০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


শ্রুতি ও স্মৃতির সোনালি শিখা যেমন দেখেছি তাকে

-

বাইশ.

কবি ওমর আলী। তিনি পঞ্চাশ দশকের কবি। আল মাহমুদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন। ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চতর ডিগ্রি ছিল তাঁর। ইংরেজি সাহিত্যই পড়িয়েছেন কলেজে। কলেজটি ছিল পাবনায়। ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে তার নামটি বেশ বড় হয়ে উঠেছিল। বিশ্বসাহিত্যের এই ব্যক্তিটি আমৃত্যু প্রকৃতির মধ্যেই ডুবেছিলেন। প্রকৃতি নিয়েই তার কবিতার অগ্র-পশ্চাৎ। ইংরেজি সাহিত্যের ডাকসাইটে ছাত্র এবং শিক্ষক হয়েও কেন প্রকৃতির স্তব্ধতায় মুখ গুঁজেছিলেন এটি এক আশ্চর্য রহস্যই বটে।
যতদূর ওমর আলীকে দেখেছি তিনি প্রকৃতির মতোই উদার এবং সরল ছিলেন। শিশুসুলভ সৌন্দর্য যাকে কাব্যিক নান্দনিকতা বলে, তা পুরোমাত্রায় উজ্জ্বল ছিল ওমর আলীর মধ্যে। ওমর আলীর সাথে আমারও একটি হৃদ্যতা গড়ে উঠেছিল। তিনি বহুবার এসেছেন আমার অফিসে। তার অনেক কবিতা ছেপেছি। ছাপা কবিতা দেখে শিশুর মতো আনন্দে হই হই করে উঠতেন। ফোনে ভীষণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেন। মোবাইলের এ যুগে এবং ইন্টারনেটের এ প্রবল ডিজিটাল সময়েও তিনি অনেক চিঠি লিখেছেন আমাকে। চিঠি কখনো কুরিয়ারে পাঠাতেন না। একেবারে ডাকযোগেই পাঠাতেন। প্রতিটি চিঠিতে কোথাও না কোথাও আল মাহমুদের প্রসঙ্গ তুলতেন। জানতে চাইতেন আল মাহমুদ কেমন আছেন। কী লিখছেন! সব মিলিয়ে আল মাহমুদের খবরাখবর জানার তৃষ্ণা ছিল তার প্রবল। ‘এ দেশে শ্যামল রঙ রমণীর সুনাম শুনেছি’ ওমর আলীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। বইয়ের নামের মতোই প্রথম কাব্যগ্রন্থে কবিতাঙ্গনে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল। আল মাহমুদের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব লেখালেখির শুরুর দিক থেকেই। আল মাহমুদ পুরান ঢাকায় থাকতেন। ওমর আলীও পুরান ঢাকার একটি বাসায় লজিং থাকতেন। আল মাহমুদের প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার ইতি ঘটলেও ওমর আলীর ছাত্রত্ব তখনো সজীব। কিন্তু কবিতা লিখছেন দু’হাতে। ছাপাও হচ্ছিল নানা পত্রপত্রিকায়। লেখালেখির সূত্রে দু’জনের ঘনিষ্ঠতা। দু’জনের মুখেই একটি ঘটনা শুনেছি। দু’জনের প্রথম রেডিওতে কবিতা পাঠ এবং কবি ফররুখ আহমদের সাথে পরিচয়। দু’জনকেই ঘটনাটি আলোড়িত করেছিল। বিবরণটি এমনÑ একদিন সকালবেলা আল মাহমুদ নাশতা খেতে নামবেন। ঠিক এ সময় একরকম হাঁপাতে হাঁপাতে উপস্থিত হলেন ওমর আলী। বোগলের নিচে একটি খবরের কাগজ। এসেই পত্রিকা সামনে রেখে বললেনÑ আল মাহমুদ, পত্রিকায় আমার কবিতা ছাপা হয়েছে। একটু আগেই কবিতাটি পড়েছিলেন আল মাহমুদ। বললেনÑ হ্যাঁ, ওমর আমি পড়েছি। ‘বৃষ্টির বিপদে একটি চড়–ই’। খুব ভালো কবিতা। আজ তোমার আনন্দের দিন। চলো তোমাকে নাশতা খাওয়াই। বলেই দুই বন্ধু বের হলেন নাশতার উদ্দেশ্যে। জংসন রোডের একটি রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়লেন। পছন্দমতো নাশতার অর্ডার দিলেন। এবং মনের মতো করে খেলেন। খেতে খেতে নানা রকম কথা। একসময় ওমর আলী বললেনÑ আমি একটি খুশির খবর নিয়ে এসেছি আল মাহমুদ। নড়েচড়ে বসলেন আল মাহমুদ। চোখ চকচক করে উঠল। বললেনÑ শুনি খুশির খবরটি।
আমাদের দু’জনকে কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে রেডিও পাকিস্তান। বেশ আনন্দের সাথে কথাটি বললেন ওমর আলী। শুনে আল মাহমুদের ভেতরটাও আনন্দে দুলে উঠল। এই প্রথম রেডিওতে কবিতা পাঠের আমন্ত্রণ। ভেতরটা খুশিতে নেচে ওঠা স্বাভাবিক। বললেন আল মাহমুদÑ কবে কখন?
ওমর আলী বললেনÑ দু’দিন পরেই। সরাসরি সম্প্রচার। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করবেন মুনীর চৌধুরী। মুনীর চৌধুরীর উপস্থাপনা শুনে আল মাহমুদের আনন্দ আরো বেড়ে গেল। সেই সাথে দুরুদুরু শুরু হলো বুকের তলায়। সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান! রেডিও! মুনীর চৌধুরী! এসব মিলে আনন্দ ও ভয়ের দোলাচলে দুলতে দুলতে দু’জন বের হলেন রেস্তোরাঁ থেকে। বেতার তরঙ্গ বুকের ভেতর ঢেউ তুলতে থাকল।
দু’দিন বাদে দুই বন্ধু সময়ের খানিক আগেই হাজির হলেন রেডিও অফিসে। রেডিও অফিস তখন নাজিরা বাজার। মুনীর চৌধুরী তখনো আসেননি। রেডিও অফিসের গেটের পাশে একটি রেস্টুরেন্ট ছিল। যেখানে চা সিঙ্গারাসহ আরো কিছু খাবারের আয়োজন আছে। কিন্তু দুই কবির কারো কাছেই বিল শোধ করার মতো টাকা ছিল না। ফলে রেডিও অফিসের এক জায়গায় মুনীর চৌধুরীর জন্য অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে রইলেন। এ সময় আল মাহমুদের পরিচিত একজন লোকের সাথে দেখা। তিনি রেডিওতে কর্মরত। বললেনÑ তোমরা কবি ফররুখ আহমদকে চেনো? এসো পরিচয় করিয়ে দেই।
ফররুখ আহমদের নাম শুনে নতুন শিহরণ জাগল দু’জনের মনেই। ফররুখ আহমদ রেডিওতে কর্মরত এ কথা তাদের জানাই ছিল। কিন্তু তখন দেখা করার বিষয়টি মাথায় আসেনি কারো। এর আগে ফররুখ আহমদের সাথে দেখা হয়নি। অথচ ফররুখের কবিতা গোগ্রাসে গিলেছেন দু’জনই। ফররুখ আহমদের কবি খ্যাতি তাঁর ব্যক্তিত্ব ও কবিতাঙ্গনে তাঁর প্রভাব সম্পর্কে সম্যক ধারণা ছিল দু’জনের। ফলে লোকটি ফররুখ আহমদ নাম বলার সাথে সাথে অন্য ধরনের কাঁপুনি অনুভব করলেন দু’জন।
লোকটির পিছে পিছে ছুটছেন দুই কবি। বিল দেয়ার ভয়ে যে রেস্টুরেন্টে ঢোকেননি সেখানেই প্রবেশ করলেন লোকটি। একটি টেবিলে গিয়ে থামলেন। ওই টেবিলেই বসা একজন লোক। ব্যাকব্রাশ করা লম্বা চুল ঘাড়ে এসে পড়েছে। গায়ের রঙ একদম ফর্সা। ঈগলের ঠোঁটের মতো নাক। কপালের নিচে দু’টি চোখ যেন ধ্রুব তারার মতো জ্বলছে। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব নিয়ে বসে আছেন লোকটি। লোকটি বললÑ এরা দু’জন কবি। এর নাম আল মাহমুদ। আর ও হলো ওমর আলী। দু’জনকে লক্ষ্য করে বললেনÑ ইনি কবি ফররুখ আহমদ।
দু’জনের ভেতরে এক ধরনের ভয় ও শ্রদ্ধার কম্পন। দু’জনের দিকে একবার চোখ বোলালেন ফররুখ আহমদ। বললেন, বসো। খানিকটা জড়োসড়ো হয়ে বসে পড়লেন দু’জন। চা-সিঙ্গারা দেয়ার কথা বললেন ফররুখ আহমদ।
দু’জনই বিস্ময়ের সাথে দেখছিলেন ফররুখকে। ফররুখ আহমদ সম্পর্কে দূর থেকে দেখা সব কথা মিলিয়ে দেখছিলেন। ফররুখ আহমদ ছিলেন তখন কবিদের একটি কেন্দ্র। যাকে ঘিরে জমতো কবিতার আড্ডা-আসর। তখনকার সব খ্যাতিমান কবি, গীতিকার এবং সাহিত্যাঙ্গনের মানুষ প্রায় সকলেই ফররুখ আহমদের ছায়ায় গেছেন। তার সাথে পরিচিত হওয়ার এবং তাঁর সুনজরে আসার চেষ্টা করেছেন। সবাই তাঁকে শ্রদ্ধার সাথেই গ্রহণ করেছেন। ভালোবেসেছেন। তাঁর মাপের কবি তখন কেউ ছিল না। কবিতার উচ্চতা এবং ব্যক্তিক দর্শনে তিনি ছিলেন উপমারোহিত। একজন বড় কবি এবং আদর্শবান ব্যক্তিত্ব্ দুইয়ে মিলে তার চার পাশ ছিল ওজনদার। তাঁর কাছে যাননি এবং তাঁকে নিয়ে লেখেননি এমন বড় কবি লেখক ছিলেন না একজনও। এ সবই জানা ছিল আল মাহমুদ ও ওমর আলীর। তাঁরা ফররুখ আহমদের সামনে নিজেদের গুছিয়ে কিছু বলার সাহসই করতে পারছিলেন না।
যা দু-চার কথা বললেন ফররুখ আহমদই। কার বাড়ি কোথায়? কোথায় থাকেন? কেমন চলছে লেখালেখি এসবই। অল্পক্ষণের মধ্যে মুনীর চৌদুরী এসে পড়লেন। ফররুখ আহমদ থেকে বিদায় নিয়ে দু’জনই ঢুকলেন স্টুডিওতে। সামান্য সময়ে ফররুখ আহমদ দু’জনের বুকজুড়ে বিস্তারিত হলেন।
কবিতা পড়লেন দু’জন। আল মাহমুদের কবিতা পাঠ সেদিন খুব জমেনি। তার আঞ্চলিক উচ্চারণ এবং প্রথম পাঠের ভয় দুইয়ে মিলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কবিতা। ওমর আলী অনেকটা উৎরে গেলেন। মুনীর চৌধুরী ওমর আলীর কবিতার বেশ প্রশংসা করলেন। আল মাহমুদের কবিতার বিষয় এবং কবিতা ভালো এ কথা বলেছেন। সেই সাথে বলেছেন তাঁর উচ্চারণ অসুবিধার কথা। উচ্চারণের কারণে কবিতা ভালো শোনায়নি। আল মাহমুদ বললেনÑ সেদিন ওমর আলীর প্রতি আমার ঈর্ষা জেগে উঠেছিল। ভেতরে ভেতরে সিদ্ধান্ত নিলাম আমাকে এ দুর্বলতার ঊর্ধ্বে উঠতেই হবে। খুব সহসা উঠেছিলেন তিনি।
ফররুখ আহমদ আল মাহমুদের মনে গেঁথে গেলেন। আগাগোড়া তাঁর কবিতা পাট করলেন। তাঁর কবিতা পড়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা বৃদ্ধিই পেতে থাকল। ফররুখ ভাই বলেই ডাকতেন তাঁকে। ঘরোয়া আলোচনায় অথবা অনুষ্ঠানাদিতে যখনই ফররুখের নাম নিতেন ফররুখ ভাই বলেই নিতেন।
বড় কবিদের ব্যাপারে সম্বোধনে কিছু পারিভাষা ছিল আল মাহমুদের। মাইকেল মধুসূদন দত্তকে মাইকেল নামেই উচ্চারণ করতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরÑ রবীন্দ্রনাথ নামে ভাষা পেয়েছেন। কাজী নজরুল ইসলামকে বলতেন কাজী সাহেব। বুদ্ধদেব বসুকে বুদ্ধদেব বসু পুরো নামেই সম্বোধন করতেন। জীবনানন্দ দাশকে বলতেন জীবনান্দ। তাঁর প্রিয় এক কবি জসীমউদ্দীনকেও পুরো নামে বলতেন। শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী দুজনের পুরো নাম উচ্চারণ করতেন। ফজল শাহাবুদ্দীনকে ডাকতেন ফজল বলে। এভাবে ফররুখ আহমদকে ফররুখ ভাই বলতেন।
ফররুখ আহমদের ব্যাপারে তাঁর ব্যক্তিগত চেতনা ছিল। তাঁর প্রতি ছিল অগাধ ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা। ফররুখ আহমদ ছিলেন মানবিক কবি, মানবতার কবি এবং রোমান্টিক কবিÑ এ কথা বারবার বলেছেন। আদর্শিক চেতনা থেকে ফররুখ আহমদ ছিলেন আলিফের মতো খাড়া, এ কথাও স্মরণ করতেন আল মাহমুদ। সেই সাথে বলতেনÑ ফররুখ ভাইয়ের মতো আমি আপসহীন হতে পারিনি এবং পারব না।
তার কথায়Ñ আমি মনে করি কবিদের আপস করেই বাঁচতে হয়। ফররুখ ভাই আপসহীন ছিলেন এটি তাঁর উন্নত চরিত্রের লক্ষণ। আমি এটা কখনো পারিনি। পারিনি কারণ, আমাদের সমাজ কবিতার অনুকূল সমাজ নয়। আমাদের জাতি এখনো শিল্প-সাহিত্যের জন্য প্রস্তুত হতে পারেনি। যে সমাজ একজন লেখককে ঠকিয়ে ব্যবসা করার মানসিকতা রাখে সে সমাজের অবস্থা অনুমান করা কঠিন কিছু নয়। কবিতাবিরোধী লোকের অভাব সমাজে নেই। সবচেয়ে বড় কথা যিনি শিল্প-সাহিত্যের লোক নন, যিনি কবিতা বোঝেন না তিনি যখন মালিক পক্ষ হন এবং তিনিই যখন শিল্প-সাহিত্যের এবং কবিতার নির্দেশনা দেন সেখানে কী ঘটতে পারে এটি খুব সহজে বোঝা যায়। ফররুখ ভাই অবশ্য এসবের তোয়াক্কা করতেন না। এসব তথাকথিত মালিক পক্ষ এবং বিত্তবানদের দিক থেকে তিনি মুখ ফিরিয়ে নিতেন। ঘৃণা করতেন এ মানসিকতার অর্ধশিক্ষিক লোকদের।
আল মাহমুদ আমৃত্যু শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা জমা রেখেছিলেন ফররুখ আহমদের দিকে। হৃদয় থেকে সম্মান প্রদর্শন করতেন। প্রেমের জায়গা থেকেই উচ্চারণ করতেনÑ ফররুখ ভাই। ফররুখ আহমদের প্রতি তার মনে আসন কতটা উচ্চ ছিল ফররুখকে নিবেদিত তাঁর কবিতাÑ ‘ফররুখের কবরে কালো শেয়াল’ পড়লেই অনুমান করা যায়।
একদিন কবি ওমর আলী এলেন আমার অফিসে। এসেই বললেনÑ আজ কিন্তু আমাকে আল মাহমুদের বাসায় নিয়ে যেতে হবে। এত বয়সী একজন কবির আবেগ উচ্ছ্বাস দেখে আমি অবাক। শিশুর মতো চঞ্চলতায় মনের আবেগ প্রকাশ করছিলেন তিনি। বললেন চলুন যাই। তাঁর আবেগের কাছে কোনো কৈফিয়ত চলবে বলে মনে হলো না। বললাম চলুন তবে। আল মাহমুদ তখন চোখে প্রায় দেখছিলেন না। একা চলাচল নয় শুধু কারো সাথে চলাচলেও ভয় পাচ্ছিলেন। একটি রিকশায় চড়ে আমরা পৌঁছে গেলাম মগবাজার ওয়্যারলেস মোড়ে। আল মাহমুদের বড় ছেলে শরীফ আল মাহমুদের বাসায়। এখানে থাকতেন আল মাহমুদ। সময়টি আসরের আগে আগে। ঘুমাচ্ছিলেন আল মাহমুদ। বড় ছেলেই ডেকে তুললেন। আমি বললামÑ আপনার বন্ধু কবি ওমর আলী এসেছেন।
শুনেই দ্রুত ওঠার চেষ্টা করলেন। কিন্তু সাহায্য ছাড়া শোয়া থেকে উঠতে পারলেন না। বড় ছেলের সাহায্যে উঠে বসলেন। বললেনÑ ওমর তুমি এসেছ? আজ ক’দিন তোমাকে বেশ মনে পড়ছিল। মনে পড়ছিল কবিতার জন্য আমাদের ছুটে বেড়ানোর দিনগুলোর কথা।
ওমর আলী আল মাহমুদের ডান হাতটি দু’হাতের মুঠোয় পুরে নিলেন। হাত ধরেই বললেনÑ সত্যিই আমাদের সেই দিনগুলি কত না আনন্দের ছিল। বললেনÑ গত ক’দিন ধরে খুব মনে পড়ছিল তোমাকে। আমার শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না। এখন কেনো জানি জীবনটা অতীতমুখী হয়ে পড়েছে। উঠতে বসতে বিশেষ করে একা হলেই অতীতের দিনগুলি সামনে হাজির হয়। কত কিছু যে ভেসে ওঠে মনের পর্দায়! বার্ধক্যে মনে হয় এমনি হয় মানুষের জীবন। মানুষ তখন অতীতেই বেঁচে থাকে মানুষ।
ঠিকই বলেছ ওমর। অতীত এ সময় আয়না হয়ে ওঠে। অতীতের আয়নায় মুখ দেখে মানুষ। আমাদের জীবনটি সেই আয়নার সামনেই দাঁড়িয়েছে এখন।
লেখালেখি কারো তেমন হচ্ছে না এ নিয়ে আফসোস করলেন দু’জন। হাত দুহাতে ধরেই রাখলেন ওমর আলী। বললেনÑ তুমি তো কবিতার কিংবদন্তি হয়ে গেছ আল মাহমুদ। কিন্তু আমাদের কেউ স্মরণ করবে কিনা জানি না। একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ওমর আলী। বললেনÑ আমার গাড়ির সময় হয়ে গেছে। পাবনায় ফিরে যাব আজই। ভালো থেক আল মাহমুদ। আর দেখা হয় কিনা জানি না। আল মাহমুদের হাতটি তখনো ধরে রেখেছিলেন তিনি। মুখে কোনো কথা বললেন না আল মাহমুদ। এবার তিনিও ওমর আলীর দু’হাত নিজের দু’হাতে চেপে ধরলেন। দু’জন দু’জনের দিকে চেয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। বসা থেকে উঠলেন ওমর আলী। হাত ছাড়লেন। দেখলাম দু’জনের চোখ থেকে নীরব অশ্রুফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে।
ফিরে যাওয়ার ক’দিন পরেই খবর পেলাম ওমর আলী ভীষণ অসুস্থ। সেন্স হারিয়েছেন। পাবনায় একটি হাসপাতালে ভর্তি। অর্থনৈতিক সমস্যায় তাঁর চিকিৎসা যথাযথ হচ্ছে না। বুকের ভেতর যাতনা অনুভব করলাম।। এত বড় মাপের একজন কবি। তার চিকিৎসার অর্থ নেই হায় সমাজ! হায় দেশ! এত নির্মমতা কেনো তোমাদের বুকে? তোমরা কেনো একজন কবির পাশেও দাঁড়াতে পারো না। তবে কেনো সমাজ? কেনো মানবিক বন্ধনের এত জাল? তবে সবই কি মেকি! সবই লোক দেখানো আচার?
ওমর আলী বেশ কিছু দিন রোগশয্যয় পড়েছিলেন প্রায় বিনা চিকিৎসায়। একদিন তার শেষ নিঃশ্বাসটি মিলিয়ে গেল পৃথিবীর বাতাসে। তিনি চলে গেলেন চিরদিনের তরে। খবরটি মাহমুদ ভাইকে জানালাম। শুনে অনেকক্ষণ কোনো কথা বললেন না। উদাস চেয়ে রইলেন জানালার ফাঁক গলে এক চিলতে আকাশের দিকে। একসময় স্বগতোক্তির মতো বললেনÑ মানুষের জীবন সত্যিই খুব ছোট।
[চলবে]

 


আরো সংবাদ



premium cement
গ্রিড লাইনের ত্রুটিতে সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ভুক্তভোগী নারী ও তার পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের হয়রানির প্রতিবাদ বাড্ডায় নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার কথিত স্বামী পলাতক গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করবে খতমে নবুওয়ত ঝিনাইদহ-১ আসনে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নায়েব আলী জাতীয় গ্রিডে ত্রু‌টি, সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাবিতে নিয়মিত ২০ আসন বরাদ্দ রেকর্ড গড়ে সাদিক খান আবারো লন্ডনের মেয়র আগামী ২ মাসের মধ্যে ভাঙ্গা-খুলনা-যশোর পর্যন্ত ট্রেন চালু হবে : জিল্লুল হাকিম ফতুল্লায় ব্যবসায়ী অপহরণ, গ্রেফতার ৭ তাপদাহের কারণে গোসল করতে গিয়ে কলেজছাত্রের মৃত্যু

সকল