২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল দক্ষিণের জনপদ। মারা যায় চার হাজারের বেশি মানুষ। অগণিত গবাদিপশুর মৃত্যু হয়। বাড়িঘর, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, বেড়িবাঁধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সুন্দরবনের গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয় সিডরে। সিডরের এক যুগ পূর্ণ হয়েছে। আজো স্বজন হারানোদের কান্না থামেনি। ১১ বছরে বরগুনা, পাথরঘাটা, বেতাগী, বামনা, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় বেশ কয়েকটি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বেশ কিছু বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কার করা হলেও এখনো অনেক বাঁধ সংস্কারহীন অবস্থায় রয়েছে। নতুন করে অনেক বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। প্রকৃতির সাথে প্রতিদিন যাদের যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে তাদের জন্য বিকল্প কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এখনো করা হয়নি।
উপকূলীয় জেলা বরগুনায় ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। জেলার ৯৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, মহাসেন, ফণীসহ একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে বাঁধ এখনো সম্পূর্ণ মেরামত হয়নি। এ জন্য বিলীন হয়ে গেছে বহু বসতবাড়ি, গাছপালা এবং কয়েক শ’ একর ফসলি জমি। আতঙ্কে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এলাকার লক্ষাধিক বাসিন্দা।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বরগুনায় ২২টি পোল্ডারে প্রায় ৯৫০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ৩৭ কিলোমিটার বাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি বাঁধও মেরামত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
সিডরের ক্ষত চিহ্ন আজো বয়ে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা। সিডরের দুই দিন আগে ঘটখালী ও বৈঠাকাটা গ্রামে থেকে ১৪ জন দিনমজুর পানের বরজের জন্য ধানশিলতা সংগ্রহে ট্রলার নিয়ে সুন্দরবন এলাকার দুবলারচরে যান। সিডরের ভয়াল রাতে তারা ট্রলারসহ ভেসে যান পায়রা নদীর মোহনা সংলগ্ন টেংরাগিরি বনের কাছে। এদের মধ্যে চারজন জীবিত ফিরে এলেও ১০ জন আজো ফিরে আসেনি। অসহায় সে পরিবারগুলো এখনো মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।
গুলিশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নের আঙ্গুলকাটা থেকে কলাগাছিয়া পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের মধ্যে বেড়িবাঁধের বাইরে কোনো সাইক্লোন শেল্টার না থাকায় বন্যা বা সাইক্লোন এলে এলাকার জনসাধারণ চরম ঝুঁকিতে থাকে।
জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা চৌধুরী বলেন, এ এলাকার জেলেরা সাগরে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকেন। সিডরের এত বড় আঘাতের পরেও তাদের মাঝে এতটুকু সচেতনতা ফিরে আসেনি। তিনি আরো বলেন, বর্তমান মৌসুমে যত জেলে শুঁটকিপল্লী আশারচর এলাকায় অবস্থান করছেন হঠাৎ কোনো সাইক্লোন বা ঝড় এলে তখন তাদের আশ্রয় নেয়ার জন্য কোনো আশ্রয়কেন্দ্র সেখানে নেই। তাই জেলেদের নিরাপত্তার জন্য এখানে একটি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কাওসার আলম বলেন, জেলার ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো দ্রুত সংস্কার, নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও অসমাপ্ত কাজগুলো চলতি অর্থবছরে সমাপ্ত করা হবে।