২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
১০ মাসে ৮৬৪ জন নারী ধর্ষিত

নরপশুদের দৌরাত্ম্য রুখতে হবে

-

বাংলাদেশে ধর্ষণসহ নানাভাবে নারী নির্যাতনের তাণ্ডব অব্যাহত রয়েছে। মহিলাদের বিভিন্ন সংগঠনের অভিযোগ, এ বছরের শুরু থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ১০ মাসেই দেশে ৮৬৪ জন নারী হয়েছেন ধর্ষণের মতো চরম বর্বরতার শিকার। তাদের মধ্যে ৫৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে ধর্ষণের পর। আর লম্পটেরা দলবেঁধে ধর্ষণের পৈশাচিকতায় লিপ্ত হয়েছে ১৬৫ জন নারীর ক্ষেত্রে।
পত্রিকার খবরে আরো জানানো হয়, আরেক জরিপে এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে যে, দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কিশোরী ও তরুণীদের ইজ্জত লুণ্ঠন করা হচ্ছে। উদ্বেগের আরেক বিষয় হলোÑ ২০১৭ সালে ধর্ষণের ৪৩ শতাংশ ঘটনার হোতা কিশোর ও তরুণেরা। এদের মধ্যে মাত্র ১১ বছরের ছেলেও রয়েছে। একই বছরে ধর্ষিত হয়েছে যারা, তাদের প্রায় দু-তৃতীয়াংশই শিশু, কিশোরী ও তরুণী। অনেক ক্ষেত্রে মাত্র দুই বছরের মেয়েশিশু পর্যন্ত যৌন উন্মাদদের পাশবিক লালসার কবল থেকে নিস্তার পায়নি। ‘নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা উচ্ছেদসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে এবার বাংলাদেশে নারীদের বিরুদ্ধে অবাধে সংঘটিত জঘন্য ও ভয়াবহ অপরাধগুলোর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বাস্তবে এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা আরো বেশি বলেই ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা।
পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে, বিগত ১০ মাসে দেশে বিভিন্ন বয়সী তিন হাজার ৫০২ জন নারী নানা ধরনের নিপীড়নে ভুক্তভোগী। তাদের মধ্যে ৮৭ জনকে যৌতুকের জন্য খুন হতে হয়েছে। ১৩ জনকে বেচে দয়া হয়েছে পতিতালয়ে। ১১৫ জনকে ধর্ষণের অপপ্রয়াস চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এর আগে, গত বছর মার্চ থেকে বছরের শেষ দিন পর্যন্ত সময়ের হিসাবে জানা গিয়েছিল, এক হাজার ২৭ জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, যাদের ৫২ জন নিহত হয়েছে এরপরই। এ দিকে, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ১৪ জন নারী তাদের উত্ত্যক্ত করার পরিণামে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। অন্যান্য কারণে আত্মহত্যা করেছেন ২৩৮ জন নারী। একই সময়ে এসিড হামলায় তিনজন নারীর মৃত্যুর পাশাপাশি ১৬ জন মারাত্মকভাবে হন আহত। তদুপরি, ৪৭ জন বালিকাকে বাল্যবিয়েতে বাধ্য করার খবর পাওয়া গেছে।
নারীর বিরুদ্ধে নানাবিধ সহিংসতার প্রকোপ এতটাই বেড়েছে যে, একজন নারী সংগঠক বলেছেন, ‘এ দেশে যেন নারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে।’ পরিবার ও সমাজের গতানুগতিক বৈরী মানসিকতা ছাড়াও বিদ্যমান আইন প্রয়োগ না করা এবং অনেক ক্ষেত্রে আইনের অপ্রতুলতা নারীদের জন্য এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন। অভিযোগ এসেছে যে, আমাদের বিচারব্যবস্থাসহ প্রশাসন আজো নারীবান্ধব নয়। অপর দিকে, বিশেষত বর্তমান সরকার তার গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে বারবার দাবি করছে, এই সরকার নারীবান্ধব এবং নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে। একটি লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, একটি মহিলা সংগঠন নিজস্ব জরিপের ভিত্তিতে বলেছে, দুর্বৃত্ত দলের হাতে ধর্ষিত নারীদের মধ্যে চাকুরে নারীর চেয়ে গৃহবধূর হার বেশি।
দিন দিন নারীরা অধিকতর সহিংসতা ও অত্যাচারের শিকার হওয়ার প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, সরকার অবকাঠামোর যত উন্নয়ন করুক, জনসংখ্যার অর্ধেক এবং ‘মায়ের জাত’ হিসেবে পরিচিত যে নারী, তাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা না থাকলে যাবতীয় উন্নয়নই অর্থহীন হয়ে পড়বে। প্রশাসন দুর্নীতিমুক্ত হলে, তাদের নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ ও মানবতাবোধ থাকলে এবং শিক্ষাব্যবস্থায় কাক্সিত পরিবর্তন করা হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতো বলে তাদের অভিমত। এ দিকে, নারীর অধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত কাউকে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
আমরা মনে করি, নারী নির্যাতনসমেত সব ধরনের অন্যায়-অপরাধ বন্ধ করার জন্য সর্বাগ্রে পুলিশ ও প্রশাসনের কার্যক্রমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে, নিরপেক্ষভাবে ও কঠোরতার সাথে আইন প্রয়োগ এবং প্রয়োজনে উপযুক্ত আইন প্রণয়নও অপরিহার্য। অনেকের মতে, হাইকোর্টের একটি দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করাও দরকার। এতে বলা হয়েছে, ধর্ষণকারীকেই প্রমাণ দিতে হবে, সে এই জঘন্য অপরাধ করেনি। মোট কথা, নির্যাতক এবং ক্ষেত্রবিশেষে তার গডফাদারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করাই সময়ের দাবি।


আরো সংবাদ



premium cement