২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাহিত্য কবিতা

-

রেজাউদ্দিন স্টালিন
সরলার সংক্ষিপ্ত জীবনী

পৃথিবীর যে মেয়েটি আকাশরাজের বাড়ি
কাজ করে তার নাম সরলা
সেই কবে মাকে দেখেছে মনে পড়ে না
কিন্তু বাড়ির পাশের গাছপালা নদী
খেলার সাথী টুনটুনির কথা মনে আছে

কত কাজ তার হাতে
প্রতিদিন আকাশরানীর মেঘশাড়ি কাঁচতে হয়
তাদের একমাত্র ছেলে সূর্যদেবের জন্যে বেড টি দিতে হয়
শ্যালক ধূমকেতু শিকার নিয়ে ফিরলে
তারাবকের রোস্ট বানাতে হয়
গা হাত পা টিপতে হয় এমনকিÑলজ্জাগুলোও

আকাশরানীর মা চাঁদ বুড়ির অঘুমের অসুখ
তার জন্যে বাটা ভরে পান ছেঁচতে হয়

সরলার নিজের বলে কিছু নেইÑ নীরবতা ছাড়া

একবার ঘোড়ায় চড়া উল্কা কুমারকে দেখেছিলো এক ঝলক
সেই ভালোলাগার কথা ভয়ে কোনোদিন মুখ থেকে সরেনি
এখনো সে স্মৃতি বুক ভার করা দীর্ঘশ^াস

মেঘশাড়ি নাড়তে ছায়াপথের পাশে
কিংবা ছাদে দাঁড়িয়ে মায়ের কথা মনে হলে
চোখ ভরে কাঁদে
তখন পৃথিবীতে অনেক বৃষ্টি হয়
সরলার মা ভাবে তার মেয়ে সুখে আছে

শাহীন রেজা
হাতিমের তলোয়ার

ভুল হয়ে যায় ভুল হয়ে যায় ভুল হয়ে যায় সব
বর্ষা নেমেছে তবু নাই কেনে াডাহুকের কলরব
ফররুখ নাই ভোঁতা বুঝি তাই হাতিমের তলোয়ার
সিন্দাবাদের জাহাজের পালে ঈশানের বায়ুভার

ভুল হয়ে যায় ভুল হয়ে যায় ভুল হয়ে যায় শুধু
এতো খুঁজি তবু প্রণয়পাষাণে ঈগলের ছোঁয়া ধুধু
আসমানে নাই আদমসুরাত ফোরাতের বুকে পানি
সীমারের ছোরা হননের পথে ক্রমাগত সেতো জানি

ভুল হয়ে যায় ভুল হয়ে যায় ভুল হয়ে যায় কাজে
জমেছে অগ্নি জেগেছে দহন ধূসরের ভাঁজে ভাঁজে
ঈমানের জোর নিয়মের বাণী শুধুই একলা কাঁদে
ব্যাকুল কবিতা অকরুণ আঁকা জীবনের পাতা ফাঁদে।

সায়ীদ আবুবকর
রাতের নগরী

রাতের নগরী নেশায় উত্তাল।
নাচে তন্বী স্বপ্নের নারীরা
নগরনাট্যমে। বেসামাল
মানুষেরা; ওঠে
উথলে তাদের শিরা-উপশিরা
উন্মাদ উচ্ছ্বাসে। ঠোঁটে
বাজে শিস, প্রাণে কবন্ধ কামনাÑ
নীলপদ্ম পায়ে নর্তকীর ঝরে ঝরে পড়ে সোনা।

এইসব মানুষেরা কেবলি শরীরী;
কেবলি কামান্ধ কায়ার উল্লাসে
বেতাল, বেহুঁশ; এদের স্বপ্নের সিঁড়ি
ওঠে নাই ঊর্ধ্বাকাশে,
উল্টো নেমে গেছে নিচে, বহু নিচে
অথৈ অন্ধকারে ডোবা নরকেরও নিচেÑ
ঘৃণার কিরিচে
যেখানে জন্মান্ধ ডাকিনীরা কাটে চৌপ্রহর
মানুষের অবোধ অন্তর।

সুব্রত দাশ আপন
শরতের খড়কুটো

মাটির ইশারায় হাসে বৃক্ষরাজি
বাতাসে দোলে কাশফুল
সবুজের অবারিত মোহে কোকিলের কুহুধ্বনি
বটবৃক্ষের ছায়াতলে রাখালের বাঁশির সুর।

সুর ছন্দ ব্যাঞ্জনায় কবিতার পঙক্তিতে
প্রেমের উদ্বিপ্ত আলো
হিমস্নিগ্ধ আবহাওয়ায় ঘাটে নৌকা বাঁধা
আকাশে রোধ জমকালো।

তৃপ্তির আলিঙ্গনে চঞ্চল প্রবাহে করি সমুদ্র ¯œান
শুনি আযান, উলু শঙ্খের প্রতিধ্বনি
শরতের খড়কুটো, ঋতুরটান, পাখির কলতান
সুশোভিত গন্ধে প্রকৃতির কাছে চিরঋণী।

আয়েশা মুন্নি
অপরিত্যাজ্য আত্মা

ভীষণ মন খারাপের বেলাভূমিতে
ঘৃণার নিকষ কালো মেঘে ছাওয়া
আঁধারে ঢাকা স্বপ্নিল প্রান্তর।
আবেগের ভয়াবহ মত্ততায়
অসমাপ্ত স্বপ্নেরা নিহত।
অনুর্বর মগজেরসন্ন্যাসী ভালোবাসা
অন্ধকারের ফুল হয়ে ফোটে।
ধূসর নিস্তব্দতায় নীরবে, নিভৃতে,
সঙ্গোপনে স্পর্শের অনুভবে
অপরিত্যাজ্য দু’টি আত্মা।
অঙ্কুরিত ােভে কষ্টের কালো রঙ,
কবিতার আশ্রয়ে কান্তিতে হেলান দিয়ে
বিবেকের কাঠগড়ায় বন্দী।
মুক্তোর মতো স্থির সুখ বেদনা হয়ে লুটায়
ছায়াহীন পাহাড় চূড়ায়।
হৃদয়ালে
শব্দ, বাক্য, অরে বিন্দু বির্সগে
প্রকৃতির মতো অকৃত্রিম হই।
অতঃপর
হৃদয়ে বজ্রপাতের কম্পনে,
নির্জন দ্বীপের মতো নিঃসঙ্গ হই।

মুহাম্মদ রেজাউল করিম
নতজানু পথ

উদ্ভট কারখানা মেশিনের বুনন
গোলাপী অথবা কালো অবয়ব
বোধের বাজার নেই
নগ্ন হেঁটে বেড়ায় যন্ত্রগুলো

শব্দের ত্রিভূজ মহড়া কালো গ্যাস ওড়ে
চৌচির পাথর অগণন
চোখ খুলে উদ্ভট কারখানা
ডুবে যায় ডোর
নির্বাক দূর গ্রাস, সড়কের কণ্ঠ
কারখানা ঘিরে নতজানু পথ
ক্রমাগত উড়ে বাজপাখি ছাদের ওপর।


আরো সংবাদ



premium cement