৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ধূলিদূষণে অর্থনীতি ও পরিবেশের ক্ষতি

কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আর বিলম্ব নয়

-

পরিবেশ সচেতন নাগরিকরা বলছেন, রাজধানীসহ সারা দেশে ধুলাবালুর সীমাহীন ও অব্যাহত দৌরাত্ম্যে জনগণের চরম দুর্ভোগই শুধু ঘটছে না, জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থার আশু অবসান ঘটিয়ে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা এবং এ জন্য দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থার জোর দাবি উঠেছে।
নয়া দিগন্তসহ পত্রপত্রিকার খবরে জানা যায়, এই দাবিতে গত শনিবার ঢাকায় মানববন্ধনের আয়োজন করে ‘পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’সহ ১৬টি সংগঠন। এই সময়ে পরিবেশবিদ এবং পরিবেশ ও স্বাস্থ্যসচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, নগরীতে সারা বছর বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও কর্তৃপক্ষ রাস্তাঘাটে নির্বিচারে খোঁড়াখুঁড়ি করে থাকে। অথচ এসব খননকার্যক্রমে জমা হওয়া বিপুল মাটি ও আবর্জনা দ্রুত অপসারণ করা হয় না। এ জন্য অর্থ বরাদ্দ হলেও তার সদ্ব্যবহার হচ্ছে না। বর্জ্য ও মাটি সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বিধি অনুসরণ করা হয় না।
আরো অভিযোগ করা হয়, ড্রেনের ময়লা রাজপথের দু’ধারে দীর্ঘ সময় ফেলে রাখা হয়। এতে যানবাহন ও পথচারী চলাচলে বিষম সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং ধুলাবালু ও আবর্জনা চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আর বর্জ্যরে দুর্গন্ধ তো আছেই। বিশেষত শুকনো মৌসুমে এ ধরনের দূষণের ক্ষতির মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। ধুলাবালুর কারণে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, অ্যালার্জি, চর্মরোগ, কাশিসহ জটিল রোগব্যাধির বিস্তার ঘটে।
ইদানীং উত্তরা থেকে মিরপুর, বেগম রোকেয়া সরণি, ফার্মগেট, শাহবাগ হয়ে একেবারে মতিঝিল পর্যন্ত অর্থাৎ ঢাকা মহানগরীর বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে মেট্রোরেল নির্মাণের তোড়জোড় চলছে। সরকারের এই মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হতে কয়েক বছর লেগে যাবে। মেট্রোরেলের জন্য হাজার হাজার গাছপালা নির্মূল করার পাশাপাশি ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ির ফলে ধুলাবালুর তাণ্ডব অবর্ণনীয় অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে, উল্লিøখিত মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, মেট্রোরেল-সমেত বিভিন্ন মহা প্রকল্পে সড়ক ও পাশের বিরাট জায়গাজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি, অপসারণ ও নির্মাণ প্রভৃতি চলছে। আগে থেকেই গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ-পয়ঃনিষ্কাশন লাইনের কাজে খোঁড়াখুঁড়ি করা হচ্ছে। এ দিকে মাটি, বালু, ইট প্রভৃতি নির্মাণসামগ্রী আচ্ছাদন ছাড়াই ট্রাকে পরিবহন করা হয় ঢাকার বুকে। ড্রেন-নর্দমার তরল ময়লা-আবর্জনা রাস্তার পাশেই ফেলে রাখা হয়। তদুপরি, দোকানপাট ও ঘরবাড়ির আবর্জনা যত্রতত্র ফেলে রাখার প্রবণতা একটুও কমেনি। প্রতিদিনই এখানে-সেখানে বহু পাকা ভবন উঠছে। কিন্তু এর নির্মাণ-উপকরণগুলো রাস্তার ওপর কিংবা ফুটপাথে স্তূপ করে রাখতে দেখা যায়। এর সাথে পুরনো ভবন ভাঙা, বিকট শব্দে মেশিনে ইট ভাঙা, যানবাহনের ক্ষতিকর কালো ধোঁয়া, কলকারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্য প্রভৃতি মিলে আমাদের পরিবেশ অবর্ণনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থার মধ্যেই মেরামতহীন ও খানাখন্দ ভরা রাস্তা দিয়ে ‘লক্কড়ঝক্কড় মার্কা’ গাড়িগুলো চলছে।
বর্ণিত দুঃসহ পরিস্থিতির অবসান তথা নাগরিক জীবনে স্বস্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার ওপর ওয়াকিবহাল মহল জোর দিয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ির ক্ষেত্রে সমন্বিত ও সুবিবেচিত কার্যক্রম, এ কাজ শেষ হওয়া মাত্র রাস্তাঘাট যত শিগগির সম্ভব আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা, ধুলাবালু নিরোধের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া, বিশেষ করে ধূলিদূষণের উৎসগুলো বন্ধ করা, যেকোনো উন্নয়ন ও সংস্কারের সময়ে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের বিষয় প্রভৃতি ক্ষেত্রে গুরুত্ব প্রদানের জন্য সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, রাজউক, গ্যাস কোম্পানি, টিঅ্যান্ডটিসহ সংশ্লিষ্ট সবার নিয়মিত নজরদারি আবশ্যক। তা ছাড়া, জনসাধারণকেও সচেতনতা ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement