২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

১৯৯টি সেঞ্চুরি করেছিলেন যিনি

স্যার জ্যাক হবস - ফাইল ছবি

অল্পের জন্য সেঞ্চুরির ডাবল সেঞ্চুরি হয়নি। তবুও তার উচ্চতায় কেউ আদো যেতে পারেনি। হয়তো পারবেও না। ১৮৮২ সালের আজকের (১৬ ডিসেম্বর) এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন ইংলিশ তারকা স্যার জ্যাক হবস।

ক্রিকেট জগতে স্যার জ্যাকের কৃতিত্ব অবিস্মরণীয়। যার রেকর্ডগুলো সত্যি কপালে চোখ উঠার মতো। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনি। ৮৩৪ ম্যাচ খেলে করেছেন ৬১ হাজার ৭৬০ রান! গড় ৫০.৭০। হবস গড়েছেন অসংখ্য কীর্তি, যা তাকে আজও স্মরণীয় করে রেখেছে ক্রিকেট অনুরাগীদের কাছে। বাকি সবার চেয়ে কতটা উঁচুতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেটা বোঝা যাবে তাকে নিয়ে তৈরি এই তথ্যে। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি জন প্যাটসির (১৭০টি)। কিন্তু তিনিও পিছিয়ে আছেন ২৯টি সেঞ্চুরিতে!

রানের দিক দিয়েও ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে দুইয়ে থাকা ফ্রাংক উইলির রান ৫৮ হাজার ৯৫৯। উইলির কাছে শুধু এক জায়গায় হেরেছিলেন হবস। উলির করা সর্বোচ্চ ২৯৫টি ফিফটির জায়গায় হবসের ফিফটি ২৭৩টি।

টেস্টে সবচেয়ে বেশি বয়সে সেঞ্চুরি কৃতিত্বও হবসের। ৪৬ বছর ৮২ দিন বয়সে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মেলবোর্নে ১৯২৯ সালে ১৪২ রান করে গড়েন এই রেকর্ড। শুধু তা-ই নয়, হবসের সেঞ্চুরির অর্ধেকের বেশিই এসেছে যখন ৪০ পেরিয়েছে।

১৮৮২ সালের আজকের এই দিনে ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজে জন্ম নেয়া হবসের টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ২৬ বছর বয়সে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। অভিষেকে ৮৩ রান করা হবস প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পান দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, নিজের দ্বাদশ টেস্টে। হারবার্ট সাটক্লিফকে নিয়ে ওপেনিং জুটিতে গড়েছেন সর্বোচ্চ গড়ের (৮৭.৮১) রেকর্ড ।

হবসের রানের ভান্ডার আরো বড় হতো। বিশ্বযুদ্ধের কারণে তিনি হারিয়েছেন মূল্যবান ছয়টি বছর। তার ৩০ বছরের ক্যারিয়ারে সেই ছয় বছর যোগ হলে জ্যাক হবসের রেকর্ড আরও  হূষ্টপুষ্টই হতো।

হবসের ক্রিকেটের হাতেখড়ি ১২ বছর বয়সে। সেন্ট ম্যাথুস চার্চ একাদশের হয়ে এক বছর খেলেই ১৮৯৫ সালে কলেজ সার্ভেন্ট হিসেবে যোগ দিতে স্কুল ত্যাগ করেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান হবস। ১২ ভাই-বোনের মধ্যে বড় হবসকে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে সংসারের জোয়াল তুলে নিতে হয় কাঁধে। বাবা গ্রাউন্ডসম্যান ও আম্পায়ার হিসেবে কাজ করতেন। সেই সূত্রেই ক্রিকেটের সঙ্গে প্রণয়ের শুরু।

ছেলেবেলায় স্ট্যাম্প আর পুরনো টেনিস বল দিয়েই খেলতেন। যেখানে চাকরি জুটিয়ে নিয়েছিলেন, সেখানে অনুশীলন করতে আসতেন কিংবদন্তি রনজিত সিংজি। ইংল্যান্ডের কাউন্টি দল সারের খেলোয়াড়েরাও অনুশীলন করতেন এখানে। অবশেষে ১৯০১ সালে হসবের সুযোগ আসে মাঠে নামার। অপেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। এক বছরের মাথাতেই হয়ে যান পেশাদার। কাউন্টির সারেতে খেলা হবসের যাত্রা শুরু হয়েছিল মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) দিয়ে।

ইংল্যান্ডের হয়ে ৬১টি টেস্টে ৫৬.৯৪ গড়ে ৫ হাজার ৪১০ রান করেছেন। টেস্টে সেঞ্চুরি অবশ্য ১৫টি। কিন্তু তার যুগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের আভিজাত্য অটুট ছিল। ক্রিকেটে অবদানের জন্য ১৯৫৩ সালে স্যার উপাধিও পান। তিনিই প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এই নাইটহুড পেয়েছিলেন। উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটার হন ১৯০৯ ও ১৯২৬ সালে। আর ২০০০ সালে নির্বাচিত হন উইজডেনের শতাব্দীর সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন।

প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর ওভালে একটা লাঞ্চ পার্টিতে অংশ নেয় একটা ক্লাব। হবসের জন্মদিন উদযাপনে তারই প্রিয় টমেটো স্যুপ, ভেড়ার রোস্ট আর আপেল দিয়ে লাঞ্চ সারে এই দল।

১৯৬৩ সালে ৮১ বছর বয়সে মারা যান। হবস মারা গেছেন—এই তথ্য পুরো সত্যি নয়। তিনি বেঁচে আছেন তার কীর্তিতে।


আরো সংবাদ



premium cement