২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তামিম ছাড়া বাংলাদেশ পারবে কি?

তামিম ভালো করলে দল মোটামুটি নির্ভার থাকে। তাই তার না থাকাটা দলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। - ছবি: সংগৃহীত

ব্যাপারটা এরকম না যে তামিম থাকলেই বাংলাদেশ আজ নিশ্চিত আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতত। আবার তামিম না থাকলে যে আফগানিস্তানকে হারাতে পারবে না, ঠিক এরকম না ও। তামিম দলের অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ব্যাটিং দুর্বলতা খুব ভালোভাবেই চোখে পড়েছে। শ্রীলঙ্কা ছাড়া অন্য দুটি ম্যাচে ১৬০ রানও তুলতে পারে নাই মাশরাফি বাহিনী। আর ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পজিশন ওপেনিং। ওপেনিংয়ে ভালো একটি শুরু মানেই ম্যাচে অনেকখানি এগিয়ে যাওয়া। সেই শুরুটাতেই বারবার হোঁচট খাচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে দলে তামিমের না থাকাটা খুবই চোখে পড়ছে। 

এশিয়া কাপে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের ওপেনিং ব্যাটসম্যানরা যেন খেই হারিয়ে ফেলছেন। যেটা রীতিমত মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে টাইগারদের।

এবারের এশিয়া কাপে প্রথম ম্যাচেই কব্জিতে চোট পেয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়েছেন তামিম। আর পরের দুই ম্যাচে ব্যর্থতার বড় কারণ এই ওপেনারের অনুপস্থিতি।

দলে ওপেনারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে অন্য দলগুলোর তুলনায় এই গুরুত্বটা একটু বেশিই বাংলাদেশের বেলায়। কেননা, এখন পর্যন্ত তামিমের কাছাকাছি মানেরও একজন ওপেনার খুঁজে বের করতে পারেনি টাইগাররা। তার বিকল্প পাওয়া তো দূর কল্পনা।

তামিম ইকবালের উপর বাংলাদেশ কতটা নির্ভরশীল, সেটা একটা পরিসংখ্যাই বলে দেয়। বাংলাদেশ সর্বশেষ যে ১১টি ম্যাচ হেরেছে, তার একটিতেও ছিলেন না তামিম!

অন্যদিকে ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে এই ম্যাচটির আগ পর্যন্ত মোট ৪৫ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ২ ম্যাচ পরিত্যক্ত তথা ব্যাট করার সুযোগ পায়নি মাশরাফির দল। বাকি ৪৫ ম্যাচে বাংলাদেশের মোট রান ১০২৪৯, অতিরিক্ত এসেছে ৬৩৪। অর্থাৎ ব্যাটসম্যানদের ব্যাট থেকে এসেছে বাকি ৯৬১৫ রান।

আর বিশ্বকাপের পর থেকে তামিম খেলেছেন ৪২টি ম্যাচ। এই ম্যাচগুলোয় তার রান ২১৮২। অর্থাৎ দলের প্রায় চারভাগের এক ভাগ রান একাই করেছেন তামিম। বোঝা যায়? এই দলে তার মতো একজন ব্যাটসম্যানের অবদান কতটুকু?

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে ভাঙা হাত নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনও তামিমকে নিয়ে মাতামাতি চলছে।

আজকের ম্যাচে তামিমের অভাবটা ঠিকই অনুভব করবে বাংলাদেশ। তামিমের রিপ্লেসম্যান্ট হিসেবে ইমরুল ও সৌম্যকে দেশ থেকে ডেকে পাঠিয়েছে নির্বাচকরা। যদি কিছুটা অভাব পূরণ হয় এ আশায়। আজকের ম্যাচে আফগানিস্তানের সাথে হারলে হয়তো এশিয়া কাপ থেকেই ছিটকে পড়তে হবে টাইগারদেরকে। তাই জয় ছাড়া অন্যকিছু ভাবছে না মাশরাফি বাহিনী।

 

আরো পড়ুন:  তামিমের পরিবর্তে ওপেনিংয়ে কে?
নয়া দিগন্ত অনলাইন , ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮


দলের প্রয়োজনে ভাঙা কব্জি নিয়েই মাঠে নেমে গিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। কিন্তু তার হাতের যে অবস্থা, তাতে এশিয়া কাপের বাকি ম্যাচগুলো আর খেলা সম্ভব নয়। দেশসেরা ওপেনার তাই ফিরে এসেছেন দেশে।

এশিয়া কাপের উদ্ধোধনী ম্যাচেই ইনজুরিতে আক্রান্ত হন তামিম। ফলে বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। তামিম না থাকা বাংলাদেশ দলের জন্য বড় ধাক্কা নিঃসন্দেহে। বিপক্ষ শিবিরও কিছুটা খোশ মেজাজে থাকবেন। ফলে আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে নতুন ওপেনিং জুটি দেখা যাবে। ওপেনিংয়ে তামিমের জায়গাটা নেবেন কে?


তামিম বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, এই জায়গায় তাই বাঁহাতি একজন ব্যাটসম্যানের কথাই ভাবা হচ্ছে। দলে বিকল্প হিসেবে আছেন দুই বাঁহাতি-মুমিনুল হক আর নাজমুল হোসেন শান্ত। তাদের মধ্যে যে কোনো একজন ওপেনিংয়ে খেলবেন। অন্যদিকে মোহাম্মদ মিঠুনের ওপেনিংয়ে খেলার অভিজ্ঞতা আছে।

শান্তই টিম ম্যানেজম্যান্টের প্রথম পছন্দ। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের এখনও ওয়ানডে অভিষেক হয়নি। আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষেই সেটা হয়ে যেতে পারে তার। সেক্ষেত্রে শান্ত-লিটনের নতুন এক জুটি দেখা যাবে।

তামিমের জায়গায় কে আসছেন, সেটি অবশ্য পরিষ্কার করেননি মাশরাফি বিন মর্তুজা। তবে টাইগার অধিনায়ক জানিয়েছেন, যে-ই সুযোগ পাক, ভালো একটা শুরুই আশা করছেন তিনি।

ওপেনিং জুটি নিয়ে মাশরাফি বলেন, 'তরুণ খেলোয়াড়দের চেষ্টা করতে হবে। অবশ্যই আমরা তাদের কাছ থেকে তামিমের মতো সার্ভিস আশা করি না। তবে যদি তারা নিজেদের সেরাটা দিতে পারে, তবে তামিম যা করতো, তা পারবে। আমি শুধু তাদের কাছে ভালো একটি শুরু আশা করছি। একইসঙ্গে যদি তারা সেট হয়ে যেতে পারে, তবে ভালো কিছুই করতে পারবে।'

 

আরো পড়ুন:  জুনিয়রদের ওপর ভরসা নেই?
বিবিসি, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮


বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাকিব আল হাসান জানুয়ারি মাস থেকেই চোটগ্রস্ত, মুশফিকুর রহিমের পাঁজরের নবম হাড়ে চোট আছে বলে জানা গেছে এবং তামিম ইকবাল বা হাতে চোট পেয়ে বেশ লম্বা সময়ের জন্য মাঠের বাইরে চলে গেছেন।

চোট নিয়েই নিদাহাস ট্রফি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ও এশিয়া কাপ খেলছেন সাকিব। এশিয়া কাপ শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে জানা গেছে মুশফিকের চোটের কথা। কিন্তু প্রতিনিয়ত এমন হচ্ছে যে পুরোপুরি সুস্থ না হলেও সিনিয়র ক্রিকেটাররা খেলে যাচ্ছেন। নাজমুল আবেদীন ফাহিম বাংলাদেশের একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেট কোচ। তিনি বলেন, তামিম ইকবালের ইনজুরিটা আগে থেকে এমন ছিল না। শনিবার চোট পেয়েছে বলে এমন হয়েছে। আর মুশফিক যে খেলতে পারেন সেটা তো প্রমাণই করেছে।


চোট নিয়েও তাদের এই খেলে যাওয়ার কারণে প্রশ্ন উঠেছে : নির্বাচকরা কি তাহলে নতুন ক্রিকেটারদের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না?

ফাহিমের মতে, "আমরা যতটা আশা করেছিলাম নতুন ক্রিকেটারদের নিয়ে সে রকম অংশীদার তারা হতে পারেননি। কখনো কখনো ভালো করেন কেউ কেউ, কিন্তু সেটা দীর্ঘমেয়াদি হয় না। সে কারণেই সিনিয়র ক্রিকেটারদের ওপর আস্থাটা এমন বেশি।"

বাংলাদেশের সাবেক নারী ক্রিকেটার সাথিরা জাকির জেসি বলেন, "একজন সিনিয়র যে সুযোগ পান জুনিয়ররা যদি একটু ভালো পারফর্ম করেন তাহলে কিন্তু তারা সিনিয়রদের চেয়েও বেশি সুযোগ পান। কিন্তু তারা এখন পারফর্ম করছে না। যেমন সৌম্য, সাব্বির, সৈকতরা বেশ সুযোগ পেয়েছেন। সৌম্য-মোসাদ্দেকরা যেভাবে শুরু করেছেন তাদের সেই শুরুটা এখন আর নেই।"

কিন্তু একটা সময় যখন তামিম, মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লার মতো ক্রিকেটাররা থাকবেন না তখন এই ক্রিকেটারদের ভালো করতেই হবে বলে মনে করেন জেসি।

আর সাকিবের বিষয়ে নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, ক্রিকেট বোর্ড সিদ্ধান্ত নেন কোনো প্রতিযোগিতায় তিনি অংশ নেবেন আর কোনটায় অংশ নেবেন না। এশিয়া কাপের মতো টুর্নামেন্টে সাকিব না থাকলে অনেকটা ভারসাম্য হারায় দল। এজন্য এই টুর্নামেন্টের পরে অস্ত্রপচার করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ক্রিকেট প্রশাসন।"

সাথিরা জাকির জেসি বলেন, অনুর্ধ্ব ১৯ থেকে শুরু করে 'এ' দলে অনেক ক্রিকেটার আছে কিন্তু সাকিবের জায়গা নেয়ার মতো ক্রিকেটার আছে কি না সেটা দেখার বিষয়।

"মুশফিক ম্যাচের আগে খানিকটা হয়তো অসুস্থ বোধ করছিলেন। কিন্তু মুশফিক যদি মনে করেন যে তিনি কিপিং ও ব্যাটিং করতে পারেন সেটা তার একান্ত সিদ্ধান্ত," এমন মত ফাহিমের।

নামজুল আবেদীন ফাহিম বলেন, "মুশফিকের মানের ব্যাটসম্যান যখন নিজের ইচ্ছায় কিপিং করেন তখন নির্বাচকদের ওপর চাপ কমে যায়। যদি একজনকে শুধু কিপার হিসেবে নেয়া হয়, এবং সে যদি ব্যাটিং ভালো না করে, তারপরও তাকে দলে রাখতে হয়। তাই মুশফিক কিপিং করলে সিদ্ধান্ত নেয়াটা সহজ হয়।"

সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি সিরিজে রানের জন্যে তামিমের ক্ষুধা ছিল বলে মনে করেন ফাহিম। তিনি বলেন, তামিম ইকবালের অভিজ্ঞতা ও ড্রেসিং রুমে তার প্রভাবটা বাংলাদেশ দল মিস করবে।

তার মতে, বাংলাদেশ অনেক দিন ধরে একজন দ্বিতীয় ওপেনারের খোঁজে আছে। সে ক্ষেত্রে প্রথম চয়েস তামিমের না থাকাটা অবশ্যই ভোগাবে।


আরো সংবাদ



premium cement