২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পরামর্শক খাতেই ১০১ কোটি টাকা

- সংগৃহীত

বিভাগীয় শহরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপনে ৭৪০ জন মাস পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে। এদের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ১০১ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এদের মধ্যে আবার বিদেশী পরামর্শক রয়েছেন ১২৬ জন মাস। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণের এই স্যুয়ারেজ উন্নয়ন প্রকল্প পরামর্শকের ভারে নুয়ে পড়বে। আর এই স্যুয়ারেজ লাইন নির্মাণ করতে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে ৫ কোটি ৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। এই বিরাট সংখ্যক পরামর্শক নিয়োগ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের আপত্তি রয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, এই স্যুয়ারেজ বা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পটি খুলনার জন্য নেয়া হচ্ছে। খুলনা বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় বন্দরনগরী। এই নগরীতে ১৫ লাখ জনসংখ্যার বসবাস। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সেখানে নেই। আর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় খুলনা শহরে প্রায় বেশির ভাগ লোক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিজস্ব বিকল্প ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় নগরবাসীর মধ্যে কিছু সংখ্যক কূপপদ্ধতি এবং প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নগরবাসী সেপটিক ট্যাংক পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। মহানগরীর বাড়ির সেপটিক ট্যাংক ও কূপগুলো অনেক ক্ষেত্রে রাস্তার পাশে অবস্থিত উন্মুক্ত পরিবেশে ড্রেনের সাথে সংযুক্ত।

ফলে কূপ ও সেপটিক ট্যাংকের ময়লা-বর্জ্য পানি সরাসরি উন্মুক্ত ড্রেনের পানির সাথে মিলিত হয়ে সেখানে মশা-মাছি ও রোগজীবাণুর প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করছে। যার কারণে ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, জ্বর, টাইফয়েড, কলেরা ও পানিবাহিত রোগজীবাণু দ্বারা শহরের জনসাধারণ আক্রান্ত হয়ে থাকে। বতর্মানে খুলনা সিটি করপোরেশন ছোট কনটেইনার গাড়ির মাধ্যমে অনিয়মিতভাবে সেপটিক ট্যাংক থেকে পয়ঃবর্জ্য পরিবহন করে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল এ অবসারণ করছে। এখানে যথাযথ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। এডিবির অর্থায়নে তাদের কর্তৃক নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দ্বারা সম্ভাব্যতা যাচাই করে। সেই জরিপ অনুযায়ী ২০১৮ সালের এপ্রিলে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।

প্রকল্পের কাজগুলো হলো- ২টি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ, ১৭৩ কিলোমিটার স্যুয়ার নেটওয়ার্ক নির্মাণ, ৮টি স্যুয়ার পাম্পিং স্টেশন নির্মাণ, ৭৭ কিলোমিটার সার্ভিস লাইন নির্মাণ, ৩০ হাজার হাউজ কানেকশন, ১টি ওয়েট ল্যান্ড নির্মাণ, ৫২ কিলোমিটার বিদ্যমান অবকাঠামোর পুনর্বিন্যাস, স্যুয়ার ক্লিনিং যন্ত্রপাতি কেনা। আর এসব কাজের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক, সচেতনতা ও ডিজাইন সেবায় ১৭১ জন মাস পরামর্শক এবং ম্যানেজমেন্ট ও সুপারভিশনে ৫৬৯ জন মাস পরামর্শক নিয়োগ দেয়া। প্রকল্পের মূল ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩৩৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। যার মধ্যে এডিবির ঋণ ১ হাজার ৪০২ কোটি ৬১ লাখ ৬১ হাজার টাকা।

ব্যয় বিভাজনে দেখা যায়, ম্যানেজমেন্ট ও সুপারভিশনে ৫৬৯ জন মাস পরামর্শকের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২ কোটি ২৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। আর প্রাতিষ্ঠানিক, সচেতনতা ও ডিজাইন সেবায় ১৭১ জন মাস পরামর্শকের জন্য ২৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সুদ খাতে ব্যয় হবে প্রায় ২৬ কোটি টাকা। ১৭৩ কিলোমিটার স্যুয়ার নেটওয়ার্ক নির্মাণে ৮৭৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এতে কিলোমিটারে খরচ ৫ কোটি ৬ লাখ টাকার বেশি। আর সার্ভিস লাইন নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ধরে ৭৭ কিলোমিটারে ব্যয় হবে ১১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বেশ কিছু খাতের ব্যয় কমিয়ে আনার জন্য বলেছে। পাশাপাশি এই ধরনের প্রকল্পে এত পরিমাণে পরামর্শকের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এটাকে যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনা দরকার বলে মনে করছে।


আরো সংবাদ



premium cement