২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
শ্রুতি ও স্মৃতির সোনালি শিখা

যেমন দেখেছি তাঁকে

-

ছাব্বিশ.

একটি বর্ণাঢ্য কাব্যিক জীবনে আল মাহমুদের বিচরণও বেশুমার। কবিতা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির আয়োজন ও জমায়েতে তিনি ছিলেন অগ্রগণ্যদের একজন। তার সময়ে শিল্প-সাহিত্যের বড় আয়োজন মানেই তার উপস্থিতি। সেই উপস্থিতি মঞ্চালোকিত করেই। আয়োজনের মূল বিষয়ের ফোকাসেই ছিলেন তিনি। ছিলেন নিজস্ব চিন্তা, চেতনা ও চৈতন্যের তীব্র উচ্ছ্বাস নিয়ে। প্রতিটি বিষয়ে ছিল তার মৌলিক চিন্তা।
বেশ ক’টি সাহিত্য সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করেছিল বাসাপÑ বাংলা সাহিত্য পরিষদ। এসব আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্ববর্গ। কেউ কেউ ছিলেন অতিথি। সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে কাউকে কাউকে। এ দুটোতেই ছিলেন আল মাহমুদ। তিনি যেমন অতিথি ছিলেন, তেমনি আবার সংবর্ধিত হয়েছেন। আশির দশকের শেষপাদে এসব সম্মেলন উৎসবের শুরু। চলেছে দীর্ঘ দিন।
এসব আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেনÑ সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন, দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা মুখ সৈয়দ আলী আহসান, কথাশিল্পী আবু রুশদ, কবি তালিম হোসেন, কথাশিল্পী মিন্নাত আলী, কবি ও চিন্তাবিদ সৈয়দ আলী আশরাফ, কবি ও লোকবিজ্ঞানী ড. আশরাফ সিদ্দিকী, নাট্য ব্যক্তিত্ব ড. আসকার ইবনে শাইখ, বিশিষ্ট কবি আবদুস সাত্তার, নাট্যশিল্পী ওবায়দুল হক সরকার, বিশিষ্ট সাংবাদিক সাহিত্যিক সানাউল্লাহ নূরী, খ্যাতিমান কবি ও গীতিকার ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, সাংবাদিক মাহাবুব আনাম, সাংবাদিক সাহিত্যিক আখতার উল আলম, কবি আবদুর রশিদ খান, ড. এম আবদুল কাদির, অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাশিল্পী শাহেদ আলী, মাসিক মদীনা সম্পাদক বিশিষ্ট চিন্তাবিদ মাওলানা মুহীউদ্দীন খান, ভাষাবিজ্ঞানী ড. কাজী দীন মুহম্মদ, কথাশিল্পী আবুল খায়ের মোসলেহউদ্দীন, কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ, ড. এস এম লুৎফর রহমান, প্রফেসর হাসান আবদুল কাইউম, নজরুল গবেষক ও সাহিত্য বিশ্লেষক শাহাবুদ্দীন আহমদ, লেখক আবুল আসাদ, চিন্তাবিদ, লেখক ও গবেষক আবদুল মান্নান তালিব, সাংবাদিক, নৃতাত্ত্বিক এবনে গোলাম সামাদ, নাট্যজন আতিকুল হক চৌধুরী, শিল্পী সোহরাব হোসেন, কবি জাহানারা আরজু, ড. মালিহা খাতুন, কবি ফজল শাহাবুদ্দীন, কবি মাফরুহা চৌধুরী, ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আবদুল গফুর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ, কবি আফজাল চৌধুরী, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ, কবি সাযযাদ কাদির, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব আমজাদ হোসেন প্রমুখ।
এদের প্রত্যেকেই তার নিজস্ব জায়গায় স্বনামধন্য। খ্যাতিমান এবং বিশিষ্টজন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে এদের নাম। এসব ব্যক্তি জাতীয় জীবনে যে অবদান রেখেছেন, তারই ফলশ্রুতি আমাদের আজকের শিল্প-সাহিত্যের আলোকবর্তিকা। এদের প্রত্যেকের মুখ যদি আলাদা করে দেখা যায়Ñ দেখা যাবে এরা প্রত্যেকে একেকটি চূড়া। এদের শির বেশ উঁচু। প্রায় প্রত্যেকেই একেকটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। আমাদের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ঐতিহ্য। এদের রোপিত বৃক্ষের ছায়ায় আমাদের শিল্পাঙ্গনের বিস্তৃতি।
অথচ এদের কথা আমরা ভুলতেই বসেছি। প্রায় ভুলেই গেছি এদের কার কী অবদান? কতটা অবদান? কিছুই তো আমাদের নজরে নেই। এদের জন্ম-মৃত্যু দিন নীরবে আসে। অগোচরেই চলে যায়। এদের রচিত সাহিত্য ও সংস্কৃতির গভীর অনুসন্ধানী রচনা আমরা খুঁজি না। খুঁজছি না। পাঠ করি না এদের চিন্তাজাত লেখার সমাহার। একটি জাতি কী করে আত্মালোচনা ভুলে যায়! কী করে তার শেকড় ছিন্ন হয়ে পড়ে। আমরাই তো তার দুর্ভাগা উদাহরণ।
আল মাহমুদের এসব নিয়েও আক্ষেপ ছিল। আমাদের জাতি ভুলো জাতি। এ জাতি কেবলই সামনের সামান্যটুকু দেখে। বাকিটা দেখার চেষ্টাও থাকে না। চোখের আড়াল হলে তো কথাই নেই। মুহূর্তেই ভুলে থাকে সব। অতীতের সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি যেমন শেকড়হীন, তেমনি অতীতহীন জাতিরও থাকে না কোনো বর্ণাঢ্যতা। যে জাতি তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ভুলে যায়, তার আলোকিত ব্যক্তিত্বদের মনে রাখে না; সে জাতির পরাজয় ছাড়া আর কী-ই বা অপেক্ষায় থাকে!
যে কারণে আল মাহমুদ বলতেনÑ আমাদের জাতিটি বড় অকৃতজ্ঞ জাতি। যাদের নির্মিত প্রাসাদে এরা বসত করে তাদের নামও এরা ভুলে যায়। যাদের দানে এদের পথ নির্মিত, তাদের দিকে ফেরার অবসর এদের নেই। ফলে এরা শেকড়হীন থেকে যায়। এ জাতি তার সেরা মানুষদের সম্মান দিতে শেখেনি। মাহমুদ ভাইয়ের এ কথা কতটা সত্য, এটি বলে বোঝানোর অবকাশ নেই। আমরা এমন এক জাতি, যারা কাউকে কোলে রাখা শিখিনি। কখনো কখনো কাউকে কাউকে মাথায় তুলি। কিন্তু বেশি দিন মাথায় থাকে না তার অবস্থান। যখন মাথায় নেই তখনই পায়ের নিচে ফেলে দিতে দারুণ সিদ্ধহস্ত। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা থাকার কথা জাতির কোলে। তবেই রক্ষা পেত ভারসাম্য। আমাদের কোলে নেয়া শিখতে হবে। ব্যক্তি অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে হবে। যারা অবদান রেখেছেন তাদের প্রতি চোখ রাখতে হবে সম্মানের। কাজে-কর্মে স্মরণ করার অভ্যাস সৃষ্টি করা জরুরি। যারা চলে গেছেন, চলেই তো গেছেন। কিন্তু রেখে গেছেন সৃষ্টিসম্ভার। সেই সৃষ্টিকে আমাদের মূল্যায়ন করতেই হবে। নইলে জাতি হিসেবে আমাদের কর্ম হবে নিকৃষ্ট। আমরা হবো নীচ, হীন ও বনসাই জাতি।
যাদের নাম উল্লিখিত, এরা প্রায় সবাই আল মাহমুদের কাছের এবং সম্পর্কিত। কারো কারো সাথে ছিল ব্যক্তিগত সম্পর্ক। পারিবারিক সম্পর্কও ছিল কারো কারো সঙ্গে। সভা-সমাবেশে পারস্পরিক যোগ তো ছিলই। এর বাইরে ব্যক্তিগত আড্ডার পরিসরও ছিল অনেকের সাথে। বয়সে কেউ কেউ মুরব্বি ছিলেন আল মাহমুদের। এদের কাউকে কাউকে স্যার সম্বোধনে ডাকতেন। বয়সে কিছুটা বেশিদের ভাই এবং সমবয়সীদের নাম ধরে আপনি বলতেন। এসব বিজ্ঞজনের আল মাহমুদের প্রতিও ছিল বিশেষ মুগ্ধতা। তার প্রতি কান খাড়া ছিল সবার। দৃষ্টি ছিল সচেতন। আল মাহমুদের লেখা কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং কলাম যেখানে যেটি যার নজরে লেগেছে তারই পাঠোদ্ধার করেছেন। চেখেছেন তারই ঘনিষ্ঠ স্বাদ। মতবিনিময় করেছেন নানাভাবে। প্রশংসা করেছেন। উৎসাহ দিয়েছেন। নিজেরাও অনেকেই লিখেছেন আল মাহমুদ নিয়ে। আল মাহমুদ সত্যিই এক ভাগ্যবান কবিপুরুষ। যাকে ঘিরে ছিল সময়ের তরুণ প্রজন্ম। তার প্রতি বয়সীদের যেমন মুগ্ধতা। তেমনি তরুণদের ছিল গভীর ভালোবাসা।
বাসাপ-কেন্দ্রিক সাহিত্যের একটি আসর ছিল জমজমাট। প্রতি মাসে বসত এ আসর। এখানে প্রায় নিয়মিত ছিলেন আল মাহমুদ। ছিলেন আবদুল মান্নান সৈয়দ, শাহাবুদ্দিন আহমদ, কথাশিল্পী জামেদ আলী, অধ্যাপক মতিউর রহমান, কবি কথাশিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক মাহবুবুল হক, লোক গবেষক সিরাজউদ্দীন, কথাশিল্পী শফিউদ্দীন সরদার, ড. হুমায়ুন কবীর, কবি সাজ্জাদ হোসাইন খান, শিল্পী হামিদুল ইসলাম, কবি রুহুল আমীন খান, কবি আবদুল মুকীত চৌধুরী, ড. আবদুল লতিফ মাসুম, খোন্দকার আবদুল মোমেন, কবি স ম রফিক, অধ্যাপক ফজলে আজীম, মোহাম্মদ আবদুল হান্নান প্রমুখ।
একঝাঁক কবি ছিলেন যারা সরগরম করে রাখতেন এ আসর। ছিলেন কবি-শিশুসাহিত্যিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব জয়নুল আবেদীন আজাদ, কবি আবদুল হাই শিকদার, কবি ও বিশিষ্ট গীতিকার মতিউর রহমান মল্লিক, কবি তমিজউদ্দীন লোদী, কবি রেজাউদ্দীন স্টালিন নিজস্ব কাব্যধারায় নিয়ত সক্রিয়। তার চলন-বলন এবং বসবাস কবি হিসেবেই। কবিতাকে উদযাপন করেন তিনি। আল মাহমুদকে এরা সবাই ভালোবেসেছেন এবং ভালোবাসা আদায় করেছেন মাহমুদ ভাইয়ের কাছ থেকে। কবি কথাশিল্পী সোলায়মান আহসান, কবি হাসান আলীম, কবি মোশাররফ হোসেন খান, কবি মুকুল চৌধুরী, খোন্দকার আশরাফ হোসেন, কবি আহমদ আখতার, কবি কথাশিল্পী অনুবাদক ও ভ্রমণ সাহিত্যিক বুলবুল সরোয়ার, কবি ও শিশুসাহিত্যিক শরীফ আবদুল গোফরান, শিল্পী ও কবি ইব্রাহীম মণ্ডল, ছড়াশিল্পী ও শিশুসাহিত্যিক আহমদ মতিউর রহমান, কবি গীতিকার চৌধুরী গোলাম মাওলা, কবি মুজতাহিদ ফারুকী কবি ও গবেষক নাসির হেলাল, ইতিহাস গবেষক আশরাফুল ইসলাম, প্রমুখ। আশির দশকের এসব কবি এখন যারা বিচরণ করছেন সাহিত্যাঙ্গনে, এদের প্রায় সবাই খ্যাতিমান। আশির দশক নিয়ে কাজ করেছেন অনেকে। এর মধ্যে কবি হাসান আলীম সম্পাদনা করেছেন একটি সঙ্কলন। এ সঙ্কলনের ভূমিকা লিখেছেন কবি আল মাহমুদ। আশির দশক নিয়ে আছে একটি প্রবন্ধÑ লিখেছেন কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ। এ দশকের কবিরা ঘিরে থাকতেন আল মাহমুদের পাশ। এদের তুমুল উৎসাহ দিয়েছেন আল মাহমুদ। নিজে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এদের ভালোবাসার উষ্ণতায়। এক প্রবাহমান গতিতে এরা ছিলেন ক্রমাগত ধাবমান। কবিতা ও সাহিত্যের ভেতর দিয়ে জীবনের রহস্য উন্মোচনের আনন্দে এরা প্রত্যেকেই ছিলেন অগ্রগণ্য।
খোন্দকার আশরাফ হোসেন স্বতন্ত্র ধারার কবি। এক ধরনের রহস্য জড়িয়ে আছে তার কবিতায়। কবি আবদুল হাই শিকদার সাহসী ও উচ্চকণ্ঠের কবি। অধিকার সচেতন এ কবি আল মাহমুদের ভীষণ গুণমুগ্ধ। কবি মতিউর রহমান মল্লিক আল মাহমুদকে পিতৃতুল্য সম্মান করেছেন। আশির দশকের একজন শক্তিমান কবি এবং গীতিকার ও শিল্পী তিনি। সাংস্কৃতিক সংগঠক হিসেবেও তার খ্যাতি রয়েছে বেশ। কবি সোলায়মান আহসান নাটক ছাড়া সবই লেখেনÑ লিখছেন। বৈশ্বিক বিষয়-আশয়ও তার নজরে সদা জাগ্রত। কবি তমিজ উদ্দিন লোদী শক্তিমান ও মেধাবী কবি। গল্পকার এবং ঔপন্যাসিক হিসেবেও তার অবস্থান অগ্রগণ্য। কবি হাসান আলীম বরাবরই পরীক্ষাপ্রবণ কবি। ছন্দ নিয়ে তার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা। ছন্দকে বিজ্ঞানভিত্তিক বাস্তবতা দেয়ার এক ধরনের প্রয়াস নিয়েছেন তিনি। কবি মোশাররফ হোসেন খান কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখছেন নিয়ত। সম্পাদনায়ও রয়েছে তার বেশ অবদান। কবি বুলবুল সরোয়ার বেশ শক্তিশালী কবি এবং ভ্রমণ রচয়িতা। অনুবাদেও তার হাত বেশ পোক্ত। ঔপন্যাসিক হিসেবেও তার রয়েছে স্বীকৃতি। মুকুল চৌধুরী শক্তিমান কবি। সম্পাদনা এবং গবেষণায়ও তার রয়েছে নিজস্ব স্থান।
এদের বেশির ভাগই ইউনিভার্সিটিপড়–য়া। দৃষ্টিভঙ্গি উদার ও আধুনিক। জীবনকে বেপরোয়া করে তোলেননি কেউ। সংহত সুন্দরের সাথে এদের বসবাস। নব্বইয়ের দশকের কবিরাও ছিলেন একঝাঁক, যারা পাগলের মতো ভালোবাসতেন আল মাহমুদকে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে তারা সঙ্গ চাইতেন আল মাহমুদের। বাসায়, বাইরে ও আসরে এরা প্রায় ওঁৎপেতে থাকতেন আল মাহমুদের দিকে। কখন তাকে কাছে পাওয়া যাবে। কখন পাশাপাশি কিংবা মুখোমুখি হবেন। চা-সিগারেট ও কবিতার আলোচনায় মুখর হবেন কখন। এভাবে আল মাহমুদ বিস্তারিত হয়েছেন তারুণ্যের কাছে। কবি মারজুক রাসেল, কবি সায়ীদ আবু বকর, কবি শান্তা মারিয়া, কবি জামশেদ ওয়াজেদ, কবি তৌফিক জহুর, কবি ও গবেষক মুহম্মদ আবদুল বাতেন, কবি ফাতিমা তামান্না, কবি জামালউদ্দীন বারী, কবি সৌমিত্র দেব, কবি মনসুর আজিজ, কবি নাসির মাহমুদ, কবি সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব, কবি ওমর বিশ্বাস, কবি নকিব হুদা, কবি সাজ্জাদ বিপ্লব, কথাশিল্পী নাসিমুল বারী, ছড়াকার মানসুর মোজাম্মিল, ছড়াকার নূরুজ্জামান ফিরোজ, কবি গল্পকার রফিক মুহাম্মদ, ছড়াকার আমিন আল আসাদ, কবি নাঈম মাহমুদ, কবি নিয়াজ শাহিদীসহ বিপুলসংখ্যক তারুণ্যদীপ্ত কবি একটি প্রবাহের মতো আবর্তিত হয়েছেন। যাদের চোখে ছিল সীমাহীন স্বপ্নের পরিসর। যারা জগতের বহমানতাকে নতুন করে দেখার অঙ্গীকারে উজ্জীবিত।
যারা নরনারীর সম্পর্কের সৌন্দর্য ও সীমানায় আলোকের সন্ধ্যানী। মানুষের অধিকার ও মর্যাদার বিষয়ে যাদের দৃষ্টি তীক্ষè। এ ধরনের তরুণ তুর্কিদের সাথে আল মাহমুদ ছিলেন সাবলীল। তরুণ যত তরুণই হোক, তিনি নেমে আসতেন বন্ধুত্বের রেখায়। বয়সের দেয়াল ভাঙার এক আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল মাহমুদ ভাইয়ের। খুব সহজে একজন কবিকে কাছে টানা, একজন তরুণকে গ্রহণ করার সহজতা তাকে দিয়েছে ভালোবাসার আশ্চর্য আলোক। জীবনের অনুসন্ধানী দৃষ্টি এবং সহজ হয়েও গাম্ভীর্যতার আবহে তিনি ছিলেন তারুণ্যের শ্রদ্ধারও। সীমা অতিক্রমকারী তরুণকে সাথে সাথেই সাবধান করে দিতেন। সেটি কোনো কটুবাক্যে নয়। কাব্যিক সৌন্দর্যের লীলায় তাকে বুঝিয়ে দিতেন। তরুণ কবিদের হেঁয়ালিকে তিনি কখনো কখনো প্রশ্রয় দিয়েছেন ঠিক। একই সাথে সতর্কও করেছেন নানা উচ্চারণে। কবিতা এবং জীবন হেঁয়ালিপনার কাছে ধরা দেয় নাÑ এমনই বলতেন তিনি। জীবন কোনো তুচ্ছতায় উড়িয়ে দেয়ার বিষয় নয়। কবিতাও নয় কোনো যেনতেন শিল্পের উত্তরাধিকার। যেহেতু জীবনের সাথেই জড়িয়ে কবিতা, সেহেতু কবিতা বুঝতে হলে জীবনকে বুঝের বাইরে রাখা চলে না। কবিতার দ্বন্দ্বে জীবনকে অর্থহীন খরচ করার প্রবণতা রুখে দিতে ব্যর্থ হলে জীবন ব্যর্থ হয়ে যায়। ব্যর্থ জীবনে কবিতার সাফল্য কখনো কামনা করা যায় না। কবিতা জীবন ও মননের তুঙ্গের বিষয়। আত্মার সান্নিধ্যের বিষয়। মন ও হৃদয়ের স্বচ্ছতার বিষয়। এ স্বচ্ছতায় যে যতটুকু কালিমালিপ্ত করে তার কবিতা ততটা অভাগা। হ


আরো সংবাদ



premium cement