রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ কার্যকর কোনো কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করতে পারেনি দেড় বছরেও। ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা শরণার্থীর যে ঢল নেমেছিল, তার সমাধানের কোনো সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না। পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, যে তিনটি দেশকে স্বমতে আনতে পারলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইতিবাচক অগ্রগতি হতে পারে বলে ধারণা করা হয় সেই চীন, রাশিয়া ও ভারতের এ ইস্যুতে অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
রোববার নয়া দিগন্তে প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে অবস্থান পাল্টায়নি জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতাধর সদস্যরাষ্ট্র চীন ও রাশিয়া। মিয়ানমারের জোরালো সমর্থক এ দুই পরাশক্তি রোহিঙ্গা শরণার্থীসমস্যা নিরসনে বাংলাদেশকে ‘দ্বিপক্ষীয়ভাবে’ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের স্বার্থেই ইস্যুটির আন্তর্জাতিকীকরণ চায় না বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র চীন ও রাশিয়া।
এ দিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমারের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেও কোনো সুফল পাচ্ছে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কোনো প্রস্তাবেই কার্যকর কোনো সাড়া দিচ্ছে না প্রতিবেশী দেশটি, বরং নানা অজুহাতে ইস্যুটিকে ঝুলিয়ে রেখে কালক্ষেপণ করছে দেশটি।
আন্তর্জাতিক বিশ্বে মিয়ানমারের ভাবমূর্তি কখনোই বাংলাদেশের চেয়ে উজ্জ্বল ছিল না কিংবা দেশটি উদার বন্ধুভাবাপন্ন ছিল না; বরং দীর্ঘকাল ধরে দেশটি এক রকম একঘরে হয়েই ছিল আন্তর্জাতিকভাবে। দীর্ঘকাল সামরিক শাসনাধীন মিয়ানমার পাশ্চাত্যের সব রকম সাহায্য-সহযোগিতার বাইরেই থেকেছে বহু বছর যাবৎ। তার পরও দেশটির প্রতি চীন-রাশিয়া কিংবা ভারতের এত দরদ কেন, এর কারণ বাংলাদেশের নেতৃত্বকে উদঘাটন করতে হবে।
অনেকে বলবেন, মিয়ানমার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ তৈরি করে ওইসব দেশের বিপুল বিনিয়োগ আকৃষ্ট করছে। চীনের জন্য তারা এমন সব সুবিধা দিচ্ছে, যা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চীনের জন্য বড় ধরনের কৌশলগত অবস্থান তৈরি করতে সহায়ক হবে। এসব বিষয়ে রাশিয়া চীনের সহযোগী হিসেবে ভূমিকা রাখছে। কিন্তু বাংলাদেশেও চীনের অর্থনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কম নয়। রাশিয়াকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ের বৃহত্তম অর্থনৈতিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে। ১৬ কোটি মানুষের এ দেশে চীনের রাজনৈতিক প্রভাব বলয় সৃষ্টি হওয়ার চেয়ে বড় প্রাপ্তি তাদের জন্য আর কী হতে পারে?
বলা হয়, বিশ্বে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মিত্র হচ্ছে ভারত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেন, ‘ভারতকে যা দিয়েছি সেটা তারা আজীবন মনে রাখবে।’ এরপরও রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতকে কিছুতেই পাশে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। মনে হওয়া স্বাভাবিক, বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় কোথাও হয়তো বড় গলদ থেকে থাকবে। কী গলদ আছে, সেটি কূটনীতিকদের অবিলম্বে উদঘাটন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বলতে হয়, কূটনৈতিক দক্ষতা ও পারদর্শিতার কোনো বিকল্প নেই। এর আগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো নতজানু ব্যক্তিকে দিয়ে আর যাই হোক, মিয়ানমারের মতো চরম একগুঁয়ে সামরিক শাসকদের মোকাবেলা করা যাবে না। এ জন্য কূটনৈতিক দক্ষতা ও পেশাগত পারদর্শিতার সাথে শক্ত মেরুদণ্ডসম্পন্ন ব্যক্তিত্বকে দায়িত্ব দেয়া জরুরি।
আরেকটি বিষয় মনে রাখা উচিত, জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজনীয় যেকোনো ইস্যু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার মতো দৃঢ়তাও বাংলাদেশের সরকারের থাকা দরকার। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষা করার জন্যই সরকার থাকে। জনসমর্থনপুষ্ট সরকারের কোনো দ্বিধা বা দুর্বলতা থাকার কথা নয়।
চীন ও রাশিয়ার পরামর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারও একটা শেষ সীমা থাকা দরকার। চিরকালের জন্য সাত লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে লালনপালন করা সম্ভব নয় বাংলাদেশের পক্ষে। এই বাস্তবতা মনে রেখেই বাংলাদেশকে এগোতে হবে। প্রয়োজনে বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক রূপ দিতে হবে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেছেন, এ কথা স্পষ্ট যে, চীন বা রাশিয়ার সহযোগিতা ছাড়া রোহিঙ্গা সঙ্কটের সুরাহা সম্ভব নয়। এখন নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতাধর দুই শক্তিকে সম্পৃক্ত করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। তারাই বলুক, কিভাবে দ্বিপক্ষীয়ভাবে শরণার্থী সমস্যার সমাধান করবে বাংলাদেশ। এ জন্য কূটনৈতিক দূরদর্শিতা কাজে লাগাতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা