২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৭ ভাগ

এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৭ ভাগ - সংগৃহীত

এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। শুধু অবলোপন বাদেই গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৭৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

সাধারণত বছর শেষে অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসের তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচক বিবেচনা করা হয়। ব্যাংকগুলোর সব ধরনের সক্ষমতা প্রকাশ পায় বছরের শেষ সূচকের ওপর ভিত্তি করে। ক্যামেল রেটিং, ব্যাংকের বছর শেষে লভ্যাংশ নির্ভর করে ডিসেম্বরের তথ্যের ভিত্তিতে। এ কারণে ব্যাংকগুলো নানা উপায় অবলম্বন করে ডিসেম্বরের আর্থিক সূচক ভালো করার চেষ্টা করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বরে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। পরের তিন মাসে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ না বেড়ে বরং প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। এর কারণ হিসেবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বেশির ভাগ ব্যাংকই ডিসেম্বর মাসকে সামনে রেখে খেলাপি ঋণ কমানোর চেষ্টা করছে। কেউ খেলাপি ঋণ আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে। কেউবা ঋণ অবলোপন ও ঋণ নবায়ন করে খেলাপি ঋণ কমিয়েছে। আবার অনেকেই কৃত্রিম ঋণ সৃষ্টি করে ও কৃত্রিম আদায় বাড়িয়ে খেলাপি ঋণের হার কমিয়ে এনেছে। আবার গত জানুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেকেই খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছেন। সবমিলেই সামগ্রিকভাবে প্রভাব পড়েছে খেলাপি ঋণের ওপর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৩১ ডিসেম্বরে ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের স্থিতি ছিল ৯ লাখ ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ হয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে অর্ধেকই রাষ্ট্র মালিকানাধীন সাত ব্যাংকের। ওই সময়ে ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৬২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৪৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ ছিল ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপি ঋণ হয়েছে ৩৮ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ৯ বিদেশী ব্যাংকের আলোচ্য সময়ে ঋণের স্থিতি ছিল ৩৫ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপি ঋণ হয়েছে ২ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ২ বিশেষায়িত ব্যাংকের আলোচ্য সময়ে ঋণের স্থিতি ছিল ৩৪ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ হয়েছে ৪ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় সাড়ে ১৯ শতাংশ। 

দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, তিন মাসে দেশে এমন কোনো উন্নতি হয়নি, যার জন্য খেলাপি ঋণ সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা কমে যাবে। তবে, তিনি মনে করেন হিসার খেলায় খেলাপি ঋণ কমে গেছে। প্রকৃতপক্ষে খেলাপি ঋণ কমেনি। তবে, তিনি মনে করেন, কাগজেকলমে সামনে খেলাপি ঋণ আরো কমে যাবে। কারণ, ঋণ অবলোপনে বিশেষ ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ অবলোপন হয়ে যাবে। ফলে খেলাপি ঋণের হার কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
গত সেপ্টেম্বরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা আদায় হয়েছে। অনাদায়ী অবলোপনকৃত ঋণ রয়েছে প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা, যা প্রায় পুরোটাই আদায় অযোগ্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ পরিস্থিতিতে ঋণ অবলোপনের নীতিমালা শিথিল করায় ব্যাপক আকারের খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর বুকস অব অ্যাকাউন্ট থেকে বের হয়ে যাবে। এতে আপাতত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমে যাবে বলে মনে করা হলেও বরং জটিলতা আরো বেড়ে যাবে। ব্যবসায়ীরা আরো বেশি হারে ঋণ অবলোপনের সুবিধা নেবেন। এতে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের প্রবণতা আরো বেড়ে যাবে। ফলে সামগ্রিকভাবে বাড়বে ঝুঁকি।

প্রসঙ্গত, গত ৬ ফেব্রুয়ারিতে এক সার্কুলারের মাধ্যমে ঋণ অবলোপনের নীতিমালা শিথিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অবলোপনের জন্য এখন আর আগের মতো শতভাগ প্রভিশন লাগবে না। দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অবলোপনে মামলা করতে হবে না। এতদিন মামলা না করে অবলোপন করা যেত ৫০ হাজার টাকা। যেসব ঋণ বা বিনিয়োগ হিসাবের বকেয়া দীর্ঘদিন আদায় বন্ধ, যা নিকট-ভবিষ্যতে আদায়ের কোনো সম্ভাবনাও নেই। এ ছাড়া তিন বছর মন্দ বা ক্ষতিজনক মানে শ্রেণীকৃত রয়েছেÑ এসব ঋণ বা বিনিয়োগ ব্যাংকগুলো অবলোপন করতে পারবে। ব্যাংকগুলো এখন মাত্র তিন বছরের মন্দমানের খেলাপি ঋণ ব্যালেন্স শিট থেকে বাদ দিতে পারবে। এতে খেলাপি ঋণ আদায় না হলেও তা কাগজ-কলমে কমবে। এতদিন কোনো ঋণ মন্দ মানে শ্রেণীকৃত হওয়ার পাঁচ বছর পার না হলে তা অবলোপন করা যেত না।


আরো সংবাদ



premium cement