২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুদানিদের ভয় বিদেশী শক্তির হস্তক্ষেপ

-

সুদানে বিদেশীদের স্বার্থ নানামুখী। আফ্রিকা মহাদেশের সর্ববৃহৎ দেশ সুদান। মুসলিমপ্রধান এ দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে খ্রিষ্টানরা বসবাস করে। সুদানের রাজধানী খার্তুমের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগের সাথেই চোখ রাখছে বিশ্বের বড় বড় কয়েকটি শহরÑ রিয়াদ থেকে কায়রো ও আঙ্কারা থেকে মস্কো। আর এসবেরই ভয় পাচ্ছে সুদানিরা। কখন তাদের ওপরও সরাসরি হস্তক্ষেপ চলে আসে; যেমনটা এসেছে ইরাক, সিরিয়া, কুয়েত কিংবা সৌদি আরবের ওপর।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সঙ্ঘাতের পেছনে যেসব বিষয় ও দেশের ভূমিকা রয়েছে, সুদানের সঙ্কটেও আছে সেসব দেশ। বিশেষ করে, সৌদি আরব ও তার মিত্র উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে তুরস্ক ও কাতারের বিরোধ। সৌদি আরবসহ সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সুদানের প্রতিবেশী দেশ মিসর খার্তুমের সামরিক শাসককে বড় ধরনের সমর্থন দিচ্ছে। এই তিনটি দেশই চেষ্টা করেছে ওই অঞ্চলে আরব বসন্তের মতো জনপ্রিয় আন্দোলন ঠেকাতে। চেষ্টা করেছে এই আন্দোলনের কোনো প্রভাবই যাতে তাদের দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে। বিশেষ করে ইসলামপন্থী দল মুসলিম ব্রাদারহুডকে দমন করার ব্যাপারে তারা খুবই সতর্ক থেকেছে। তারা প্রত্যেকেই মনে করে এই আন্দোলন এবং মুসলিম ব্রাদারহুড তাদের মতো স্বৈরাচারী সরকারের জন্য বড় ধরনের হুমকি। সুদানের সামরিক বাহিনীকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিচ্ছে রিয়াদ ও আবুধাবি। দেশটির বেসামাল অর্থনীতিকে সামাল দিতে এরই মধ্যে বিপুল অর্থ ঋণ দিয়েছে। উমর আল বশিরের পতনের পর দেশটিতে এসব দেশের প্রভাব আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুদানের বিষয়ে সৌদি আরব, আমিরাত ও মিসরের অবস্থানের বিপরীতে আছে তুরস্ক ও কাতার। খার্তুমের সাথে তাদেরও আছে দীর্ঘ দিনের সুসম্পর্ক। আফ্রিকার এই দেশটিতে কৃষি ও খাদ্য খাতে বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেছে কাতার।
অন্য দিকে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ও উমর আল বশিরের শাসনামলেও সুদান ও তুরস্কের মধ্যে নতুন করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। লোহিত সাগর একসময় অটোমান সাম্রাজ্যের দখলে ছিল। এমন একটি বন্দর সুয়াকিনের উন্নয়নের জন্য তুরস্ক ও সুদানের মধ্যে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে চার শ’ কোটি ডলারের একটি চুক্তি সই হয়েছিল। সমঝোতা হয়েছিল যে সেখানে তুর্কি নৌবাহিনীর ছোটখাটো একটি স্থাপনাও নির্মাণ করা হবে।
উমর আল বশির তার দীর্ঘ তিন দশকের শাসনামলে এই দুটি পক্ষের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। এটা তিনি করতে পেরেছিলেন ইসলামপন্থীদের দূরে সরিয়ে রাখার মাধ্যমে। ইয়েমেনে ইরানপন্থী হাউসি মিলিশিয়াদের সাথে যুদ্ধে তারা সৌদি আরবকে সৈন্য পাঠিয়েও সহযোগিতা করছে।
উমর আল বশির হঠাৎ করেই ইরানের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলেন। সুদানে ইরানের যত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল, সেগুলো আকস্মিক বন্ধ করে দেন। এর পরপরই ২০১৫ সালের মার্চ মাসে সৌদি আরব সফর শেষে তিনি সৌদি আরবের কাছে সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। এই সৌদি আরবের সাথে সুদানের বর্তমান সামরিক শাসকেরও রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
সৌদি আরব, আমিরাত ও মিসর এবং কাতার ও তুরস্ক এই দু’টি পক্ষের কারো সাথেই সুদানের সরকারবিরোধীদের সম্পর্ক নেই। সুদানে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও তারা কেউই আগ্রহী নয়। বর্তমানে দেশটিতে গণতন্ত্রের দাবিতে যে আন্দোলন বিক্ষোভ চলছে, তাতে অংশ নিচ্ছে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়ন। এদের মধ্যে মধ্যপন্থী, বামপন্থী ও প্যান আরব দলগুলোও রয়েছে। সমর্থন রয়েছে দক্ষিণ সুদানের বিদ্রোহীদেরও। এ আন্দোলনকে সমর্থন দিচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন।
সুদানের সদস্যপদ ইতোমধ্যেই স্থগিত করেছে আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং দেশটিতে বেসামরিক প্রশাসনের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে না দিলে কঠোর অবস্থান নেয়ার কথাও জানিয়েছে আফ্রিকার দেশগুলোর এই জোট। কিন্তু এই জোটের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মিসরের সাথেই সুদানের সামরিক কাউন্সিলের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও সমর্থন।
সৌদি আরবের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই সুদানের ওপর কিছু চাপ সৃষ্টি করেছে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের উপর দমনপীড়ন বন্ধ করার জন্য। তবে সুদানের ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের আগ্রহ তেমন একটা নেই বললেই চলে। গত বছর জানুয়ারি মাসে ওয়াশিংটন সুদানের ওপর আরোপ করা কিছু অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ১৯৯০-এর দশকে দারফুরে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগে এসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।
সুদানের সামরিক বাহিনী ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমন এবং ইউরোপ অভিমুখী অভিবাসীদের স্রোত ঠেকানোর জন্য। রাশিয়া ও চীনও এখন ওই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা দেখতে চায়।
কয়েক দশক ধরেই মস্কো সুদানের কাছে সামরিক অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি বিক্রি করে আসছে। এই বিক্রির ওপর জাতিসঙ্ঘের তরফে ২০০৫ সালে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কিনেছে খার্তুম সরকার।
সুদান ২০১৭ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান এসইউ-৩৫ কিনেছে। এর ফলে আরব দেশগুলোর মধ্যেই সুদানই প্রথম দেশ; যাদের এই যুদ্ধবিমান রয়েছে।
এ ছাড়াও রয়েছে বাণিজ্যিক কিছু স্বার্থÑ বেশ কিছু রুশ কোম্পানি সুদানের আকর্ষণীয় কিছু খাতে, বিশেষ করে, স্বর্ণ ও তেলের ব্যবসায় বড় আকারের অর্থ বিনিয়োগ করেছে। চীনের সাথেও সুদানের সম্পর্ক বহু দশকের পুরনো। সুদানের তেল-ক্ষেত্রের উন্নয়নে বড় ধরনের সহযোগিতা দিয়েছে চীন। বর্তমানে দেশটিতে সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণেও বেইজিং সহযোগিতা করছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
কুষ্টিয়াতে মসজিদ কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫ চেয়ারম্যান তপন ও অজিত মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় ১৪ ডাকাত সদস্য গ্রেফতার রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়াল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে চুয়েট ১১ মে পর্যন্ত বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে শিশুর মৃত্যু হিলিতে ভটভটি-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২

সকল