০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


উচ্চফলনশীল আলু-পাটের নতুন বীজ আসছে কৃষকের হাতে

-

শিগগিরই কৃষকের মাঠে গড়াচ্ছে উচ্চফলনশীল আলু ও পাটের নতুন জাত। বারি আলু-৮১ ও বিজেআরআই তোষা পাট-৮ নামে নতুন এ জাত দু’টি চাষের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড। এর ফলে এখন থেকে কৃষকরা আলু ও পাটের এ দু’টি জাত চাষাবাদ করতে পারবেন। উচ্চফলনশীল ও সাশ্রয়ী এ জাত দু’টি চাষাবাদ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে আরো লাভবান হবেনÑ এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা। কৃষি সচিব মো: নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় বীজ বোর্ডের (এনএসবি) সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে তা অনুমোদন দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ আলুর গাছ মধ্যম উচ্চতাসম্পন্ন এবং চার-ছয়টি কাণ্ডবিশিষ্ট। এটি ৯০-৯৫ দিনে পরিপক্বতা লাভ করে। খাটো ও ডিম্বাকৃতির গাছটির আলুর চামড়া হলুদ ও মসৃণ। শাঁসের রঙ হালকা হলুদ, চোখ মধ্যম গভীর। বারি আলু-৮১ উন্মুক্তের আগে ছয়টি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে চাষে (ট্রায়াল) এ জাতের ফলন প্রতি হেক্টরে ৩৯.৬৬ টন। চেকজাত বারি আলু-৭ ডায়মন্ডের ফলন প্রতি হেক্টরে ২৮.১ টন। মাঠ মূল্যায়ন দল ট্রায়াল করা ছয়টি স্থানের মধ্যে পাঁচটি স্থানে প্রস্তাবিত জাতকে ছাড়করণের পক্ষে এবং একটি স্থানে বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। এর আগে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি থেকে নতুন জাতের ডিইউএস টেস্টও সম্পন্ন করা হয়। নতুন আলুর কৌলিক সারি ‘বারি আলু-৮১’ হিসেবে ছাড়ের জন্য কারিগরি কমিটি সুপারিশ করে। কারিগরি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, জাতটি সারা দেশে চাষাবাদের জন্য ছাড়করণের অনুমোদন দেয় এনএসবি। উদ্ভাবিত নতুন পাটের জাত সম্পর্কে তারা জানান, তোষা পাটের জাতের (ও-৪) জিনের প্রকাশ পরিবর্তন করে ‘বিজেআরআই তোষা পাট-৮’ উদ্ভাবন করা হয়েছে। গাছ লম্বা, গাঢ় মসৃণ ও দ্রুত বর্ধনশীল। জাতটি চলতি মওসুমে ঢাকা, খুলনা ও রংপুরসহ তিনটি অঞ্চলের ১২টি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হয়। ১২টি স্থানে প্রস্তাবিত জাতের গড় পপুলেশন প্রতি হেক্টরে ৩.৯ লাখ, উচ্চতা ৩.১ মিটার, ব্যাসাল ডায়ামিটার ১২.৭৪ মিলিমিটার। চেকজাতের পপুলেশন প্রতি হেক্টরে ৩.৫৮ লাখ, উচ্চতা ২.৭৪ মিটার, ব্যাসাল ডায়ামিটার ১১.১৬ মিলিমিটার। বীজ উৎপাদনের জন্য ১২০-১৪০ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। প্রতি শতক জমিতে নারী বীজ উৎপাদন পদ্ধতিতে তিন-চার কেজি, কাটিং বা ডগা রোপণ পদ্ধতিতে দুই-তিন কেজি এবং চারা রোপণ পদ্ধতিতে দুই-তিন কেজি বীজ উৎপাদন করা যায়। মাঠ মূল্যায়ন দল ট্রায়াল করা ১২টি স্থানের মধ্যে ১২টিতেই জাতটিকে ছাড়করণের পক্ষে সুপারিশ করে। বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি প্রস্তাবিত জাতটির ডিইউএস টেস্ট সম্পাদন করেছে। প্রস্তাবিত জাতের ফলন ভারত থেকে আমদানি করা জেআরো-৫২৪ এর চেয়ে ২০ থেকে ২৪ শতাংশ বেশি।
এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ উইংয়ের মহাপরিচালক ও মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আশ্রাফ উদ্দিন আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, জাতীয় বীজ বোর্ডের অনুমোদন পাওয়ায় এখন থেকে কৃষকরা আলু ও পাটের এ জাত চাষাবাদ করতে পারবেন। এ দুই জাত কৃষককে আরো লাভবান করবে বলে আমরা মনে করি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্রের প্রস্তাবিত জাতটি আন্তর্জাতিক আলু গবেষণা কেন্দ্র (সিআইপি) থেকে সংগৃহীত। ক্লোনের মধ্য থেকে উৎপাদিত সিআইপি-১০ লাইন থেকে জাতটি করা হয়েছে। জাতটি উচ্চফলনশীল, দ্রুত বর্ধনশীল ও ভাইরাস রোগ সহনশীল। প্রস্তাবিত আলুর জাতটি খাবার আলু হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত পাটের জাতটি (বিজেআরআই তোষা পাট-৮) বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত। এটিও দ্রুত বর্ধনশীল ও অধিক ফলনশীল।

 


আরো সংবাদ



premium cement