রানীনগরের সাদেকুলকে শিকলমুক্ত করা হলো

বাড়ির বাইরে, উঠানের একপাশে গরু রাখার দুটি করে একটিতে রাখা হতো সাদেকুলকে। গ্রিলের দরজায় তালা দিয়ে বন্ধ করে রাখা থাকত। রাতদিন সবসময় ওই ঘরের মধ্যে সাদেকুলের জীবন যাপন। খাবার দেয়া হতো গ্রিলের ফাঁক দিয়ে। মাঝেমধ্যে তার বড় ভাই বের করতেন গোসলের জন্য।
ছাট্ট ঘরের মধ্যে বসে সাদেকুল নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত বাইরের দিকে। গ্রামের সবাইকেই চিনতে পারত তাই সামনের রাস্তা দিয়ে কেউ গেলেই কথা বলত। বাইরে যাওয়ার জন্য তালা খুলে দেয়ার অনুরোধ করত। এই অবস্থায় ধীরে ধীরে সাদেকুলের মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যেতে বসেছে।
অমানবিক এই দৃশ্য গ্রামবাসী দেখে আসছে প্রায় ৩ বছর ধরে। এই অবস্থার অবসান ঘটল গত বুধবার। দুপুরে রানীনগর থানার ওসি মো: জহুরুল ইসলাম ও সমাজসেবা কর্মকর্তা রেজোয়ানুল হক সাদেকুলকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেন। এর আগে যুবক সাদেকুলের বন্দিদশা নিয়ে বুধবার ছবিসহ প্রতিবেদন অনলাইন নয়া দিগন্তে সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় সাদেকুলকে উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া হয়।
সাদেকুলের মুক্তির পর গ্রামবাসী ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, মানবাধিকার কর্মীরা নয়া দিগন্তের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
উদ্ধারের সময় সমাজসেবা কর্মকর্তা রেজোয়ানুল হক বলেন, পাগল বা মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও কোনো মানুষকে এভাবে বন্দী করে রাখা অনুচিত। আইনত অপরাধ। ওসি জহুরুল হকের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ঘটনাস্থল থেকে সাদেকুলকে উদ্ধার করে নওগাঁ মেডিক্যাল কলেজে নিলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, সাদেকুল দীর্ঘদিন ধরে ফিজোফ্রেনিয়া রোগে ভোগছেন। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
রানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো: জহুরুল হক বলেন, বিশ্বস্ত খবরে জানতে পারি ভবানীপুর গ্রামের সাদেকুলকে তথাকথিত পাগল বানিয়ে তার স্বজনরা প্রায় তিন বছর ধরে একটি ঘরে আটক রেখেছে। এমন বিষয় শুনে সমাজসেবা অফিসারকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সাদেকুল ইসলামকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারের পর সাদেকুলকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সে ফিজোফ্রেনিয়া রোগে ভোগছে, নওগাঁ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের মানসিক বিভাগে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন। সাদেকুলের চিকিৎসা ব্যয়ের দায়িত্ব উপজেলা সমাজসেবা অফিস নিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলার ভবানীপুর মোবারকপাড়া গ্রামে সাদেকুল ইসলামকে তিন বছর ধরে কখনো শিকলবন্দী আবার কখনো গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। পাগলামি করে মানুষের ক্ষতি করছে এমন অজুহাতে তাকে গৃহবন্দী করে রাখার অভিযোগ ভাই শেরেকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।