৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল : জিতেছে ইংল্যান্ড, হারেনি কেউ

মার্টিন গাপটিলকে কী বলে সান্ত্বনা দিচ্ছেন ইয়ন মরগান। কী বলার থাকতে পারে এমন ম্যাচের পর? - ছবি : ক্রিকইনফো

বিশ্বকাপ ফাইনাল। বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ম্যাচ। লর্ডসে রোববারের ফাইনালটি যেন তার সেই মর্যাদার পুরোটা ধরে রেখেছে। নিকট অতীত তো দূরের কথা ইতিহাসেই আর কোন বিশ্বকাপের ফাইনাল এতটা উত্তেজনাকর হয়নি। এক কথায় পয়সা উসুল ম্যাচ বোধহয় একেই বলে।

বিনা যুদ্ধে নাহি দেন সূচাগ্র মেদিনি......ম্যাচটাকে জমিয়ে তুলতে দুই দলের খেলোয়াড়দের চেষ্টার যেন কমতি ছিল না। কেউ এতটুকু ছাড় দেয়নি। বিশ্বকাপ শিরোপা স্পর্শ করতে কার না সাধ জাগে! তাই সামর্থের সবটুকু দিয়ে লড়াই করেছে দুই দল। শেষ পর্যন্ত কাপটা ইংল্যান্ডের হাতেই উঠেছে।

ইতিহাস বলবে এই ম্যাচে জিতেছে ইংল্যান্ড; কিন্তু কোটি কোটি দর্শক সাক্ষী দেবে লর্ডসে এদিন হারেনি কেউ। এমন ম্যাচে কেউ হারতে পারে না।

বিশ্বকাপ ফাইনাল যে টাই হয়েছে শুধু তাই নয়, টাই হওয়ার পর ম্যাচ গড়িয়েছে সুপার ওভারে। সেই সুপার ওভারের খেলাও হয়েছে টাই। এমন উত্তেজনা আর প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ম্যাচ আর কে কবে দেখেছে?

যারা এই ম্যাচ দেখেননি হয়তো আফসোস করবেন, অথবা হয়তো বুঝতেই পারবেন না যে কতবড় মিস করেছেন।

খেলেছে মাঠে ২২ জন কিন্তু এর বাইরে থেকে কেউ একজন হয়তো এমন জমজমাট স্ক্রিপ্ট লিখে রেখেছিল এমন ম্যাচের জন্য! নইলে যে ইংল্যান্ড হাসতে হাসতে সাড়ে তিন শ’ রান করে তাদের কেন ২৪০ রান তাড়া করতে গলদঘর্ম হবে? আবার কেনই বা ৮৬ রান ৪ উইকেট হারানোর পরও আবার লড়াইয়ে ফিরে আসবে? কেনই বা বেন স্টোকসের ক্যাচ লুফে নিয়েও বাউন্ডারি দড়িতে পা দিবেন ট্রেন্ট বোল্ট? ম্যাচটাতো সেখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো। এমন অনেক উপকরণ পাওয়া যাবে এই ম্যাচের মিনিটে মিনিটে।

আবার ৫০তম ওভারে নিউজিল্যান্ডের জয় যখন সহজ মনে হচ্ছে তখন কেনই বা মার্টিন গাপটিল অমন পাগলাটে থ্রো করতে যাবেন? ওভার থ্রোতে বাউন্ডারি না হলে ইংল্যান্ডের দরকার হতো ২ বলে ৭ রান; কিন্তু ৪টি রান ফ্রিতে পেয়ে যাওয়ায় ২ বলে ৩ রানে এসে যায় সমীকরণ।

শেষ ওভারে ১৫ রানের সমীকরণ মেলাতে গিয়ে ইংল্যান্ড পিছিয়ে পড়ে। প্রথম দুই বল থেকে কোন রানই আসেনি তাদের। আসলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক ছাড়তে চাননি বেন স্টোকস। ফলে ৪ বলে দরকার ছিলো ১৫ রান। সেটি যখন অসম্ভব মনে হচ্ছিল তখনই তৃতীয় বলে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ট্রেন্ট বোল্টকে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেন স্টোকস।

আবার উত্তেজনা ফেরে ম্যাচে। ৩ বলে দরকার ৭ রান। চতুর্থ বলে দৌড়ে দুই রান নেয়ার পাশাপাশি ওভার থ্রোতে ৪ রান পেয়ে যাওয়ায় ২ বলে ৩ রান দরকার পড়ে। পঞ্চম বলে ২ রান নিতে গিয়ে রান আউটে একটি উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। শেষ বলে দরকার ২ রান। এবারো দারুণ বল করেন বোল্ট। কোন মতে ব্যাটে লাগিয়ে আবারো দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়। ফলে টাই হয় ম্যাচ। বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসে প্রথম টাই। খেলা গড়ায় সুপার ওভারে।

সুপার ওভারে ইংল্যান্ডের হয়ে ব্যাট করতে নামেন এই ম্যাচে লড়াই করা দুই মিডল অর্ডার বেন স্টোকস ও জশ বাটলার। নিউজিল্যান্ডের হয়ে বল হাতে নেন আবরো ট্রেন্ট বোল্ট। ৩, ১, ৪, ১, ২, ৪- এই ছিলো ইংল্যান্ডের রান। মোট ১৫ রান নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ১৬ রানের টার্গেট দেয় মরগানরা।

নিউজিল্যান্ডের হয়ে সুপার ওভারে ব্যাট করতে নামেন জিমি নিশাম ও মার্টিন গাপটিল। বল করেন জোফরা আর্চার। অনভিজ্ঞ আর্চার প্রথম বলেই ওয়াইড দিয়ে বসেন। পরের (প্রথম) বলে ২ রান, এরপর ছক্কা হাঁকান জিমি নিশাম। জয়ের সুবাস পায় নিউজিল্যান্ড; কিন্তু এরপর আর বাউন্ডারি পায়নি তারা পরের তিন বল থেকে আসে ২, ২, ১ রান।

মূল ম্যাচের মতো এখানেও শেষ বলে ২ রান দরকার হয় নিউজিল্যান্ডের। গাপটিল কোন মতে বল ব্যাটে লাগিয়ে এক রান নিয়ে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউট হলে টাই হয় সুপার ওভারও। এরপর বাউন্ডারি বেশি হাঁকানোর সুবাদে জয়ী হয় ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপের শিরোপার স্বাদ পায় মরগানের দল।

এ যেন কোন ক্রিকেট ম্যাচ নয়, দর্শকদের স্নায়ুক্ষয়ী এক যুদ্ধ। যে যুদ্ধে ইয়ন মরগানের দল জিতে উল্লাস করেছে। কেন উইলিয়ামসনের দল হতাশা ভরা বুকে মাঠ ছেড়েছে। কিন্তু দর্শকদের কাছে এই ম্যাচে কেউই পরাজিত নয়। যারা এমনভাবে লড়তে পারে তারাই তো বীর।


আরো সংবাদ



premium cement