেট্রো নিউজ