২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
টাকায় মিলে সব সনদ

সাঁড়াশি অভিযান জরুরি

-

রাজধানীতে জাল সনদের রমরমা ব্যবসা করছে একটি চক্র। স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা না করেও অনেকে সংগ্রহ করছেন এসব ভুয়া ‘শিক্ষাগত সনদ’। মেডিক্যাল, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাল সনদ পাওয়া যায় এখানে। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও অনেকে এখান থেকে নকল শিক্ষাগত সনদ সংগ্রহ করে থাকেন। এটা দিয়ে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভালো চাকরি কেউ কেউ বাগিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, স্মাটকার্ড, ট্রেড লাইসেন্স, ম্যারেজ সার্টিফিকেট, নাগরিকত্ব সনদও পাওয়া যায় অবাধে। শুধু টাকা দিলেই মিলে যেকোনো ধরনের সনদ। চাওয়া মাত্র সনদ সরবরাহ করা হয় এক দিনের মধ্যে। নীলক্ষেতের তিনটি মার্কেটে ব্যাপকভাবে, নকল সার্টিফিকেট প্রস্তুত করা হয়।
একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বোর্ডের প্রতিটি সনদ ১৫০০ টাকা, ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ১২০০ টাকা, এনআইডি ৮০০ টাকা, স্মার্ট এনআইডি ১২০০ টাকা, ট্রেড লাইসেন্স ৮০০ টাকা, ম্যারেজ সার্টিফিকেট ৩০০ টাকা, নাগরিকত্ব সনদ ৩০০ টাকা, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ৫০০ টাকা এবং নম্বরপত্র ১০০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
এসবের জন্য সরাসরি গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে রয়েছে দালাল চক্র। দালালেরা প্রথম ধাপে গ্রাহক সংগ্রহ করে। দ্বিতীয় ধাপে আসল সার্টিফিকেটের ফরমেট ও বিশেষ ধরনের কাগজ সংগ্রহ এবং তৃতীয় ধাপের কাজ হলো আসলের মতো কম্পিউটারে সনদ তৈরি করা। সার্টিফিকেট তৈরির জন্য আছে বিশেষ সফটওয়্যার। এটি ব্যবহার করলে সনদের ওপর কোনো সিল ও স্বাক্ষর থাকলে তা নকল না আসল, বোঝার সুযোগ নেই। কাগজের রঙের সাথে মিল রেখে সনদ তৈরি করা হয়। একইভাবে তৈরি করা হয় জাল নম্বরপত্র। স্বল্পশিক্ষিত ও বিদেশমুখী যুবকেরা জাল শিক্ষা সনদ সংগ্রহে বেশি আগ্রহী। অনেকে সনদ হারিয়ে এবং সনদের ফটোকপি দিয়ে ‘সনদ’ বানিয়ে নেন।
বিভিন্ন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে যোগদানের শর্ত থাকে সনদ জমা দেয়ার। এ জন্য নকল সনদ প্রস্তুত করান একশ্রেণীর চাকরিজীবী। পাত্র বা পাত্রীপক্ষের শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি দেখাতেও সনদ বানানো হয়। গত কয়েক বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শত শত ভুয়া সনদ শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে ব্যাংকার, সরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, বিদেশে চাকরিজীবী ও আইনজীবী রয়েছেন।
দেশের বেসরকারি উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেকগুলোর বিরুদ্ধে সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। ১০৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগের লেখাপড়ার মান আজো নিচু। সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী ডিগ্রি নিয়ে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় শামিল হচ্ছেন। কিন্তু তাদের বেশির ভাগের কর্মসংস্থানের কোনো সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বেকার দিন দিন বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে যদি ভুয়া সনদধারীরা শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার পরও চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়, তা মেনে নেয়া যায় না।
ভুয়া সনদ প্রস্তুতকারীদের দমনে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে জরুরি ভিত্তিতে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে, যাতে এই চক্রের সব ধরনের তৎপরতা স্থায়ীভাবেই বন্ধ হয়। একই সাথে সবার শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদ অনলাইনে দেয়া হলে আসল-নকল শনাক্ত করা সহজ হবে। এতে নকল সনদ তৈরির প্রবণতা কমবে বলে আমরা মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement