২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুনামগঞ্জে নৌপথে চাঁদাবাজি : মাঝিদের আর্তনাদ শোনার কেউ নেই

-

সংবাদ প্রকাশের পরও থামছে না সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় নদীপথে চাঁদাবাজী। তাহিরপুরের বাদাঘাট ইউনিয়নের জাদুকাটা নদীর তীরবর্তী ফাজিলপুর এলাকার আনোয়ারপুর ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার নদীপথে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি এখন প্রতিযোগিতামূলক পর্যায়ে পৌঁছেছে। চাঁদাবাজ চক্র প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সরকারের নির্ধারিত টোলের চেয়ে অনেক বেশি টাকা আদায় করলেও দেখার যেন কেউ নেই।
এই নদীপথে চলাচলকারী ভলগেট নৌকার মালিক ও মাঝিরা রীতিমতো চাঁদাবাজ চক্রের অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। জানা যায়, একটি চাঁদাবাজ চক্র এই নদীতে প্রতিটি ভলগেট (নৌকা) থেকে সরকার নির্ধারিত ২৫০-৩০০ টাকা টোল আদায়ের পরিবর্তে চাঁদাবাজরা আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা করে আদায় করছে। তাদের চাহিদা মতো টাকা না দিলে বালু ও পাথর বোঝাই নৌকা আটকিয়ে রাখা, মাঝিদের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা নিত্যকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ছোট-বড় দুই থেকে তিন শতাধিক নৌকা বালু ও পাথর বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করে থাকে। বাংলা সনের চৈত্র মাসের শেষের দিকে প্রশাসন থেকে ৪৮ লাখ টাকায় ফাজিলুপুর ঘাটটি এক বছরের জন্য ইজারা নেন ফাজিলুপুর গ্রামের মুর্তুজ আলীর ছেলে কাশেম মিয়া ও ফয়সল মিয়া।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই ঘাটে সরকার নির্ধারিত টোল আদায়ে প্রতি বলগেট থেকে ২৫০-৩০০ টাকার মধ্যে টোল আদায়ের শর্ত থাকলেও ফাজিলুপুর হতে আনোয়ারপুর পর্যন্ত এই এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ইজারাদার কাশেম মিয়া, তার সহোদর ফয়সল আহমেদ, বালিজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণকূল গ্রামের চাঁদাবাজ বাবুল মিয়া ও দক্ষিণকূল গ্রামের নবার মিয়ার ছেলে সারোয়ার মিয়া ও তার সহোদর জাকারিন মিয়া গংরা বিআইডব্লিউটিএর নাম ভাঙিয়ে সরকারের নির্দেশ অমান্য করে বেপোরোয়া চাঁদাবাজি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অপর দিকে উপজেলার বিন্নাকুলি দুর্লভপুর এলাকার রক্তিনদী থেকে টোল আদায়ের নামে বাক্কির নেতৃত্বে চলছে বলগেট নৌকায় ব্যাপক চাঁদাবাজি। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও তদারকি না থাকায় এই টোল আাদয়ের নামে প্রতিদিন চক্রটি হতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রায় সময়ই টোল আদায়ের নামে নৌকার মাঝিদের নৌকা কিংবা বলগেট আটকিয়ে তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটছে। অপর দিকে তাহিরপুরের জাদুকাটা নদীতে ছড়া পাঠানপাড়া এলাকায় বাদাঘাট ইউনিয়নের ছড়াগ্রামের খোকন মিয়ার নেতৃত্বে চলছে চাঁদাবাজি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ভলগেট মাঝি জানান, নৌকায় বালু বোঝাই করে কুমিল্লার দাউদকান্দি যাওয়ার সময় রয়েলটি ঘাটে আসামাত্র ফাজিলপুরের ইজারাদার কাশেম মিয়ার লোকজন তার ভলগেট আটকিয়ে তিন হাজার টাকা টোল দাবি করেন। কিন্তু মাঝি ৮০ টাকার পরিবর্তে এত টাকা চাঁদা দিতে অপারগতা জানালে কাশেম মিয়ার নেতৃত্বে ১০-১২ জন তাকে তিন হাজার টাকা দিতে চাপ দেয়। তা না হলে নৌকা আটক রেখে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার হুমকি দেয়। তারা প্রাণের ভয়ে এক হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে কোনোমতে মুক্তি পান বলে জানান।
এ ব্যাপারে ইজারাদারের মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে তার ছোট ভাই ফয়সল আহমদের সাথে মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় জেনে লাইনটি কেটে দেয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ ইনতেয়াজের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রতিটি ভলগেট নৌকা থেকে ২৫০-৩০০ টাকা টোল আদায়ের নির্দেশ দেয়া আছে। তবে যারা অতিরিক্ত টোল আদায় করছেন তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement