২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হরিণ শিকার রোধে সতর্কতায় কাজ হবে কি?

- সংগৃহীত

ঈদের ছুটির সময়টায় হরিণের মাংসের চাহিদা বেড়ে যাবার প্রবণতা লক্ষ্য করে চোরাই হরিণ শিকার ঠেকাতে সুন্দরবন এলাকায় সতর্কতা জারি করেছেন বাংলাদেশের বন কর্মকর্তারা। ঈদকে সামনে রেখে সুন্দরবনে সতর্কতা জারির অংশ হিসেবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকের ছুটি সীমিত করা হয়েছে - বলছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। বন বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঈদের সময় হরিণের মাংসের চাহিদা কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় হরিণ শিকারীদের অপতৎপরতা নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক আমির হোসাইন বলেন, "আমরা আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটিটা কিছুটা সীমিতকরণ করেছি। এছাড়া সুন্দরবনের সীমান্ত এলাকায় যেসব ক্যাম্পগুলো আছে, তারা আরো বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই হরিণ শিকার রোধে সতর্কতা অবলম্বন করছে।"

মি. হোসাইন জানান, ঈদের মৌসুমে হরিণ শিকারীদের কাছে হরিণের মাংসের জন্য অর্ডার দেয়া হয়, যে কারণে শিকারীদের মধ্যে এ সময় হরিণ শিকারের প্রবণতা বেশি থাকে। তবে এই সতর্কতা জারি করার কারণে সুন্দরবনে পর্যটন কার্যক্রমের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে নিশ্চিত করেন মি. হোসাইন।

"যদিও পর্যটনের মৌসুম নয়, তবুও ছুটি থাকার কারণে সুন্দরবনে কিছু পর্যটক আসবে বলে ধারণা করছি আমরা। তাই করমজল, হালবাড়িয়া, কলাগাছিয়ার মত যেসব এলাকায় পর্যটকদের আনাগোনার সম্ভাবনা রয়েছে সেসব এলাকায় পর্যাপ্ত কর্মী আমরা রেখেছি।"

কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে বনবিভাগের এই অবস্থান?

অন্যান্য বছর ঈদের সময় হরিণ শিকারের হার বেশি থাকলেও এবছর বনবিভাগের নেয়া পদক্ষেপের কারণে শিকারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন সাংবাদিক মোহসীন উল হাকিম - যিনি সুন্দরবনের জলদস্যুদের আত্মসমর্পণে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছিলেন।

"বনবিভাগ সববময়ই এ ধরণের বিষয় নিয়ে সতর্ক ছিল, কিন্তু বর্তমানে তারা আগের চেয়ে অনেক কঠোর অবস্থানে রয়েছে।"

মি. হাকিম আশা প্রকাশ করেন যে বনবিভাগের তৎপরতা এবারের ঈদে হরিণ শিকারের হার কমিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

"সাতক্ষীরার শ্যামনগর, খুরণার দাকোপ অঞ্চল, বরগুনার পাথরঘাটা অঞ্চলে বেশ কয়েকটি সংঘবদ্ধ শিকারী চক্র কাজ করে। কিন্তু এবারে বনবিভাগ যেরকম সতর্ক অবস্থায় আছে, সেহিসেবে এই সংঘবদ্ধ চক্রগুলোর হরিণ শিকার করা প্রায় অসম্ভব হবে বলে আমার ধারণা।"

তবে সংঘবদ্ধভাবে শিকার করা সম্ভব না হলেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে হরিণ শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান মি. হাকিম।

"ঈদের আগে এবং পরে মিলিয়ে এক সপ্তাহ ঐ অঞ্চলে জেলেদের মাছ ধরার সময়। কিন্তু ঈদের কারণে সেসময় ঐ এলাকার জেলেরা মাছ ধরার কার্যক্রম চালাবে না। তাই ঈদের সময় বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে জেলেদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ হরিণ শিকার করার দিকে ঝুঁকতে পারেন।"

গত এক দশকে শতাধিকবার সুন্দরবনে যাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে মি. হাকিম বলেন, সুন্দরবনের স্থানীয়দের মধ্যে হরিণের মাংসের জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা দুই'ই কমেছে।

"গত কয়েকবছরে জনসচেতনতা এমনভাবে বেড়েছে যে, সুন্দরবন বা তার আশেপাশে বাস করা মানুষের কাছে হরিণের মাংসের গ্রহণযোগ্যতা কমে গেছে। এখন ঐসব এলাকার স্থানীয়রা হরিণের মাংস খাওয়াকে লজ্জার ব্যাপার হিসেবে বিবেচনা করে।"

মি. হাকিম জানান, গোপনে শিকার করলেও হরিণের মাংস খাওয়া বা মাংসের বেচাকেনাটা একসময় প্রকাশ্যেই হতো, যা বর্তমানের প্রেক্ষাপটের সাথে সম্পূর্ণ বিপরীত।

তবে ঈদের সময় নয়, সুন্দরবনে হরিণের মাংসের চাহিদাটা প্রতিবছর কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে হওয়া রাস মেলার সময় ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায় বলে জানান মি. হাকিম। সূত্র : বিবিসি।


আরো সংবাদ



premium cement