২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শত বছরের সেরা বোলার

উইকেট শিকারের পর মোহাম্মদ আব্বাসের উদযাপন - সংগৃহীত

হাস্যজ্জ্বোল মুখটি দেখে বোঝার উপায় নেই, বল হাতে কতটা ভয়ঙ্কর তিনি। বল হাতে আগুন ঝরিয়ে সরল হাসিতে ফেটে পড়েন উল্লাসে। বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের পেস সেনসেশন মোহাম্মদ আব্বাসের কথা। বয়স ২৮। পড়ন্ত বেলায় ক্যারিয়ারে আলোক রশ্নির বিচ্ছুরণ ঘটালেন এই বোলার। খেলেছেন মাত্র ১০টি টেস্ট। শিকার করেছেন ৫৯টি উইকেট। এর মধ্যে ১৭টি উইকেট শিকার করেছেন চলমান অস্ট্রেলিয়া সিরিজের দুই টেস্টে। প্রথম টেস্টে সাতটি উইকেট শিকার করেছেন। আর দ্বিতীয় টেস্টে ১০টি। আর এর মাধ্যমেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কিপটে ফাস্ট বোলারের তকমা পেয়েছেন তিনি। আর সাথে তিনি গড়েছেন শত বছরে সবচেয়ে সেরা বোলার হওয়ার রেকর্ড।

১০ উইকেট শিকারের পর সিজদাহ করেন মোহাম্মাদ আব্বাস

হ্যাঁ, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে আর কোনো পেসারের এতো কম গড়ে বোলিং করেননি। আব্বাস দুই টেস্টে ১৭ উইকেট নিয়েছেন মাত্র ১০.৫৮ গড়ে। আর পাকিস্তানের হয়েও সেরা বোলারের তকমা তার গায়ে। তার আগে ছিলেন মোহাম্মদ আসিফ। ২০০৬ সালে ক্যান্ডিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭১ রানে ১১ উইকেট নিয়েছিলেন ১০.৭৬ গড়ে।

এছাড়া আব্বাসের টেস্ট ক্যারিয়ারের বোলিং গড় ১৫.৬৪, যা শত বছরে অর্ধশতাধিক উইকেট শিকার করা যেকোনো বোলারের চেয়ে সেরা। আর সর্বকালের সেরাদের মধ্যে চতুর্থ।

আব্বাসের আরো যত কীর্তি -
১. আবু ধাবিতে হওয়া টেস্টে এ যাবৎকালের সেরা বোলার আব্বাস। তিনিই প্রথম কোনো টেস্টে ১০ উইকেট শিকার করেছেন। এর আগে ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৫১ রান দিয়ে ৮ উইকেট শিকার করেছিলেন জুনায়েদ খান।

২. পাকিস্তানের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০ উইকেট নেয়া পঞ্চম পেসার হলেন আব্বাস। তবে তার আগে ওয়াসিম আকরাম ১৯৯০ সালে এমসিজি'তে ১৬০ রান দিয়ে ১১ উইকেট শিকার করেছিলেন। এই তালিকায় থাকা বাকরিা হলেন ফজল মাহমুদ, ইমরান খান ও সরফরাজ নওয়াজ।

৩. দীর্ঘ ১২ বছর পর পাকিস্তানি পেসার হিসেবে এক টেস্টে ১০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েছেন আব্বাস। আবু ধাবিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ৯৫ রানে ১০ উইকেট শিকার করেন আব্বাস। এর আগে সর্বশেষ ২০০৬ সালে ক্যান্ডিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৭১ রানে ১১ উইকেট নিয়েছিলেন পাকিস্তানের মোহাম্মদ আসিফ। তারও আগে পাকিস্তানের হয়ে এক টেস্টে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন স্পিডস্টার শোয়েব আখতার। ২০০৩ সালে দু’বার এ নজির গড়েন তিনি। ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৮ রানে ১১ ও পেশোয়ারে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৮০ রানে ১০ উইকেট নেন শোয়েব।

 

যেভাবে খাদের কিনারায় থাকা পাকিস্তানকে টেনে তুললেন অভিষিক্ত ফখর জামান

ক্রিকইনফো

১৮ অক্টোবর ২০১৮

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকেই রেকর্ড গড়েছেন ফখর জামান। প্রথম পাকিস্তানি ওপেনার হিসেবে অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসেই অর্ধশত করেছেন তিনি। অথচ এই অভিষিক্ত ব্যাটসম্যানের কাছে এতোটা আশা করেননি কোচ মিকি আর্থার ও অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। যখন তাকে স্কোয়াডে যুক্ত করা হয় তার স্ট্রাইক রেট ছিল ৫০ এর নিচে, সেটা বিবেচনায় আনেননি কেউ। প্রথম টেস্টের পর ওপেনার ইমাম-উল-হক ইনজুরিতে থাকায় ফখরকে দ্বিতীয় টেস্ট স্কোয়াডে যুক্ত করা হয়। আর অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ৯৪ রানের ঝলমলে একটি ইনিংস উপহার দিয়েছেন দলকে। আর দ্বিতীয় ইনিংসে সাজঘরে ফেরার আগে করেছেন ৬৬।

তার এই দুই ইনিংসে ভর করেই অনেকটা এগিয়েছে পাকিস্তান। আবু ধাবি টেস্টের প্রথম ইনিংসে যখন ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারালো পাকিস্তান, তখন হয়ত কেউ ভাবেনি অভিষিক্ত ওপেনার ফখর দলকে সেই দুঃসময়ে টেনে তুলতে পারবেন। সেই সময় অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের বুদ্ধিমত্তার সাথে মোকাবেলা করেছেন ফখর, যা মুগ্ধ করেছে কোচ ও অধিনায়ককে।

কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন ফখর? উইসডেন ডট.কম রেডিওকে এক সাক্ষাৎকারে সেই কথা বলেছেন এই ব্যাটসম্যান। বলেছেন, 'আসলে পরিস্থিতির কারণে আমি খেলার ধরণ পাল্টেছি।'

তিনি বলেন, 'আমি সহজাত খেলাটাই খেলে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ৫৭ রানে যখন ৫টি উইকেট পড়ে গেলো, আমি তখন স্থির হতে সময় নিচ্ছিলাম। কারণ আমাদের অবস্থা ভালো ছিল না। তাই সহজাত খেলাটা খেলছিলাম না।'

সেই পরিস্থিতে ক্রিজে আসেন অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। তার সাথে ১৪৭ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়েন ফখর। তবে সেই সময়টায় রান তোলার কাজটি করছিলেন সরফরাজ। মধ্যাহ্নের পর সজোরে ব্যাট চালিয়েছেন তিনি। পরে ফখরের প্রশংসা করেছেন তিনি, ও আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। নিজেকে নতুনভাবে আবিস্কার করেছি।

সরফরাজ বলেন, 'আসলে ফখর সব সময় খুব ভালোভাবে স্পিনারদের মোকাবেলা করতে পারে। আমি এ কাজটি তেমন করতে পারি না। তাই আমি শুধু স্পিনারদের বলগুলো আটকে দিয়ে সময় নিয়েছি।'

'আমরা সময় নিয়েছি। ধীরে ধীরে উইকেট আর্দ্র হয়েছে। আমরা মধ্যাহ্নের পর ব্যাট চালিয়েছি। দলের রান বাড়িয়েছি।'

ফখর ও সরফরাজের পার্টনারশিপ সেদিন পাকিস্তানকে ২৮০ রানের স্কোর গড়তে সহায়তা করে। বাকি কাজটুকু করে দেন রকস্টার মোহাম্মদ আব্বাস। দিন শেষে দুটি উইকেট শিকার করে দলকে স্বস্তি দেয়। আর দ্বিতীয় সকাল থেকেও চলে তার তাণ্ডব। একাই ৫ উইকেট ঝুলিতে পুরে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস ১৪৫ রানে গুটিয়ে দেয়।


আরো সংবাদ



premium cement