২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুন্সীগঞ্জে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন

মুন্সীগঞ্জে পদ্মার শাখা নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের দৃশ্য হনয়া দিগন্ত -

সীমানা জটিলতা কাজে লাগিয়ে এবং প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় রাতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার শিলই ইউপি চেয়ারম্যানের ছোটভাই স্থানীয় ভূমিদস্যু ইসমাইল বেপারি।
গত মঙ্গলবার দুপুরে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দীঘিরপাড় এলাকায় পদ্মার শাখা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় ভূমিদস্যু ইসমাইল মেম্বারের তিন শ্রমিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও একটি ড্রেজার জব্দ করে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)।
এর পর থেকে সুচতুর ভূমিদস্যু ইসমাইল মেম্বার জব্দকৃত ড্রেজার দিয়ে গত মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে গত বুধবার সকাল পর্যন্ত ওই স্থানে ড্রেজার বসিয়ে পদ্মার শাখা নদী থেকে অবৈধভাবে আবার বালু উত্তোলন করেন বলে জানান স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক এক স্থানীয় জানান, ওই স্থানে দীর্ঘদিন ড্রেজার বসিয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার শিলই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ছোটভাই সাবেক ইউপি সদস্য ইসমাইল বেপারি পদ্মার শাখা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে চলছে। পদ্মার শাখা নদীর পাশে রজতরেখা নদীর উৎপত্তিস্থলে পকেট তৈরি করে বালু জমা রেখে উক্ত বালু বস্তাবন্দী করে বিক্রি করছেন এ ভূমিদস্যু। এ ছাড়াও রজতরেখা নদী দখল করে দোকান নির্মাণ করেছেন। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এবং প্রশাসনকে আয়ত্তে নিয়েই এ ব্যবসা পরিচালনা করায় মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না অনেকেই।
ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় একটি ড্রেজার জব্দ করলে স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। তবে বুধবার সকালে তার জব্দকৃত ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করতে দেখা যায় এতে স্থানীয়রা হতাশা প্রকাশ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ব্যক্তি জানান, প্রতিদিন ভোরে শুরু হয় বালু উত্তোলনের মহাউৎসব। উত্তোলিত বালু ট্রলারের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সদর উপজেলার পূর্বরাখি গ্রাম ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দীঘিরপাড় এলাকার নদী পাড়ের জনবসতি ও ফসলি জমি। বর্ষা মওসুম হওয়াও নদীর পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি দৃশ্যমান না হলেও, পানি কমলে এর খেসারত দুইপাড়ের মানুষকে দিতে হবে।
নাম প্রকাশে না করার শর্তে আরেক ব্যক্তি জানান, প্রতি বর্ষা মওসুমে ইসমাইল বেপারি মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রজতরেখা নদীর উৎপত্তিস্থলে পকেট তৈরি করেন। নদী থেকে বালু উত্তোলন করে সেখানে জমিয়ে বালু বিক্রি করেন বছরজুড়ে। এতে রজত রেখা নদীটি নাব্যতা হারিয়েছে। শুধু নদী থেকেই বালু উত্তোলন করেন এমন নয়। সে রাতে এবং খুব ভোরে ফসলি জমির মাটিও লুটে নিচ্ছেন। তার ইশারায় জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছেন একটি চক্র। প্রতি ট্রলারের জন্য ইসমাইল পাচ্ছেন ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা।
বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন শিলই ইউনিয়নের পূর্বরাখি এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য ইসমাইল বেপারি। তিনি বলেন, টঙ্গিবাড়ী থেকে পুলিশ এসে আমার ড্রেজার পাইপ ভেঙে দিয়ে গেছে পরে আমি আর কোনো মাটি কাটিনি।
অন্য দিকে দীঘিরপাড় তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ বালু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেন বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, পুলিশের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকায়, ভ্রাম্যমাণ আদালতের পরেও ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে ইসমাইল ও তার অনুসারীরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত আসার আগেই পুলিশের দেওয়া তথ্যের কারণে সটকে যাচ্ছে মূল দোষীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন দীঘিরপার তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, স্থানীয়রা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলেছেন। তার এলাকায় বালু উত্তোলন হয় না। তাই আর্থিক লেনদেনের সাথে সে জড়িত নয়। বালু উত্তোলন হয় সদর উপজেলায়।
আপনার এলাকায় না হলে, শুধু সদর উপজেলা থেকে বালু উত্তোলন হলে, টঙ্গিবাড়ী উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা কেন অভিযান পরিচালনা করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সদুত্তর দিতে পারেনি পুলিশের এই কর্মকর্তা।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উছেন মে জানান, অভিযান চালিয়ে ইসমাইল মেম্বারের একটি ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে। অন্য কোনো ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ওই স্থানটির কিছু অংশ সদর উপজেলার পূর্বরাখি মৌজায় হওয়ায় আমরা জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারছি না। এ বিষয়ে সদর উপজেলা প্রশাসন হস্তক্ষেপ করলে ভালো হয়।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, বছরখানেক আগে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযান পরিচালনা করেছি। এতে ড্রেজার ও বিপুল পরিমাণ পাইপ জব্দ করে বিনষ্ট করা হয়। এতে কিছু দিন বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। শুনেছি সেখানে আবারো অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আমরা সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলমান রাখব।
তিনি আরো জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী মহল বালু উত্তোলন করায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগে এই চক্রটি খবর পেয়ে সটকে যায় এতে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।


আরো সংবাদ



premium cement