ছেঁড়া কাঁথা দিয়েই শীত কাটল বৃদ্ধা শহর বানুর
- ভালুকা (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা
- ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
যুদ্ধের সময় আমার স্বামীরে মাইরা ফালাইছে। তার পর থাইক্যা মাইনসের বাড়ি কাম কইরা দুই মাইয়ারে বড় কইরা বিয়া দিছি। তারাও ভালাবা ছলতে ফারেনা। বড় মাইয়ার জামাই মল্লিকবাড়ি বাজারে চার শ’ টাকায় দুইডা রুম নিছে, সারাদিন ভিক্কা কইরা রাইতে একটাই আমি ঘুমাই। এই শীতে ছিড়া একটা খেতাদিয়া রাইত কাটাইছি। কেউ একডা কম্বলও দেয়নি। কথাগুলো বলেছেন, ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ি বাজারে অবস্থিত স্থানীয় শামছুদ্দিন ডাক্তারের ভাড়াটিয়া বিধবা শহর বানু (৭০)।
তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন, তার স্বামী আবদুল করিমের সামান্য সহায় সম্পত্তি ছিল। সংগ্রামের সময় মাঠে গরু চরাতে গেলে কে বা কারা তার স্বামীকে গুলি করে রক্তাক্ত আহত অবস্থায় ফেলে যায়। খোঁজ পেয়ে স্থানীয়রা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে বাড়িতে আনে। চার কাঠা জমি ছিল, তা বিক্রি করে স্বামীর চিকিৎসা করলেও তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। দুই কন্যাসন্তান জরিনা ও মালেকাকে নিয়ে তিনি নামেন জীবন যুদ্ধে। পরের বাড়ি কাজ করে ওদেরকে বড় করে বিয়ে দেন। কিন্তু তারাও তেমন সচ্ছল নয়। বড় মেয়ে জামাতা আইজুল হক রিকশা চালায়। তাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে মল্লিকবাড়ি বাজারে ডাক্তার শামছুদ্দিনের বাড়িতে দু’টি রুম ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। একটিতে শহর বানুও থাকেন। আর ছোট মেয়ের জামাতা কাইয়ুম থাকেন ঢাকার সাভারে। চায়ের দোকান দিয়ে তারাও এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে কোনোমতে জীবন নির্বাহ করেন।
শহর বানু আপসোস করে বলেন, সরকারি কোনো কার্ড তার কপালে জোটেনি। বিধবা বা বয়স্ক ভাতার একটি কার্ড পেলেও কোনোমতে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারতাম। অসুস্থ শরীর নিয়ে ৭০ বছর বয়সেও ১০ বাড়ি ঘুরে সাহায্য চেয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে। এই শীতে একটি মাত্র ছেঁড়া কাঁথা মুড়ো রাত কাটাতে হয়েছে। তিনি বলেন, শুনেছি ভালুকা শহরে অনেকেই গরিবদের কম্বল দেন কিন্তু আমি একটা কম্বলও পাইনি। তিনি সরকারের কাছে জীবনের এই শেষ সময়ে বেঁচে থাকার জন্য সাহায্য কামনা করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা