২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাফিয়ার বেঁচে থাকার আশা ক্ষীণ : ঝলসে গেছে শরীরের ৮০ শতাংশ

অপরাধ
রাফির শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে - ছবি: সংগৃহীত

ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষা কেন্দ্রে দগ্ধ নুসরাত জাহান রাফিয়ার (১৮) অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ ঝলসে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া রাফিয়ার শ্বাসনালীও ঝলসে গেছে।

রাফিয়াকে শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে আইসিইউতে।

জানতে চাইলে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘রাফিয়ার শ্বাসনালীসহ শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ ঝলসে গেছে। তাতে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা সব ধরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে সাধারণত এধরণের রোগীদের বাঁচানো কঠিন। সে শুধু সবার কাছে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে। মেয়েটির সব ধরণের চিকিৎসা দিচ্ছি আমরা।’

এর আগে শনিবার সকালে ফেনীর সোনাগাজীর পৌর এলাকার ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতর রাফিয়ার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যার চেষ্টা করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত। সে শিক্ষক সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছিল বলে জানায় তার পরিবার।

রাফিয়ার মায়ের করা মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ২৭ মার্চ সকাল ১০টার দিকে অধ্যক্ষ তার অফিসের পিয়ন নূরুল আমিনের মাধ্যমে ছাত্রীকে ডেকে নেন। পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ। পরে পরিবারের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা। সেই মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন সময় চাপ দিয়ে আসছিল রাফিয়ার পরিবারের উপর। পরে গায়ে আগুন দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে হত্যা চেষ্টা করে রাফিয়াকে।

আরো পড়ুন :
যৌন হয়রানির অভিযোগে আটক মাদরাসার অধ্যক্ষ, ছাত্রীর গায়ে আগুন
সোনাগাজী (ফেনী) সংবাদদাতা, ০৬ এপ্রিল ২০১৯
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে আলিমের পরীক্ষাকেন্দ্রে আগুনে দগ্ধ হয়েছেন নুসরাত জাহান নামের এক ছাত্রী। নুসরাত পৌরসভার উত্তর চরছান্দিয়া গ্রামের মাওলানা মুচা মিয়ার মেয়ে। শনিবার সকালে পৌরশহরের সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

অগ্নিদগ্ধ ছাত্রীর ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, শনিবার সকালে আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে মাদরাসায় যায় নুসরাত। এ সময় কতিপয় বখাটে তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রের চারতলায় ডেকে নিয়ে তার গায়ে কেরোসিন জাতীয় পদার্থ নিক্ষেপ করে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে তার শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে যায়। প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ফেনী সদর হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।

ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের বলেন, নুসরাতের শরীরে কেরোসিন জাতীয় পদার্থ দিয়ে আগুন দেয়া হয়েছে। এতে শরীরের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত পুলিশ কনষ্টেবল রাসেদ ও মাদরাসার নিরাপত্তা প্রহরী মোস্তফা বলেন, ঘটনার সময় ছাদ থেকে চিৎকার করতে করতে নুসরাত নিচে নেমে এলে আমরা দ্রুত তার শরীরের আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। এসময় মাদরাসার অন্যান্য পরীক্ষার্থী এগিয়ে এসে তার শরীরের আগুন নিভিয়ে তাকে হাসপাতালে পাঠায়।

ঘটনার কিছুক্ষণ পর ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট পিকে এনামুল করিম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল পারভেজ, সোনাগাজী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইকুল আহমদ ভুঞা মাদ্রাসায় পৌঁছে পরীক্ষাথীদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের বান্ধবী নিশাত জানান, তাকে কেউ মারধর করেনি।

উপস্থিত পরীক্ষার্থী জানান, নুসরাত হলে এসে তার প্রবেশপত্রসহ অন্য সামগ্রী পরীক্ষা কেন্দ্রের টেবিলে রেখে গিয়ে বাইরে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আগুনের ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনা কিভাবে ঘটেছে তারা কিছু জানেন না।

গত ২৭ মার্চ নুসরাতকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার মামলা করেন সোনাগাজী থানায়। ওই মামলায় অধ্যক্ষ ফেনী কারাগারে আছেন।

সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বিষয়টি আত্মহত্যার চেষ্টা নাকি হত্যা প্রচেষ্টা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement