এখনই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি
- ২৪ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
প্রায় এক দশক ধরে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি সন্তোষজনক নয়। অনেকে মনে করেন, এ ক্ষেত্রে ধস নেমেছে। ১০ বছরের জনশক্তি রফতানির পরিসংখ্যান দেখলে অভিযোগ অস্বীকার করা যায় না। ২০০৭-০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যে ধসের শুরু তা পরে কখনোই পুরো কাটিয়ে ওঠা যায়নি। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধ রয়েছে এক বছর ধরে। অনেক দেনদরবার করেও সে বাজার খোলা যায়নি। এখনো আলাপ-আলোচনা চলছে। সম্প্রতি যোগ হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে শ্রমিকদের বিপুল সংখ্যায় ফিরে আসার প্রবণতা। বেশির ভাগ শ্রমিক ফিরে আসছেন নির্যাতনের শিকার হয়ে। কোনো কোনো দেশ শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দিচ্ছে।
নয়া দিগন্তে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, আমিরাত, কাতার, ওমান, বাহরাইন, জর্দান, লেবানন ছাড়াও আসিয়ানভুক্ত মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিদিন দেশে ফেরত আসছেন শ্রমিকরা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে আমাদের দূতাবাসের আউটপাস নিয়ে যারা ফিরছেন বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের প্রত্যেকের জবানবন্দী রেকর্ড করছে। এতে জানা গেছে, কর্মীরা চরম নির্যাতনের শিকার হয়েই ফিরছেন। গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এভাবে ফিরেছেন প্রায় ৩৬ হাজার শ্রমিক (নারী-পুরুষ)। সবচেয়ে বেশি এসেছেন সেপ্টেম্বরে। এই মাসে আট হাজার ৭২৫ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক দেশে ফিরেছেন। জানুয়ারি মাসে চার হাজার ২৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে তিন হাজার ৩৭২ জন, মার্চে তিন হাজার ৮৭৫ জন, এপ্রিলে তিন হাজার ৪৬ জন, মে মাসে তিন হাজার ৪৭৫ জন, জুনে এক হাজার ৭৭৮ জন, জুলাইয়ে তিন হাজার ৮৮০ জন। আর চলতি বছরের ৯ মাসে ৩৫ হাজার ৮০৯ শ্রমিক আউটপাসে দেশে ফিরেছেন।
এই পরিস্থিতি শুধু উদ্বেগজনক নয় রীতিমতো বিপর্যয়কর। কাজের সন্ধানে যারা বিদেশে যান, তারা শখ করে যান না। দুটো পয়সা রোজগার করে নিজের ও পরিবারের মুখে সামান্য হাসি ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় তারা বিদেশে গেছেন। অনেকে নিজের শেষ সম্বল বিক্রি করেও বিদেশে যাওয়ার ঝুঁকি নেন। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। জনশক্তি রফতানির বাজার সঙ্কুচিত হয়ে আসাই এর একমাত্র কারণ নয়, বরং এ ক্ষেত্রে আমাদের রফতানি নীতির দুর্বলতাও দায়ী। মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার বন্ধের কারণ আমরা সবাই জানি। জনশক্তি রফতানিতে কিছু স্বার্থান্বেষী সিন্ডিকেট, শ্রমিকদের কাছ থেকে খুব বেশি অর্থ আদায় এবং দুর্নীতি এ জন্য দায়ী।
বাংলাদেশীরা যে দালালদের মাধ্যমে ছোট ছোট নৌকায় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেন, সেটিও আমাদের জনশক্তি রফতানি নীতির দুর্বলতাই প্রমাণ করে। বৈধ পথে, ন্যূনতম খরচে অভিবাসনের সুযোগ পেলে মানুষ নিশ্চয়ই জীবনের ঝুঁকি নিত না। বিদেশে গিয়ে চাকরি নামের সোনার হরিণ ধরতে অসাধু দালালদের খপ্পরে পড়ে মৃত্যুপথের যাত্রীও হতো না। আমাদের বহু দূতাবাস ও হাইকমিশনে শ্রম বিভাগ আছে। সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশীদের ভালো-মন্দ দেখা এবং এ দেশ থেকে শ্রমিক রফতানির সুযোগ অনুসন্ধান করে তা কাজে লাগানো তাদের দায়িত্ব। কিন্তু এ দায়িত্ব কোন দূতাবাস-হাইকমিশন কতটা পালন করতে পারছে, তা খতিয়ে দেখা হয় বলে মনে হয় না। এই ব্যর্থতাও জনশক্তি রফতানিতে ধস, শ্রমিকদের নির্যাতিত হওয়া, কপর্দকহীন নিঃস্ব হয়ে ফিরে আসার অন্যতম কারণ। শ্রমিকদের অনেকেই নির্যাতনের বিচার দাবি ছাড়াও ক্ষতিপূরণ পেতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে লিখিতভাবে অভিযোগ করছেন। কিন্তু বেশির ভাগই ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। রিক্রুটিং এজেন্সির কিছু মালিকের সাথেই ব্যুরোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দহরম-মহরম বেশি। সে কারণে প্রতারিত-নির্যাতিত শ্রমিকরা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত।
আমাদের মনে হয়, অবিলম্বে জনশক্তি রফতানির পুরো প্রক্রিয়াটি নতুন করে ঢেলে সাজানো দরকার। দরকার কূটনৈতিক প্রয়াস জোরদার করা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এ ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির পুরোপুরি অবসান ঘটানো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা