২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইস্তাম্বুলের নির্বাচন ও এরদোগান

-

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বিস্ময়করভাবে নিজেকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত করেছেন। জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) ও এরদোগান বিভিন্ন সময় প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে এ পর্যায়ে এসেছেন। কিন্তু সম্প্রতি ইস্তাম্বুলে মেয়র পদে পুনর্নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীর জয় আবার তাকে ও তার দলকে নতুন আলোচনায় নিয়ে এসেছে। এর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘ইস্তাম্বুলে যিনি জয়ী হবেন, তিনিই তুরস্কে জয় পাবেন।’ একসময় তিনিও ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন। ইস্তাম্বুলে পরাজয় ছাড়াও এরদোগানকে আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের যথাযোগ্য সমাধান বের করতে হবে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনার জন্য ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে চুক্তি সই করেন।
এরদোগান ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী মাসে অর্থাৎ জুলাইয়ে রাশিয়া থেকে ‘এস-৪০০’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চলে আসবে। এর আগে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভোসোগলু বলেছেন, আমরা এরই মধ্যে এস-৪০০ কিনে ফেলেছি। এখন আমেরিকা কী নিষেধাজ্ঞা দেয় বা কোন বিবৃতি প্রকাশ করে তা আমাদের কাছে মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। রাশিয়া কবে নাগাদ এস-৪০০ হস্তান্তর করবে, এখন আমরা সে বিষয়ে আলোচনা করছি। কাজেই এখন আর এ ব্যবস্থা ফিরিয়ে দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
কিন্তু মার্কিন সরকার শুরু থেকেই এ চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে বলেছে, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হিসেবে রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা তুরস্কের উচিত হবে না। এ হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও আঙ্কারা মস্কোর কাছ থেকে এস-৪০০ সংগ্রহ করলে তুরস্কের ওপর তিন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছে ওয়াশিংটন।
ইস্তাম্বুলের মেয়র পদে অনুষ্ঠিত পুনর্নির্বাচনে বিরোধীদলীয় প্রার্থী একরাম ইমামওগলু ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বিজয়ী প্রার্থী একরাম ইমামওগলুকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এর আগে গত ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ইকরাম ইমামওগলুকে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর চেয়ে অল্প ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তবে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে একে পার্টি ইস্তাম্বুলে পুনর্নির্বাচনের দাবি তোলে। এরদোগানও তার দলের পরাজয় প্রত্যাখ্যান করেন। তুরস্কের হাই ইলেকশন বোর্ড ২৩ জুন পুর্নির্বাচনের দিন নির্ধারণের ঘোষণা দেয়। এরদোগান ঘোষণা করেছিলেন, যারই জয় হোক না কেন, মূলত বিজয় হবে তুরস্কের।
নির্বাচনে ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) প্রার্থী একরাম ইমামওগলু। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে সাত লাখ ৭৭ হাজার ৫৮১ ভোট বেশি পেয়েছেন। অথচ গত মার্চের নির্বাচনে ব্যবধান ছিল মাত্র ১৩ হাজার ভোট। এবারে একরাম ৪৭ লক্ষাধিক ও ইলদিরিম প্রায় ৪০ লাখ ভোট পেয়েছেন।
ইস্তাম্বুল হচ্ছে তুরস্কের সবচেয়ে বড় শহর। এখানে প্রায় দেড় কোটি মানুষ বসবাস করে, যেখানে পুরো তুরস্কের জনসংখ্যা মাত্র আট কোটি। ইস্তাম্বুল দেশটির প্রধান ব্যবসায় কেন্দ্রও। এরদোগানের রাজনৈতিক জীবনের উত্থান শুরু হয়েছিল এই শহর দিয়ে, যখন প্রায় ২৫ বছর আগে এই শহরের নিয়ন্ত্রণে আসে একেপি। ১৯৯৪ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ইস্তাম্বুলে মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন এরদোগান।
এ ছাড়া তুরস্কের মোট জিডিপির প্রায় এক-তৃতীয়াংশের জোগান দেয় ইস্তাম্বুল। এখন ইস্তাম্বুল, ইযমির আর আঙ্কারাÑ সবগুলো বড় শহরই বিরোধী শিবিরের নিয়ন্ত্রণে চলে গেল। কেউ কেউ মনে করছেন, এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের যুগের সমাপ্তি পর্ব শুরু হলো।

 


আরো সংবাদ



premium cement