০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


গোপালগঞ্জে মৃত্যুঝুঁকিতে রোগীরা

প্রদীপের নিচে অন্ধকার আজো!

-

‘রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন জীবন বাঁচাতে। হাসপাতালের ছাদ ভেঙে পড়ছে। তাই ঝুঁকিতে রোগী ও স্বজনদের তটস্থ থাকতে হচ্ছে। তারপরও বাধ্য হয়েই সাধারণ মানুষ সেখানে অবস্থান করে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। হাসপাতাল ভবনের দ্বিতীয় তলায় মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডের প্রবেশদ্বারে কর্তৃপক্ষ নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছেÑ এ ওয়ার্ডের ছাদ ভেঙে পড়ছে, এখানে থাকলে নিজ দায়িত্বে থাকতে হবে।’ এই ‘গুরুতর অসুস্থ’ হাসপাতালটির নাম কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এর অবস্থা এতই শোচনীয় যে, সাত মাস ধরে অস্ত্রোপচার বন্ধ এখানে। গোপালগঞ্জ জেলার যে আসন থেকে বর্তমান সরকারপ্রধান বারবার নির্বাচিত হয়ে আসছেন এবং আবারো নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, এটা সেই জনপদের একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র। উল্লেখ্য, কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসনটি গঠিত। দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে বলে সরকার এক দশক ধরে জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আসলে জোয়ারটা যে উন্নয়নের চেয়ে প্রচারণার বেশি, চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে দিচ্ছে কোটালীপাড়ার উপজেলা হাসপাতাল।
একটি জাতীয় দৈনিকের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধির প্রেরিত এই প্রতিবেদনের ওপরে একটি ছবি ছাপা হয়েছে। এতে দেখা যায়, কোটালীপাড়া হাসপাতালে পলেস্তারা খসা ছাদের নিচে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে রোগীরা বেডে অবস্থান করছেন। আরো দেখা যাচ্ছে, তাদের মাথার ওপর ছাদের পলেস্তারার বড় বড় টুকরা খসে সিলিংয়ের রড বেরিয়ে আছে।
আলোচ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, উপজেলায় সাড়ে তিন লাখ মানুষকে সেবা দেয়ার উদ্দেশ্যে ৪০ বছর আগে ৩০ বেডের হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এর ভবন বর্তমানে জরাজীর্ণ ও বিপজ্জনক। বিশেষত দ্বিতীয় তলা ব্যবহার করা প্রায় অসম্ভব। ছাদের পলেস্তারা এবং বিমের ঢালাই খসে পড়ছে। অনেক সময় পলেস্তারা খসে পড়ে রোগী, নার্স ও চিকিৎসক হচ্ছেন আহত। ৩০ বেডের হাসপাতাল ৫০ বেডে উন্নীত হলেও অবনতি দেখা যায় ডাক্তারসহ জনবলের ক্ষেত্রেও। বেড বাড়লেও জনবল বাড়েনি। ২২ জনের স্থলে মাত্র ৯ জন ডাক্তার আছেন। দীর্ঘ সাত মাস ধরে গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ নেই বলে অপারেশন করা যাচ্ছে না। চিকিৎসাধীন রোগীদের একজন প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘শরীরের অবস্থা খুব খারাপ। তদুপরি হাসপাতালের ছাদ ভেঙে পড়লে মারা যাবো। তবুও নিরুপায় হয়ে এখানে ভর্তি হয়েছি। অবশ্য ডাক্তাররা ভর্তি করাতে চাননি।’ আরেক রোগীর বক্তব্য, ‘বাইরে চিকিৎসা নেয়ার সামর্থ্য না থাকায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে এখানেই চিকিৎসা করাচ্ছি।’ একজন নার্স অভিযোগ করেন, ‘ডিউটি করার সময় ছাদের পলেস্তারা পড়ে আহত হয়েছি। আমাদের বসার রুমের ছাদের অবস্থাও ভালো নয়।’ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার জানান, ‘অনেক আগেই এ ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় আমরা এখানে রোগী রাখতে চাই না। তবুও তারা জোর করে এখানে ভর্তি হচ্ছেন। অচিরেই এটি ভেঙে নতুন ভবনের কাজ শুরু হবে।’ তিনি বলেছেন, এখানে চিকিৎসকের ঘাটতি প্রকট। সাত মাস অপারেশন বন্ধ। সমস্যা সত্ত্বেও আমরা দৈনিক তিন থেকে চার শ’ রোগীর চিকিৎসা করে যাচ্ছি।
মানুষ চিকিৎসা নেয় সুস্থ থাকার জন্য। সেখানে চিকিৎসা নিতে এসে যদি প্রাণ হারানোর শঙ্কায় ভুগতে হয় প্রতিনিয়ত, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় আর কী হতে পারে? চিকিৎসা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার, আর তা পূরণ করা রাষ্ট্রের একটি বড় দায়িত্ব। তাই গ্রাম ও শহর কিংবা ধনী-গরিব-মধ্যবিত্ত নির্বিশেষে দেশের সবার নিরাপদ, মানসম্মত ও পর্যাপ্ত চিকিৎসাসুবিধা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই।
আমরা আশা করি, কোটালীপাড়াসহ দেশের সর্বত্র সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু সেবাদান নিশ্চিত হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement