৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আশুগঞ্জে ২০ দলীয় জোটের তিন শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা 

মৃত ব্যক্তি, হাজতি ও প্রবাসীরাও গায়েবী মামলার আসামী

-

 কোন প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি ও ঘটনা ছাড়াই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থানায় বিএনপি ও জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের তিন শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা রজ্জু করেছে পুলিশ। সরকারী কাজে বাধা প্রদান, হত্যা পরিকল্পনা ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে রজ্জুকৃত এই মামলায় মৃত ব্যক্তি, প্রবাসী ও জেলখানায় আটক হাজতিকেও আসামী করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ মাওলানা শফিউল আলম ফরিদ নামে এক মাদরাসা শিক্ষককে উক্ত মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।

আশুগঞ্জ থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক সুদীপ্ত রেজা জয়ন্তকে বাদী হয়ে রজ্জুকৃত মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর রোববার দুপুর সাড়ে বারটায় বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি ও সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের স্থানীয় সোনারামপুর নামক স্থানে রাস্তা অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলে জোটকর্মীরা পুলিশের উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটায়। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকৃতপক্ষে মামলায় উল্লেখিত তারিখ ও সময়ে আশুগঞ্জে বিএনপি কিংবা ২০ দলীয় জোটের কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিলনা। অধিকন্তু মহাসড়কের পাশ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওইদিন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ এলাকায় কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

মামলায় অভিযুক্ত এক নম্বর আসামী আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ জানান, তিনি মামলায় উল্লেখিত তারিখ ও সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় ছিলেন। এদিন আশুগঞ্জে বিএনপি কিংবা ২০ দলীয় জোটের কোন কর্মসূচি ছিলনা। তিনি বলেন, সরকার বিরোধী দলের কন্ঠরোধ করতে সারাদেশেই এধরনের গায়েবী মামলা করছে। একই ধারাবাহিকতায় সরকারের অপতৎপরতা চরিতার্থ করার হীন উদ্দেশ্যে এই সাজানো, মিথ্যা ও বানোয়াট মামলাটি রজ্জু করা হয়েছে।

এদিকে উক্ত মামলায় অনেক অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে-যা সাধারণ মানুষের মাঝেও হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। মামলায় ২ নম্বর আসামী হিসেবে উপজেলার খড়িয়ালা গ্রামের মৃত মৌলুভী হাসান আলীর ছেলে কাইয়ুম চৌধুরীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ তিনি গত ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট ইন্তেকাল করেছেন। মৃত কাইয়ুম মিয়ার স্ত্রী দিলরুবা বেগম বলেন, তিন বছর আগে মৃত আমার স্বামীর নাম আসামীর তালিকায় দেয়া অত্যন্ত দুঃখজনক, এতে আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা মর্মাহত হয়েছি। ১১ নম্বর আসামী চরলালপুর গ্রামের মলাই মিয়ার ছেলে আলীম গত এক বছর যাবত সৌদি আরবে অবস্থান করছেন বলে আলীমের পিতা মলাই মিয়া দাবী করেন। মামলার ১৫ নম্বর আসামী চরচারতলা গ্রামের মৃত কাদির মিয়ার ছেলে রুহুল আমিন অন্য একটি মামলায় তিন মাস যাবত জেল হাজতে রয়েছেন। মামলার ৪৭ নম্বর আসামী মৃত আব্দুল কাদির মাস্টারের ছেলে এনামুল হক মামলায় উল্লেখিত ঘটনার তারিখ ও সময়ে আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মস্থলে ডিউটিরত অবস্থায় ছিলেন বলে কোম্পানী সূত্র নিশ্চিৎ করেছে। মামলার ঘটনার তারিখ ও সময়ে ৫৪ নম্বর আসামী উপজেলার লালপুরের হাফিজুর রহমান বাবুলের পিতা ইন্তেকাল করায় তিনি বাবার লাশ দাফন কাফন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এছাড়া এজাহারে নাম না থাকলেও গ্রেফতার হওয়া মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা শফিউল আলম ফরিদ ঘটনার তারিখ ও সময়ে আড়াউসিধা কামিল মাদরাসায় কর্মস্থলে কর্মরত ছিলেন বলে মাদরাসার উপাধ্যক্ষ জানান। গ্রেফতারকৃত মাদরাসা শিক্ষক জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে পুলিশ জানায়।

এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম সাচ্চু বলেন, মামলায় উল্লেখিত ঘটনার দিন ও সময়ে আশুগঞ্জে কোন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ছিলনা । মহাসড়ক অবরোধের মতো কোন কর্মসূচি থাকলে স্থানীয় ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা অবশ্যই জানতেন।

এব্যাপারে মামলার বাদী উপ পুলিশ পরিদর্শক সুদীপ্ত রেজা জয়ন্ত কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। তবে আশুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বদরুল আলম তালুকদার বলেন, কোন ঘটনা ছাড়াতো আর মামলা হয়নি। আসামীদের নামের ব্যাপারে কোন অসঙ্গতি থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement