২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তাপদাহে দুর্বিষহ জীবন

ভ্যাপসা গরমে জনজীবন ওষ্ঠাগত। তীব্র রোদে ভরদুপুরে একটু স্বস্তি পেতে জলাশয়ে মনের আনন্দে গোসল করছে একঝাঁক শিশু। ছবিটি গতকাল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের চানমারি থেকে তোলা  - ছবি : শফিউদ্দিন বিটু 

অসহনীয় তাপদাহে কেটেছে দু’টি দিন। মেঘহীন আকাশে সূর্যের খরতাপ ছিল আরো বেশি অসহনীয়। ভাদ্রের তাল পাকা গরমের তেজ তেমন অনুভূত না হলেও আশি^নের সূর্যের কিরণ অধিকতর ঝাঁজালো। কয়েক দিনের বর্ষণহীন পরিবেশে হঠাৎ তাপমাত্রা চড়তে থাকে উপরের দিকে। গতকাল বুধবার সারা দিনই দেশের বেশির ভাগ স্থান ছিল মৃদু তাপ প্রবাহের আওতায়। সাগরের কাছাকাছি থাকায় যে চট্টগ্রাম বিভাগের অঞ্চলগুলো তুলনামূলক ঠাণ্ডা থাকলেও গতকাল এই চট্টগ্রাম বিভাগের বেশির ভাগ এলাকায় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল। সাগরের কাছাকাছি বরিশাল ও খুলনা বিভাগের তাপমাত্রাও কম ছিল না। এমনকি মধ্যবর্তী অঞ্চল ঢাকা বিভাগের বেশির ভাগ স্থানও ছিল তাপ প্রবাহের কবলে। 

গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ভোলায় ৩৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকা বিভাগের ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ এলাকায় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। চট্টগ্রাম বিভাগের বেশির ভাগ স্থানের তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। খুলনা বিভাগের অবস্থাও একই রকম। 
আবহাওয়া অফিস বলছে, গতকাল ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মাইজদিকোর্ট, ফেনী, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, ভোলা ও পটুয়াখালী অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে এবং তা প্রশমিত হতে পারে।

রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রায় একটি বিশেষ মাত্রা পরিলক্ষিত হয়। রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা লি ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ২৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনি¤œ তাপমাত্রার দিক থেকে গতকাল রাজধানীতে ছিল সবচেয়ে বেশি। সাধারণত সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য কম হলে গরমের মাত্রা বেড়ে যায়। এ ছাড়া রাজধানী সবুজ ও জলাভূমি কম থাকায় এখানে গরমের মাত্রা ছিল অনেক বেশি। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও অনুভূত হয়েছে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। 

গরমের ফলে সৃষ্ট ঘামে দুঃসহ যন্ত্রণায় কাটছে মানুষের জীবন। এর মধ্যে বেড়েছে লোডশেডিংশের মাত্রাও। দিন ও রাতে বেশ কয়েকবার থাকছে না বিদ্যুৎ। সৃষ্টি হচ্ছে পানির সঙ্কট। বিদ্যুৎ সঙ্কট থাকায় পানির মেশিন বন্ধ থাকছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। আবার ওয়াসার পাম্প বিকল্প ব্যবস্থায় সচল থাকলেও অ্যাপার্টমেন্টের রিজার্ভ ট্যাংক থেকে ছাদে রক্ষিত ট্যাংকে পানি তুলতে পারছে না। ফলে খাবার পানি, গোসলের পানি এমনকি বাথরুমেও থাকছে না পানি। 

‘হঠাৎ করে কেন তাপমাত্রা বেড়ে তাপপ্রবাহের কবলে পড়ল দেশের বেশির ভাগ স্থান’ এমন প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ ছিল। গতকাল বুধবার বিকেলের দিকে লঘুচাপটি শক্তিশালী হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। আজ হয়তো তাতে আরেকটু পরিবর্তন হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই লঘুচাপ চলাকালীন দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ীভাবে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। কারণ এ সময় আকাশে মেঘ থাকে না। আবার অনেক সময় মেঘ থাকলেও বৃষ্টি হয় না। ফলে তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে তাপপ্রবাহের সৃষ্টি করে। 

তবে আবহাওয়া অফিস বলছে, চলতি তাপপ্রবাহের এ মাত্রা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। যেসব স্থানে তাপপ্রবাহ চলছিল আজ বৃহস্পতিবারই এসব স্থানের তাপ হ্রাস পেতে পারে। সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরো শক্তিশালী হলে বাতাসের বেগ বেড়ে যেতে পারে এবং একই সাথে কিছুটা বৃষ্টিও হতে পারে। 

তাপপ্রবাহ চলছে না এমন অঞ্চলেও অসহনীয় গরমে কাতর মানুষ। তপ্ত রোদের মধ্যেও মানুষ কাজ চালিয়ে যাওয়ায় অনেকেই হিট স্ট্রোকে রাস্তায় অথবা কর্মক্ষেত্রেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে। গরমে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল অথবা ডাক্তারের চেম্বারে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এ সময় ডায়রিয়ার জন্য দায়ী জীবাণুগুলো নতুন করে সক্রিয় হয়ে থাকে। পানির স্বল্পতাও থাকে। ফলে অনেকেই দূষিত পানি পান করে ডায়রিয়াসহ জণ্ডিস, আমাশয়ের মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মহাখালীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত মানুষ ভর্তি হয়েছে। এদের প্রায় সবাই খেটে খাওয়া মানুষ। পানি ফুটিয়ে পান করার সামর্থ্য এদের কারো নেই।


আরো সংবাদ



premium cement