২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফিক্সিংয়ের নতুন অভিযোগ, তোলপাড় ক্রিকেটবিশ্ব

ভারত-ইংল্যান্ড লর্ডস টেস্ট নিয়ে দাবি করা হয়েছে, ওই টেস্টের ১০ ওভারের একটি অংশে কত রান হবে, তা নাকি আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল - সংগৃহীত

আবারো তোলপাড় ক্রিকেটবিশ্ব। কাতারের টিভি চ্যানেল আল-জাজিরা নতুন একটি ভিডিও নিয়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের দাবি করেছে। আগেরবারের চেয়ে এবারের অভিযোগ আরো স্পষ্ট এবং চাঞ্চল্যকর। ২০১১-‘১২ সালে ম্যাচ ফিক্সিং হয়েছে, এমন ১৫টি ম্যাচের তালিকা এবার প্রকাশ করেছে তারা। যার মধ্যে বিশ্বকাপের একাধিক ম্যাচ এবং লর্ডসে ভারতের টেস্ট ম্যাচও রয়েছে।

কয়েক মাস আগে গোপন ক্যামেরা অভিযান চালিয়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ তুলেছিল চ্যানেলটি। সে সময় তাদের গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল ক্রিকেট গড়াপেটার কয়েকজন খলনায়কের কথাবার্তা। যেখানে তারা আলোচনা করেছিল, ক্রিকেটবিশ্ব জুড়ে কীভাবে গড়াপেটা হয়। কাঠগড়ায় উঠেছিল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দেশ। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দেয় সংশ্লিষ্ট দুই দেশের বোর্ড।

এই ফিক্সিং চক্রের অন্যতম হোতা সুনীল মুনাওয়ার এবার ফোনে ও গোপন ক্যামেরার সামনে সরাসরি বলে দিয়েছেন, ২০১১-১২ মৌসুমে কোন কোন ম্যাচে গড়াপেটা হয়েছে। যা তার ফোনের কথাবার্তা রেকর্ড করে জানা গেছে বলে দাবি ওই চ্যানেলের।

২০১১ সালে ভারত-ইংল্যান্ড লর্ডস টেস্ট নিয়ে দাবি করা হয়েছে, ওই টেস্টের ১০ ওভারের একটি অংশে কত রান হবে, তা নাকি আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। যে অংশ ফিক্সিং হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে, দেখা যায় সেই অংশে সত্যিই তত রানই হয়েছিল এবং ‘ভবিষ্যদ্বানী’ অনুযায়ী সেই ১০ ওভারের শেষ ওভারটি মেডেনই হয়। ম্যাচের আগেই এক ভারতীয় জুয়াড়ি দীনেশ খাম্বাট ওরফে ডিকে-কে নাকি বলে দেন মুনাওয়ার।

রোববার রাতে প্রচারিত এক ঘণ্টার তথ্যচিত্রে এই ফোন-কথোপকথনের রেকর্ডিং শোনানো হয়।

লর্ডসে ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে সেই টেস্ট হয়েছিল ২০১১-র অগস্টে। ভারতের সেই দুঃস্বপ্নের সফরে সেটি ছিল প্রথম টেস্ট। যে ম্যাচে ইংল্যান্ড জিতেছিল ১৯৬ রানে। প্রথম ইনিংসে কেভিন পিটারসেন ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। রাহুল দ্রাবিড় ও ম্যাট প্রায়র সেঞ্চুরি করেন। সদ্য অবসর নেয়া ভারতীয় পেসার প্রবীণ কুমার প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন। এর আগে ২০১৭ সালে রাঁচীতে ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্টেও গড়াপেটা হয়েছিল বলে দাবি করেছিল তারা। যে দাবি অবশ্য উড়িয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া বোর্ড।

২০১১ সালে ভারতে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পাঁচটি ম্যাচে ও ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তিনটি ম্যাচেও এই ধরনের সেশন ফিক্সিং বা স্পট ফিক্সিং হয়েছে বলে অভিযোগ। যা মুনাওয়ারের কথার রেকর্ডিংয়ে শোনা যায়। তার দাবি, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের বহু ক্রিকেটার এই ফিক্সিংয়ে যুক্ত রয়েছেন। তবে ভারতীয় ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই দাউদ-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত মুনাওয়ারের। ক্রিকেটে গড়াপেটা যে তার পক্ষে এমন কিছু কঠিন কাজ না, তাও গোপন ক্যামেরার সামনে গর্ব করে বলেছেন তিনি।

যে সব ম্যাচে গড়াপেটা হয়েছে বলে অভিযোগ, তার মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো বড় ক্রিকেটখেলিয়ে দেশের ম্যাচও রয়েছে। চ্যানেলটির দাবি, ফিক্সিংয়ের খলনায়কেরা ২৬টি ভবিষ্যদ্বানী করেছিল, তার মধ্যে ২৫টিই সঠিক ছিল।

অভিযোগ, কয়েকটি ম্যাচে ৮-১০ ওভারের একাধিক সেশন গড়াপেটাও ছিল। এমনকি কয়েকটি ম্যাচে দুই দলের ক্রিকেটারদেরই গড়াপেটায় জড়িয়ে নেয়া হয়।

আল-জাজিরার দাবি, কোন ম্যাচে কোন সেশন গড়াপেটা হয়েছিল, তার বিস্তারিত তথ্যও নাকি তাদের কাছে আছে। কিন্তু সেগুলো তারা এখন প্রকাশ করবে না, পরবর্তীকালে সম্ভাব্য আইনি তদন্তের স্বার্থে।

এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইসিসি'র দুর্নীতি দমন বিভাগ এই চ্যানেলের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে। তাদের কাছে যা গোপন তথ্য ও প্রমাণ রয়েছে, তা আইসিসি-কে দিতে অনুরোধ করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement