২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাকিবকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিসিবি, অস্ট্রেলিয়ার ডাক্তারের শরণাপন্ন

সাকিব
ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে বাঁহাতের কনিষ্ঠায় আঘাত পান সাকিব - সংগৃহীত

সাকিব আল হাসানের বাঁহাতে পুরনো ব্যথা দূর করতে প্রয়োজন অস্ত্রোপচার। যতদ্রুত সম্ভব বাঁহাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে অস্ত্রোপচার করাতে চান সাকিব। গত বৃহস্পতিবার শোনা গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায় হবে সাকিবের অস্ত্রোপচার। এবার সেটির সত্যতায় বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী জানান, ‘সাকিবের অস্ত্রোপচারের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ডাক্তারের পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে।’

এ দিকে যখন ডাক্তার খোঁজা হচ্ছে তখন সাকিব সপরিবারে আজ রাতে হজ করতে যাচ্ছেন। গত বছর সপরিবারে ওমরা পালন করেছিলেন তিনি। এবার হজ পালন করতে রাতে সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা হবেন সাকিব। নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন টেস্ট ও টি-২০ অধিনায়ক।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে সাকিব লিখেন, ‘এই পবিত্র জিলহজ মাসে, একজন অনুগত মুসলিম হিসেবে পরম করুণাময় আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় আল্লাহর ঘরে পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশে যাত্রা করতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আপনাদের সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি যেন সুস্থ ও সুন্দরভাবে পবিত্র হজ পালন করতে পারি। আমার বা আমার পরিবারের কোনো ভুলের জন্য আপনাদের কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমিও আপনাদের সবার মঙ্গল এবং দেশ ও জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করব। সবার জন্য আমার তরফ থেকে ভালোবাসা রইল।’

ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে বাঁহাতের কনিষ্ঠায় আঘাত পান সাকিব। এরপর অস্ট্রেলিয়ার শৈল্যবিদ ডেভিড তাকে পর্যবেক্ষণ করেন এবং তার চিকিৎসাতেই ইনজেকশন দিয়ে প্রদাহ কমিয়ে আসছিলেন সাকিব। প্রদাহ কমাতে ইনজেকশন ব্যবহার করে কয়েক মাস ফ্রিভাবে খেলতে পারলেও সমস্যা থেকে যাচ্ছে সাকিবের। দীর্ঘমেয়াদে এ সমস্যা সারাতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। অস্ত্রোপচার করালে দেড় থেকে দুই মাস রিহ্যাবে থাকতে হবে সাকিবকে। তাই আবার ডেভিড হয়’র শরণাপন্ন হয়েছে বিসিবি।

দলের ফিজিও থিলান চন্দ্রমোহন রয়েছেন মেলবোর্নে। সাকিবের আঙুলের রিপোর্ট নিয়ে ডেভিড হয়’র সাথে দেখা করবেন চন্দ্রমোহন। তার পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে বিসিবি। চোটগ্রস্ত আঙুলে ইনজেকশন ব্যবহার করার পক্ষে নন সাকিব। যত দ্রুত সম্ভব অস্ত্রোপচার করাতে চান। শতভাগ ফিট হয়ে মাঠে নামতে চান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সেটি হতে পারে এশিয়া কাপের আগেই। ওয়ানডে ফরম্যাটে আগামী মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে হবে এশিয়া কাপ। ফর্মে থাকা সাকিবকে না পাওয়া বাংলাদেশের জন্য হবে বড় চ্যালেঞ্জ।

যদি এশিয়া কাপের আগে অস্ত্রোপচার করান তাহলে নিশ্চিতভাবেই এশিয়া কাপ খেলা হবে না তার। এ দিকে এশিয়া কাপের পর সাকিবের অস্ত্রোপচার চাইছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। বোর্ড প্রধান চাইছেন এশিয়া কাপ খেলুক সাকিব। এশিয়া কাপের পর জিম্বাবুয়ে সিরিজ বাংলাদেশের। সেটা মিস করলেও কোনো আপত্তি নেই তার। এ নিয়ে সাকিবের সাথে কথাও হয়েছে বোর্ড কর্তার। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি কেউই।

 

আরো পড়ুন : সন্তুষ্টির আড়ালে টেনশনের নাম সাকিব-অপু

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দীর্ঘ ভ্রমণকান্তি থাকলেও হাসিমুখেই দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারেরা। ক্রিকেটারদের হাসির অর্থ আত্মতৃপ্তি। কারণ সফরটা দারুণ হয়েছে। তিনটি সিরিজের দুটিতেই জিতেছে তারা। তবে এ হাসির আড়ালেও অন্তত দু’জনকে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনে হয়েছে। একজন নাজমুল অপু, অন্যজন সাকিব আল হাসান। অপু শেষ টি-২০ ম্যাচে যে ইনজুরিতে পড়েন তাতে অন্তত ২৫টি সেলাই দিতে হয়েছে। সেলাই নিয়েই ফিরেছেন তিনি ব্যান্ডেজ বাঁধা হাত নিয়ে। আগেই জানানো হয়েছিল ব্যান্ডেজ খুলে পর্যবেক্ষণ করেই অনুমান করা যাবে ক’দিন লাগবে তার ম্যাচে ফিরতে। 

সমস্যা সাকিব আল হাসানকে নিয়েও। দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত গত ২৭ জানুয়ারি তিন জাতি ক্রিকেটের ফাইনালে আঙুলে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাকি সিরিজ ও শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত নিদাহাস ট্রফির শুরুতে খেলতে পারেননি। তাকে পাঠানো হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। সেখান থেকে ফিরে অবশ্য খেলেছিলেন ম্যাচ। কিন্তু ব্যথা পুরোপুরি সারেনি তার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও ব্যথা নিয়েই খেলেছেন। জানা গেছে ব্যথানাশক ইনজেকশন নিয়ে খেলেছেন তিনি সিরিজ। এখন আর অপেক্ষা করতে চান না। আঙুলে অস্ত্রোপচার না হলেই নয়। সাকিব নিজেই এ ব্যাপারে আগ্রহী। কারণ ব্যথা নিয়ে খেলার চেয়ে ব্যথামুক্ত হয়ে খেলা বেশি জরুরি। সাকিব জানান দিয়েছেন এশিয়া কাপের আগে অর্থাৎ সহসাই এটি করিয়ে ফেলতে চান তিনি। এতে করে সাকিবের এশিয়া কাপ খেলা শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেছে। আগামী মাসের ১৫ তারিখে শুরু এশিয়া কাপ। ফলে মাঝে সময় খুবই কম। এর মধ্যে অস্ত্রোপচার করে সেরে ওঠে মাঠে নামা কষ্টকর হয়ে যাবে। 

দেশে ফিরে বিমানবন্দরে সাকিব বলেন, ‘আমরা সবাই জানি যে (আমার আঙুলের ইনজুরি) সার্জারি করতে হবে। আলোচনা হচ্ছে। কোথায় করলে ভালো হবে, কবে করলে ভালো হবে সে আলোচনা চলছে। আমার মনে হয় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করে ফেলাই ভালো। এবং সেটি এশিয়া কাপের আগেই হবে।’ সাকিব তার দ্রুত ইনজুরিমুক্ত হয়ে যাওয়ার পক্ষে। তিনি বলেন, ‘এটা দ্রুতই হয়ে যাওয়া উচিত। আমিও চাই না পুরোপুরি ফিট না হয়ে খেলতে।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রসঙ্গ তুলে সাকিব বলেন, ‘সব মিলিয়ে বলতে গেলে এ সফরটা সফল বলতে হবে। তিনটা ট্রফির মধ্যে আমরা দুটিতে জিতেছি। দেশের বাইরে তো এমন ফল সাধারণত করি না আমরা। ফলে খুবই সন্তুষ্ট এ পারফরম্যান্সে।’ নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই খুশি। হয়তো আরো অবদান রাখতে পারলে আরো ভালো হতো। ওভারঅল যে ধরনের পারফরম্যান্স হয়েছে তাতে আমি খুবই আনন্দিত।’ সাকিব ওয়ানডে সিরিজে রান করেছেন যথাক্রমে ৯৭, ৫৬, ৩৭। এবং টি-২০তে তার রান যথাক্রমে ১৯, ৬০, ২৪। এর আগে টেস্টে তার রান ০, ১২ ও দ্বিতীয় টেস্টে ৩২ ও ৫৪। 

উল্লেখ্য, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সাকিব একটা বিষয় শতভাগ নিশ্চিত করেছেন যে ওয়ান ডাউনে তার বিকল্প নেই। ওয়ানডেতে তিনি চমৎকার করেছেন ওয়ান ডাউনে। স্থানটা এখন থেকে পাকাও হয়ে গেছে তার। (১০ আগস্ট প্রকাশিত সংবাদ)


আরো সংবাদ



premium cement