৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ঈদের ১২ দিনে নিহত ২২৪

সড়ক-অব্যবস্থাপনাই দায়ী

-

 

আমাদের দেশে প্রতি বছর ঈদ উৎসব উদযাপন করতে লাখো মানুষ গ্রামের বাড়ি জান। ঈদে আপনজনের সাথে দেখা করার সুযোগ পারতপক্ষে হাতছাড়া করতে চান না কেউ। কিন্তু ঈদযাত্রা এবং ঈদ-উত্তর কর্মক্ষেত্রে ফেরা কোনো সময়ই নির্বিঘœ হয় না। দুই ঈদের আগে-পরে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করতে হয় বলে সড়ক, রেল ও নৌপথে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি যানবাহন চলাচল করে। বিশেষ করে এ সময় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বাড়তি আয়ের উদগ্র বাসনায় সড়কে বিপুলসংখ্যক আনফিট গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। ফলে সড়ক যোগাযোগে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ কারণে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে প্রতি ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। অথচ সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব যাদের, তারা নিজেদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করছেন, তা পর্যালোচনা করে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। এতে করে ঈদের আগে-পরে সড়কে বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। কর্তৃপক্ষ সতর্ক ও দায়িত্ব সচেতন হলে এটা এড়ানো সম্ভব।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে গত ঈদুল ফিতর পর্যন্ত সাতটি ঈদযাত্রায় এক হাজার ৬১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে দেশের সড়কে। প্রতি ঈদে গড়ে ২৩০ জনের প্রাণ গেছে। ‘যাত্রী কল্যাণ সমিতির’ হিসাবে, এবারের ঈদের আগে-পরে ১২ দিনে সড়কে ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। এবারের ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ২০৩টি দুর্ঘটনার ২৭ শতাংশ ঘটেছে মোটরসাইকেলের কারণে। প্রাণ গেছে ৭৭ জনের। মোট প্রাণহানির ৩৪ শতাংশই হয়েছে এ কারণে।
প্রতি ঈদের মতো এবারো সরকারের তরফ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা ঠেকাতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল ‘ঈদের সময় জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে কিছুতেই ধীরগতির ও নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হবে না।’ আনফিট ও বেপরোয়া গাড়ি চলাচল বন্ধে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্তও ছিল। কিন্তু সড়ক-মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে সরকারের যেসব সিদ্ধান্ত ছিল, তা মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন না হওয়ায় এবারের ঈদযাত্রা ছিল ভয়ঙ্কর। এ ঈদে দীর্ঘ ছুটি থাকার পরও শুধু পরিকল্পনার অভাবে সড়কে অসংখ্য মানুষের ভোগান্তি হয়েছে। পরিবহন খাতে চালকসহ শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের পরও ঈদযাত্রায় ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য প্রতি বছর লক্ষ করা যায়। কর্মঘণ্টা ও বেতন নির্ধারিত না থাকায় এ অবস্থায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
আমরা মনে করি, পরিবহন শ্রমিকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা যতদিন পর্যন্ত নির্ধারিত না হবে, তত দিন যাত্রীদের ভোগান্তি বন্ধ হবে না। কারণ, কর্মঘণ্টা আর বেতন ঠিক না থাকায় ঈদের সময় বেশি আয়ের আশায় চালকেরা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। তদুপরি, মালিকেরাও তাগাদা দিতে থাকেন। ফলে চালকেরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে গাড়ি চালান। এতে দুর্ঘটনা বেড়ে যায়।
ঈদের আগে এবার সড়ক দুর্ঘটনা মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে ছিল, যা ঈদ-উত্তরকালে বেড়েছে। কারণ বাসচালক ও যানবাহনগুলোকে বিরতি দেয়া হয়নি। ঈদের আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রশাসন মাঠে ছিল। তবে ঈদের পরদিনই এর উল্টো চিত্র দেখা যায়। সড়কে নজরদারি করতে কেউ ছিলেন না। এতে দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ও হতাহতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
অতিরিক্ত ভাড়া-নৈরাজ্য বন্ধ, চালকের প্রশিক্ষণ, মহাসড়কগুলোতে মোটরসাইকেল চালানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা, ঈদের পরও নজরদারি বহাল রাখা, চালক-শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ও কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করা এবং জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলকে কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এ ছাড়া গত বছর পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন দ্রুত কার্যকর করা হলে দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও কমে আসবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement