২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘সুপারম্যান’ মাশরাফি!

সুপারম্যানের মতো অবিশ্বাস্য ক্যাচে রুবেলের বলে শোয়েব মালিককে ফেরান মাশরাফি। (বামে) ক্যাচের পর সতীর্থরা জড়িয়ে ধরছেন মাশরাফিকে। - ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত।

চলিত এশিয়া কাপে শোয়েব মালিক দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছেন আফগানিস্তান, এমনকি ভারতের বিপক্ষেও। সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকেও চোখ রাঙাতে শুরু করলেন পাকিস্তানের এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। এদিন শোয়েব মালিকের ক্যাচ নিলেন পাখির মতো উড়ে। ম্যাচ শেষে সেই ক্যাচ প্রসঙ্গে কথাও বলতে হলো বাংলাদেশ অধিনায়ককে।

প্রথমে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ ২৩৯ রানে ৭ বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে যায়। বাংলাদেশের দেওয়া ২৪০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ১৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। এরপর ইমাম-উল-হক ও শোয়েব মালিকের ব্যাটে ভর করে সেই চাপ কাটিয়ে উঠতে শুরু করে তারা। কারণটা সবারই জানা। চলতি এশিয়া কাপে শোয়েব মালিক যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন তাতে একটা আশঙ্কা ভর করতেই পারে। কারণ তার ব্যাট যেদিন হাসে সেদিন প্রতিপক্ষের বোলারদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেন না। তাই শোয়েব মালিকের উইকেটটা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শোয়েব বিপদজনক হয়ে উঠার আগেই পাকিস্তান শিবিরে আঘাত হানেন রুবেল। 

প্রতিপক্ষের অন্যতম ভরসা শোয়েব মালিককে সাজ ঘরে ফেরান রুবেল। ইনিংসের ২১ তম ওভারে মাশরাফির হাতে তালুবন্দি হন শোয়েব। তিনি ৫১ বলে ৩০ রান করেন। আউট হবার আগে ইমাম-উল-হকের সঙ্গে ৬৭ রানের পার্টনারশিপ গড়েন তিনি। এই শোয়েব মালিক চলতি এশিয়া কাপের আসরে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছেন আফগানিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে। তাই তাকে সময়ে ফেরাতে না পারলে হয়তো এই ম্যাচের গল্পটা অন্যভাবে লিখতে হতো।

রুবেল হোসেনের করা ২১তম ওভারের প্রথম বলে মালিক মিডউইকেটের ওপর দিয়ে তুলে মারতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ০০.৮৪ সেকেন্ডে এক হাতে বলটা ছোঁ মেরে ক্যাচটা নিয়ে নেন মাশরাফি। বলটা তালু বন্দী করতে ২.৩৫ মিটার বা প্রায় ৮ ফুট ডাইভ দিয়েছেন ম্যাশ। ডাইভ দিতে গিয়ে আঙুলে ব্যথা পেয়েছেন তিনি। ব্যথা পেয়ে মাঠের বাইরেও তাকে থাকতে হয়েছে ১৫ মিনিট। আহা, কী ক্যাচ ধরেছেন মাশরাফি—অবাক চোখে তাকিয়ে শোয়েব মালিক। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান, অভিজ্ঞতায়ও সবচেয়ে বড় ভরসার নাম মালিক। মুহুর্তেই হতভম্ব পুরো পাকিস্তান টিম।

মাশরাফির সেই ক্যাচের পর মাঠে অন্যান্য খেলোয়াড়দের শরীরীভাষাও বদলে গিয়েছিল। ম্যাচ শেষে সেই ক্যাচ নিয়ে মাশরাফি পুরো দলকেই কতিত্ব দিলেন। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজা ক্যাচটি নিয়ে প্রশ্ন করলেন টাইগার অধিনায়ককে। হাঁটুতে এতো এতো কাটা দাগ, ওভাবে ঝাঁপালেন কিভাবে? মাশরাফি বললেন ‘আমাদের আজকের ফিল্ডিং নিয়ে গর্ব করা যায়। অনেক দিন আমরা এমন ফিল্ডিং করে দেখাতে পারিনি। আশা করি আজকের পর দলের খেলোয়াড়েরা বুঝবে ভালো ফিল্ডিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ। শোয়েব মালিকের ক্যাচটা যে শেষ পর্যন্ত ছাড়িনি, এতে আমি ভাগ্যবান ছিলাম। কারণ শোয়েব খুব ভালো ফর্মে আছে। যদি তখন সে আউট না হতো আমার মনে হয় ম্যাচ শেষ করে আসতো। শুধু আমি নই, সব মিলিয়ে আমাদের ফিল্ডিংটা ভালো হয়েছে।’

মাশরাফির সেই ক্যাচটা টিভিতে দেখা দর্শকরাও অনেকদিন মনে রাখবেন। কারণ শোয়েব যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন ততক্ষণ সবারই প্রার্থনা ছিলো শোয়েব কখন সাজ ঘরে ফিরবেন। দিন শেষে ৩৭ রানের জয়ের ভিড়ে হয়তো অনেকে ভুলে যাবেন কিন্তু মাশরাফির সেই ক্যাচটাই ম্যাচের দৃশ্যপট পাল্টিয়ে দেয়।


আরো পড়ুন: ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়ে যা বললেন মুশফিক

নয়া দিগন্ত অনলাইন

চলতি এশিয়া কাপের সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ১ রানের জন্য ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৭ম সেঞ্চুরি করতে পারলেন না মুশফিকুর রহিম। সেই ইনিংস শেষ হয়েছে আক্ষেপ দিয়ে। কিন্তু মুশফিকের ৯৯ রানের সেই ইনিংসে ভর করে দল পেয়েছে লড়াই করার মতো পুঁজি। আর তার করা রানের উপর ভর করে সম্বল ফাইনালের দেখা টাইগার বাহিনী।

এই এশিয়া কাপেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি প্রায় ২৪টি ব্যথানাশক ইনজেকশন নিয়ে ভীষণ চাপের মধ্যে খেলেছেন ১৪৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। ভীষণ চাপের মধ্যে মুশফিক কীভাবে খেলেন এমন অসামান্য সব ইনিংস? এ প্রশ্নটা পাকিস্তানের সাবেক ব্যাটসম্যান ও ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজার। ম্যাচ শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মুশফিক এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন নিজের উপর আত্মবিশ্বাসই তাকে কঠিন মুহুর্তে দলের হাল ধরতে শক্তি যোগায়।

সেঞ্চুরি না পাওয়ায় কিছুটা আফসোস হয়তো আছে কিন্তু দিন শেষে দলের জয়ে তা অনেকটা চাপা পড়ে গেছে। নিজেদের ইনিংসের শুরুতেই ৪.২ ওভারে মাত্র ১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যাওয়ার পর সেখান থেকেই মোহম্মদ মিথুনকে সঙ্গে নিয়ে দলকে টেলে তুলেন মুশফিক। ১৪৪ রানের একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশীপই বাংলাদেশ দলকে একটা সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যায়।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯৯ রানে শাহিন আফ্রিদির বলে কট বিহাইন্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেন তিনি। তার ৯৯ রানের উপর ভর করেই ২৩৯ রানের লড়াকু পুঁজি পায় টাইগাররা। আর ম্যাচ শেষে ৩৭ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। আর তাই মুশফিকুর রহিমের হাতে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিয়ে মুশফিক বলেন, ‘নিজের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মিথুনও দুর্দান্ত ব্যাট করেছে'। শুরুতেই কয়েকটি উইকেট পড়ে যাওয়ার পর তাকে বলেছিলাম, ক্রিজে আমাদের থাকতে হবে। কিভাবে যেকোনো পরিস্থিতিতে ব্যাট করা যায় তা নিয়ে অনুশীলন করেছি। ভালো প্রস্তুতি ছিল। সেটা আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি।


আরো সংবাদ



premium cement