০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সেবা নেই, তবু ভাড়া বাড়ছে ২৫%

রেলওয়ের সুনাম আর রইল না

-

কথায় বলে, ‘ভ্রমণের রাজা রেলভ্রমণ’। সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আরামদায়ক হওয়ায় দীর্ঘ দিন ধরে এ কথা প্রচলিত ছিল। তবে বাস্তবে দেখা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের সে ঐতিহ্যবাহী আকর্ষণ আর নেই; বরং ট্রেনে যাতায়াতের অবশিষ্ট সুবিধাটুকুও বিদায় নিতে চলেছে। সড়কপথে দুর্ঘটনার হিড়িক ও দুর্বিষহ যানজটে গণমানুষের আর রেলযোগাযোগের ওপর নির্ভর করার উপায় থাকছে না।
সংবাদপত্রের খবর, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ রেলওয়ের সেবার মান দিন দিন হ্রাস পেয়ে তলানিতে পৌঁছার পর এখন এক লাফেই ২৫ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, মূলত বিদেশী ঋণদাতাদের চাপেই এমন অনাকাক্সিক্ষত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। ট্রেনের ন্যূনতম ভাড়ার পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন রুটে মোটের ওপর ২৫ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর পরিকল্পনা আগামী অর্থবছর তথা জুন থেকেই কার্যকর করার তোড়জোড় চলছে। রেলের ক্রমেই নিম্নমুখী সেবার মানের মধ্যেই মাত্র দুই বছর আগে ট্রেনে যাত্রী ও মাল পরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। এখন আবার ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব ‘দাতা’ সংস্থা এডিবি, মানে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের। এ জন্য তাদের চাপকে জোরদার করছে কোনো কোনো বিদেশী কনসালট্যান্টের পরামর্শ।
বলা হয়েছে, লোকসান কমাতে প্রতি বছরই ট্রেনে যাত্রী ও পণ্য বহনে ভাড়া বাড়ানোর কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে। আসলে প্রতি বছর ভাড়া বাড়ানোর কৌশল কার্যকর করা শুরু হয়েছে ২০১৬ সাল থেকে। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে, অর্থাৎ ভোটের রাজনীতির স্বার্থে গত বছর রেলভাড়া না বাড়িয়ে সরকার চুপ ছিল। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী পার হয়ে ক্ষমতাসীন মহল আবার এ ভাড়া বাড়ানোর তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। এ জন্য খসড়া প্রস্তাব তৈরি হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবের বক্তব্যÑ এডিবিকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি মোতাবেক, রেলে যাত্রীর ভাড়া ‘সমন্বয়’ করা হচ্ছে। রেলওয়ের তৈরি করা প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। জুন মাসের মধ্যে এটি কার্যকর করার আশা আছে। অপর দিকে, নতুন মন্ত্রিসভায় রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী যাত্রীসেবার নিম্নমান দেখে হতাশ। গত ৫ মার্চ দেশের প্রধান রেলস্টেশন, ঢাকার কমলাপুরে সেবাকার্যে অব্যবস্থাপনা দেখে তিনি অসন্তোষ ব্যক্ত করেন। মন্ত্রী এ ব্যাপারে এক মাস সময় বেঁধে দিলেন কর্মকর্তাদের। এ দিকে, গত কয়েক দিন সেখানে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি চোখে পড়েনি। যথাসময়ে ট্রেন ছাড়ে না অনেক ক্ষেত্রে। কোচে তেলাপোকার উপদ্রব, আর মশার উৎপাত তো আছেই। ‘যাত্রী কল্যাণ সমিতি’ বলেছে, দফায় দফায় ভাড়া বাড়ানোয় দুর্ভোগের শিকার হন বেশি বিশেষত নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত যাত্রীরা। এবার ট্রেনে কেবল শোভন শ্রেণী নয়, সুলভ শ্রেণীর আসনের ভাড়াও বাড়ানো হচ্ছে। জানা যায়, ন্যূনতম ভাড়া উভয় শ্রেণীর ক্ষেত্রে সমান বাড়ছে। অনেক রুটেই ভাড়া বাড়াতে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। অথচ দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াতকারী দুই শতাধিক ট্রেনে যাত্রীদের জন্য সেবার চেয়ে বেশি আছে হয়রানি। এর একটা নমুনা হলো, স্টেশনে বিনা মূল্যের ট্রলি যাত্রীরা মালামাল বহনের জন্য ব্যবহার করতে পারেন না এবং কুলিরা এগুলোর জন্য টাকা আদায় করে থাকে। কাউন্টারে হয়রানি আর অপরিচ্ছন্ন বগির কথা বলাই বাহুল্য।
ট্রেনের ভাড়া কিছুটা বাড়তে পারে যদি কর্তৃপক্ষের ব্যয় বৃদ্ধি পায় এবং যাত্রীসেবার মান হয় উন্নত। তবে দুর্নীতি, অনিয়ম, অদক্ষতা প্রভৃতি কারণে লোকসান দিয়ে তার বোঝা যাত্রীদের ঘাড়ে চাপানো সম্পূর্ণ অসঙ্গত ও অনভিপ্রেত। রেল কর্তৃপক্ষের উচিত, বারবার ভাড়া না বাড়িয়ে বরং যাবতীয় অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা দূর করা এবং সৎ ও দক্ষ জনবল দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা। তা ছাড়া, দেশের জনগণের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে শুধু ঋণদাতা বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কথাকে প্রাধান্য দেয়া সমীচীন নয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement